খুলনার কপিলমুনিতে সুদখোর মহাজন থেকে রক্ষা পেতে অসহায় নারীর সংবাদ সম্মেলন

পাইকগাছা প্রতিনিধিঃ খুলনার পাইকগাছায় কপিলমুনি এক পেশাদার সুদখোরের সুদের টাকার চাপ ও জীবন নাশের হুমকিতে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে এক অসহায় মহিলা। স্বামী ও পরিবারের নিরাপত্তার আকুতি জানিয়েছেন তিনি। আকুতি জানিয়েছেন মোটা অংকের সুদের টাকার হাত থেকে পরিত্রাণের জন্য।
বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারী ) বেলা ১১ টায় কপিলমুনিতে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে শ্রীরামপুর গ্রামের মীর আকরাম আলীর স্ত্রী মমতাজ বেগম এমন আর্জি জানান।
আরও পড়ুন>>>ত্রিশালে ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছে শিশু শিক্ষার্থীরা
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তার স্বামী আকরাম হোসেন কপিলমুনি বাজারের একজন চাউল ব্যাবসায়ী ছিল। ব্যবসায়ীক কারণে প্রায় আড়াই বছর পূর্বে একই গ্রামের প্রতিবেশী মৃতঃ মোকন হাজরার ছেলে সেলিম হাজরার কাছে ৫০ হাজার টাকা ধার চাইলে শর্ত সাপেক্ষে আমার স্বামীকে ৫০ হাজার টাকা দেয় সেলিম।
শর্তানুযায়ী এই টাকার বিনিময়ে দেড় লক্ষ টাকার একটি তারিখ বিহীন একটি চেক এবং প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা হারে সুদ দিতে থাকে। প্রায় ১ বছরের অধিক নিয়মিত মাসিক সুদ দেয়া হয়। কিন্তু তার ব্যবসায় অব্যাহত লোকসান ও করোনাকালীন লক ডাউনের কারণে ব্যবসায়ীকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন>>>যশোর অভয়নগরে সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে ঘুরছেন বিসিএস নারী কর্মকর্তা
এরপর বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংকের ঋনের টাকার জন্য মামলার উপক্রম হলে আমাদের শেষ সম্বল বসত বাড়িটি বিক্রি করে এসব প্রতিষ্ঠানের টাকা পরিশোধ করেন স্বামী আকরাম। বর্তমানে বাস্তহারা হয়ে ৩ সন্তান নিয়ে শ্রীরামপুর গ্রামে আমার দিনমজুর পিতার গোয়াল ঘরে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর দিন যাপন করছি।
এদিকে কয়েক মাস সুদের টাকা দিতে ব্যার্থ হওয়ায় সমুদয় সুদের টাকার জন্য আমার স্বামীকে ভয় ও চাপ দিয়ে দ্বিতীয় দফায় ৫০ হাজার টাকার আরোও একটি চেক গ্রহণ করে সেলিম। যার নং B7668040, কপিলমুনি (ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিঃ)।
আরও পড়ুন>>>যশোরের বেনাপোলে ১৫৫ পিচ ইয়াবা সহ যুবক গ্রেফতার
চেকটি গ্রহণের দু-একদিন পরেই সুদসহ সব টাকার চাপ দিতে থাকে সে। আগামী মার্চ মাসে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য অনুনয় বিনয় করি। কিন্তু হঠাৎ গত ২১ ফেব্রুয়ারী ফজরের আজানের পর পরই আমার পিতার বাড়িতে প্রবেশ করে অশ্রাব্য ভাষায় গালি গলাজ সহ ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে বলে সেলিম।
এ সময় ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে একটু বিলম্ব হওয়ায় সেলিম অগ্নিমূর্তি ধারণ করে দরজায় সজোরে লাথি মেরে টিনের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে আমি, আমার বৃদ্ধ পিতা ও ভাই তাকে নিবৃত্ত করি। ওই সময় সেলিম হাজরা বলে আমি বর্তমান এমপির ডান হাত এবং হরিঢালী ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা। আজ দিনের মধ্যে সুদসহ সমুদয় টাকা না দিলে আমার স্বামীকে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়।
আরও পড়ুন>>>নড়াইলের রূপগঞ্জে অগ্নিকান্ডে ৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি
এই ঘটনার পর জীবনের নিরাপত্তার জন্য পাইকগাছা থানায় একটি জিডি করি। যার নাং ১১৩৮, তারিখ ২১/০২/২১ ইং। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও জানান, সেলিম শুধু একজন ভয়ংকর ব্যাক্তি ও মাদকসেবি নয়, সে একজন পেশাদার সুদখোর। তার বিরুদ্ধে পাইকগাছা থানায় হাফডজন জিডি ও একাধিক মামলা রয়েছে।
২০০৪ সালে পুঠিমারি একটি মৎস্য ঘেরের দখলের ঘটনায় দুটি বন্দুক সহ পুলিশ তাকে আটক করে। ওই সময় বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে যুবদলের নেতা হিসাবে প্রভাব খাটিয়ে সে ছাড়া পায়। এছাড়াও বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে তার নানা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। এহেন ব্যাক্তির হাত থেকে স্বামী ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন মমতাজ বেগম।