ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ সফর!
ডেস্ক রিপোর্ট : পরিকল্পনা কমিশন তীব্র সমালোচনা উপেক্ষা করেই চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ‘ঘাস চাষ সম্প্রসারণ’ প্রকল্প একনেক টেবিলে তুলতে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় বলছে প্রকল্পটি নিয়ে অযৌক্তিক সমালোচনা হচ্ছে। তাদের দাবি, মানসম্মত পুষ্টি ও দুধের উৎপাদন বাড়াতে গবাদিপশুর ঘাস চাষের আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।
জানা গেছে, পুষ্টিকর ঘাস চাষ শিখতে বিদেশ পাঠানো হচ্ছে প্রাণিসম্পদের ৩২ কর্মকর্তাকে, এমন খবরে আবারও আলোচনায় পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্প প্রস্তাবনায় দেখা যায়, ১শ ১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা মোট ব্যয়ের প্রকল্পে, বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণ খাতে ৩২ কর্মকর্তার পেছনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। এমন প্রস্তাবনা নিয়েই মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে প্রকল্পটি। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে চলতি বছরের এপ্রিলে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের মার্চে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
যদিও কমিশন বলছে, অযৌক্তিকভাবে না জেনেই সমালোচনা হচ্ছে প্রকল্পটি নিয়ে। বিভিন্ন দেশে গবাদি পশুর জন্য পরিকল্পিতভাবে পুষ্টিকর ঘাস চাষ হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মো. জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘাস চাষ শেখা নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছে তাদের জ্ঞান বুদ্ধিই নেই। দেশে ঘাস না হলে গরু দুধ দেবে কিভাবে? আমরা হাইজিন ভ্যারাইটি বানিয়েছি, শংকর জাত করেছি আর গরুকে ঘাস খাওয়াবো না? গরু দুধ দেবে কি বাতাস খেয়ে?
এদিকে, অপচয়রোধে যাতে অযৌক্তিক খাতে কোনো ব্যয় অনুমোদন না হয়, সেদিকে কড়া নজরদারির তাগিদ উন্নয়ন অর্থনীতিবিদদের। সরকারি অর্থের যৌক্তিক ব্যয় নিশ্চিতে, বিশেষজ্ঞ টিম দিয়ে প্রকল্প প্রস্তাবনা যাচাই বাছাইয়ের আহ্বান তাদের।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে একের পর এক অনিয়মের ঘটনা সামনে আসায়, বছরখানেক আগেই নড়েচড়ে বসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এমনকি অর্থের অপচয় বন্ধে প্রকল্পের টাকায় বিদেশ ভ্রমণের ওপর একরকম নিষেধাজ্ঞাও আসে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন পেতে যাচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে সম্প্রতি বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়া মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘প্রাণিপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর’ প্রকল্পটি। উন্নত জাতের ঘাস চাষ দেখতে প্রকল্পে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের সংস্থান রাখায় এই আলোচনা-সমালোচনার জন্ম হয়।
প্রকল্প সূত্র বলছে, প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। তার মধ্যে ৩২ জন কর্মকর্তার বিদেশ সফরের জন্য ৩ কোটি ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক কর্মকর্তার পেছনে খরচ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১০ লাখ করে।
এই প্রকল্পটি ছাড়াও আগামীকালের একনেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার বিভাগ/স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহেন্সমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউকেয়ার) ফেজ-১: রুরাল কানেকটেভিটি, মার্কেট অ্যান্ড লজিস্টিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইম্প্রোভমেন্ট (আরসিএমএলআইআইপি)’ প্রকল্প; স্থানীয় সরকার বিভাগ/স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ‘ইউকেয়ার ফেজ-১: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক (এন-৭) উন্নয়ন’ প্রকল্প; নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/সুবিধাদির উন্নয়ন (দ্বিতীয় সংশোধন) প্রকল্প এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ‘শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি স্থাপন প্রথম পর্যায় (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে।
এছাড়াও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার ডিংগাপোতা হাওরের অভ্যন্তরে খাল পুনঃখনন ও ফসল পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্পটি একনেক সভাকে অবহিত করা হবে।