চার ফিফটিতে পাকিস্তানকে বাংলাদেশের পাল্টা জবাব
স্পোর্টস ডেস্ক:
স্কোর: তৃতীয় দিনের খেলা শেষে
প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান ১১৩ ওভারে ৪৪৮/৬ ডিক্লে. (শাহীন ২৮*, মোহাম্মদ রিজওয়ান ১৭১*, আগা সালমান ১৯, সৌদ শাকিল ১৪১, সাইম আইয়ুব ৫৬; শফিক ২, শান মাসুদ ৬, বাবর ০)
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৯২ ওভারে ৩১৬/৫ (মুশফিক ৫৫*; লিটন ৫২*, জাকির ১২, শান্ত ১৬, মুমিনুল ৫০, সাদমান ৯৩, সাকিব ১৫)
দিনের শেষ বলের আগের বলে জমাট বাঁধা লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিমের জুটিটা ভেঙে দেওয়ার আশা করেছিল পাকিস্তানের। মুশফিকের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউর আবেদনের পর আম্পায়ারের কাছে সাড়া না পেয়ে সংশয় নিয়ে রিভিউ নেন পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ। আল্ট্রা এজে স্পাইক ধরা পড়ায় মুশফিক টিকে যান, আর পাকিস্তান সবগুলো রিভিউ হারায়। বাংলাদেশের ব্যাটারদের বিরুদ্ধে এভাবেই ধুঁকেছে স্বাগতিকরা। তাদের ৪৪৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ এখনও বড় ব্যবধানে পিছিয়ে, কিন্তু চার ফিফটিতে তারা শক্ত জবাব দিয়ে যাচ্ছে। ৫ উইকেটে ৩১৬ রানে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এখনও তারা ১৩২ রানে পিছিয়ে।
তৃতীয় সেশনে জুটি বাঁধেন লিটন ও মুশফিক। দুজনেই সাবলীল ব্যাটিংয়ে হাফ সেঞ্চুরি করেন। ১১৮ বলে ৯৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে শনিবার চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করবেন তারা। মুশফিক ৫৫ ও লিটন ৫২ রানে অপরাজিত আছেন।
বিনা উইকেটে ২২ রানে শুক্রবার খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। দলীয় ৩১ ও ৫৩ রানে জাকির হাসান ও শান্ত আউট হন। মুমিনুল ও সাদমান দাঁড়িয়ে যান। ৯৪ রানের জুটিতে পাকিস্তানকে শাসন করতে থাকেন তারা। মুমিনুল ৫০ রান করে খুররাম শাহজাদের কাছে বোল্ড হন। মুশফিককে নিয়ে সাদমান স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু ৭ রানের আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ৫২ রানের জুটি ভেঙে যায় মোহাম্মদ আলীর বলে সাদমান বোল্ড হলে। ৯৩ রানে থামেন তিনি।
চা বিরতির পর মাঠে নেমে সাকিব আল হাসান ব্যর্থ হন। ১৫ রান করে আউট হন তিনি শান মাসুদকে সহজ ক্যাচ দিয়ে। তারপর লিটন ও মুশফিক ধীরে ধীরে সেট হয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন। শেষ বিকালে তারা মারকুটে ছিলেন। পাকিস্তানি বোলারদের সামনে তারা প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে রাখেন।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে লিটনের হাফ সেঞ্চুরি
৮৯তম ওভারের প্রথম দুটি বলে চার মারলেন লিটন দাস। তৃতীয় বল ডট। পরের বলে মিডউইকেট দিয়ে বিশাল এক ছক্কা মারলেন তিনি। স্টেডিয়ামের বাইরে পড়লো বল, বাংলাদেশের স্কোর তিনশ পার হলো। পরের বলে আরেকটি চার মারলেন, হয়ে গেলো হাফ সেঞ্চুরি। ৫২ বলে ৮ চার ও ১ ছয়ে ১৭তম টেস্ট ফিফটি করলেন লিটন। ৮৯ ওভারে সফরকারীদের স্কোর ৫ উইকেটে ৩০৬ হলো।
মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরি
