ইতিহাস সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষ, নাম হয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের: ডা. জাফরুল্লাহ
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রত্যেকের নাম ইতিহাসে আসা উচিত। আমাদের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো- যারা জীবন দিয়েছেন তাদেরকে স্মরণ করি না। আমরা এক ব্যক্তির সম্পূর্ণ দেশে পরিণত করেছি। আমাদের সৈনিকরা জীবন দেন দেশরক্ষার জন্য, নাম হয় সেনা প্রধানের। ইতিহাস সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষ আর নাম হয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের। সেই কারণেই আজকে দেশে এই অবস্থা।’
মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও সংগঠনের উদ্যোগে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ও আমাদের জাতীয় স্বার্থ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে তিন জায়গায়। একটা ভারতের মাটি থেকে। যেখানে আমরা অনেকেই ছিলাম। সেটা অনেকক্ষেত্রে নিরাপদ ছিলো। দ্বিতীয়ত ভারতের মাটি থেকে এসে যুদ্ধ করে আবার ফিরে গেছে। তৃতীয় যুদ্ধটা হয়েছে দেশের অভ্যন্তরে। যেটা সিরাজ শিকদার, আবদুল মান্নান ভুঁইয়ারা, জুনুরা, কাদের সিদ্দিকীরা করেছেন।’
দেশের ভিতরের মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকীরা দেশের অভ্যন্তরে থেকে যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু আজকে সেই সিরাজ শিকাদার যার অবদান অনিস্বীকার্য যিনি দেশকে স্বাধীনভাবে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য চেষ্টা করেছেন তাকে এই দেশের মাটিতে সরকারের হাতেই মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে, তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।’
মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারীদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মাটিতে মারা গেছেন ২ লাখ ৬৯ হাজার। এটা কিন্তু বিএনপির হিসাব না। এই হিসাবটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমলের। বঙ্গবন্ধুর পিএস ছিলেন ড. এম এ সাত্তার। একবার তিনি প্রশ্ন করলেন- বঙ্গবন্ধু আপনি যে ৩০ লাখের কথা বলছেন সেটার হিসাব কিভাবে। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছেন- ‘কেনো? এটা তো তোরাই কইসোস, আমি তো দেশেই ছিলাম না। আমি তো তোদের কথায় বলেছি।’ তখন এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এরপর তিনি একটা সুরাহায় আসার ব্যবস্থা করলেন। প্রথমবার যে হিসাবটা করলেন, সেটা ছিলো মাত্র ৬৭ হাজার। কোনো সন্দেহ নেই এতে ভুল আছে। এর পরে যে হিসাবটা হলো- ইউনিয়ন ভিত্তিক ২ লাখ ৬৯ হাজার। বঙ্গবন্ধু যেটা দেখলেন কোথায় ৩০ লাখ আর কোথায় ২ লাখ ৬৯ হাজার। এই হিসাবটার বিষয়ে জানার জন্য এখনো বেঁচে আছেন মোহাম্মদ আলী সিএসপি। তিনি ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। একটা জাতির ৩০ লাখ হোক আর তিন লাখই হোক প্রত্যেকের নাম ইতিহাসে আসা উচিত।’’
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে লন্ডনে থেকে বিচারপতি আবু সাইয়িদ চৌধুরী, ফজলে হোসেন আবেদের অবদানের কথাও বলেন ডা. জাফরুল্লাহ।
দেশের অধিকাংশ লোক করোনাভাইরাসের টিকা পাবেনা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে পর্যাপ্ত করোনা টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে মূল বাধা ভারত। এই টিকা খুব কঠিন কিছু না। কিন্তু এটার মূল বাধা ভারত। অক্সফোর্ডের সঙ্গে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের একটা চুক্তি রয়েছে যে- অক্সফোর্ড এই ফর্মূলা এশিয়া অঞ্চলের কাউকে দিতে পারবে না। ভারত বন্ধুর আদলে মহাজনি প্রথা চালু রাখছে এখনও।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ তারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য সহোযোগিতা করেছে। কিন্তু তারা দয়া করে নাই, তারা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করেছে। আমাদের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে।’
সংগঠনের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।