গণধর্ষণের মামলা তুলে না নেওয়ায় ধর্ষণের শিকার নারীর ভাইকে অপহরণের পর নির্যাতন
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: শ্যামনগরে গণধর্ষণের মামলা তুলে না নেওয়ায় ধর্ষণের শিকার এক নারীর ভাইকে অপহরণের পর নির্যাতন করে হাত-পা বেঁধে বস্তাবন্দি করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রেখে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার সোয়ালিয়া ব্রিজ এলাকা থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই যুবককে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে অবস্থার অবনতি হলে আজ বুধবার সকালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত ওই যুবকের বোন (ধর্ষণের নারী) জানান, সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলা (না. শি. ৪৯/১৮) তুলে নেওয়ার জন্য আসামি ও তাদের স্বজনরা তার ভাইসহ পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিল। এরই জেরে মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে তার ভাই বাড়ি থেকে অসুস্থ মায়ের জন্য ওষুধ কিনতে শ্যামনগর উপশহরে যাওয়ার সময় তাকে অপহরণ করা হয়।
মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সোয়ালিয়া ব্রিজের পাশ থেকে দুই হাত ও দুই পা বাঁধা বস্তাবন্দি মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, মামলায় নিশ্চিত শাস্তি হবে বুঝতে পেরে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে তার ভাইকে নির্যাতন করে হত্যার চেষ্টা করেছে।
শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জুবায়ের জানান, ওই যুবকের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এছাড়া শরীরে বিষাক্ত কোনো তরল পুশ করা হয়েছে। তাকে জরুরিভিত্তিতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা জানান, এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত থানায় কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের সুকুমার মণ্ডল ও দেবীপুর গ্রামের মাদরাসাশিক্ষক গোলাম রসুল ওই নারীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ফুলবাড়ি গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিকের মাছের ঘেরের ঘরে নিয়ে যায়। ওই দিন তারা বহু প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাওলানা ডেকে ছিদ্দিকের সঙ্গে ওই নারীর কাল্পনিক বিয়ে দেয়। এরপর তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে কিছুদিন কাটানোর একপর্যায়ে ওই বছরের ১১ জুন সকালে খুলনায় একটি বাড়িতে আটকে রেখে পাঁচদিন ধরে ছিদ্দিক, গোলাম রসুল ও সুকুমার তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
এই অভিযোগ থানায় মামলা হিসেবে রেকর্ড না করায় ওই বছরের ২৬ জুলাই ওই নারী সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে উল্লিখিত তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে আসামিরা বিভিন্ন সময় মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাদীকে হুমকি দিয়ে আসছিল বলে অভিযোগ করা হয়। ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর এ মামলার রায়ের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিচারক বদলি হওয়ায় রায় ঘোষণার দিন পরিবর্তন হয়।