সাদমান ইসলাম, সাকিব আল হাসানরা ফেরার পর ক্রিজে বাংলাদেশের আস্থার প্রতীক হয়ে রান তুলছেন মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় দিন শেষ সেশনে ৮৭তম ওভারে শাহীন আফ্রিদিকে চার মেরে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। ১০৫ বলে ক্যারিয়ারের ২৮তম ফিফটি করেন এই ব্যাটার। তার সঙ্গে ক্রিজে আছেন লিটন দাস। দুজনের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েছে সফরকারীরা। দলের ২১৮ রানে সাকিব আল হাসান বিদায় নিলে তারা ক্রিজে একত্রিত হন। এরই মধ্যে তাদের জুটিও পঞ্চাশ ছাড়িয়ে গেছে।
১৫ রানে সাকিবের বিদায়
মাঠের বাইরে সময়টা ভালো যাচ্ছে না সাকিব আল হাসানের। বাংলাদেশের হয়ে পাকিস্তানে ভালো কিছু করে সেই বাজে সময়ে কিছুটা স্বস্তি ফেরাতে পারতেন। কিন্তু পারলেন না। সাইম আইয়ুব বল হাতে নিয়েই তাকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখালেন, পাকিস্তানি বোলার পেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট। মাত্র ১৬ বলে ১৫ রান করে থামেন সাকিব, শান মাসুদকে সহজ ক্যাচ দেন। সাদমান ইসলাম আউট হলে চা বিরতি হয়। অপরাজিত মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে নতুন ব্যাটার হিসেবে ক্রিজে নামেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার। ২১৮ রানে পঞ্চম উইকেট পড়লো সফরকারীদের।
চা বিরতির আগে ৯৩ রানে কাটা পড়লেন সাদমান
৯৪ রানের জুটি ভাঙার পর মুশফিককে নিয়ে আরেকটি জুটি গড়েছিলেন সাদমান। ধীরে ধীরে সেঞ্চুরির কাছেও পৌঁছে যাচ্ছিলেন। চায়ের বিরতিতে যাওয়ার আগে তার স্কোর ছিল ৯৩। ঠিক দ্বিতীয় সেশনের শেষ বলেই কপাল পোড়ে তার! শান্ত, মুমিনুলের মতো একই রকম ভেতরে ঢুকে পড়া ডেলিভারিতে বোল্ড হন তিনি। এবার হন্তারক ছিলেন পেসার মোহাম্মদ আলী! তাতে প্রথম সেশন দারুণভাবে কাটানো দুই ব্যাটারের (মুমিনুল, পরে সাদমান) বিদায় ঘটলো এই সেশনের শুরু আর শেষ দিকে। মাঝে অবশ্য সাদমানেরই আধিপত্য ছিল। শেষ পর্যন্ত ৭ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছেন। ১৮৩ বল খেলে আউট হয়েছেন ৯৩ রানে। তাতে ছিল ১২টি চার। সাদমানের বিদায়ে ভেঙেছে ৫২ রানের জুটি। চায়ের বিরতিতে যাওয়ার আগে সফরকারীদের স্কোর ৪ উইকেটে ১৯৯ রান। তারা এখনও ২৪৯ রানে পিছিয়ে।
রিভিউ নিয়ে বাঁচলেন সাদমান
৫৪তম ওভারে সাদমানের বিপক্ষে পাকিস্তানের এলবিডাব্লিউর আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন আম্পায়ার। সাদমান অবশ্য আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। রিভিউ নিলে দেখা যায়, বল স্টাম্প মিস করেছে! ফলে রিভিউতে বেঁচে যান তিনি। তখন সাদমান ৫৭ রানে ব্যাট করছিলেন। বল করছিলেন অফ স্পিনার আগা সালমান।
মুমিনুলের আউটে ভাঙলো ৯৪ রানের জুটি
প্রথম সেশনটা বাংলাদেশের করে নিতে সাদমান ইসলামের সঙ্গে অবদান ছিল মুমিনুল হকের। দারুণ জুটিতে প্রতিরোধও গড়েন তারা। বিরতির পর ১৯তম ফিফটি তুলে নেন মুমিনুল। কিন্তু ফিফটির পর বেশিদূর যেতে পারেননি। শান্তর মতো একইরকম ভেতরে ঢুকে পড়া ডেলিভারিতে মুমিনুলকে বোল্ড করেন খুররাম শাহজাদ। তাতে ভেঙেছে ৯৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি। মুমিনুল ৭৬ বলে ৫০ রানে আউট হয়েছেন। তাতে ছিল ৫টি চারের মার।
সাদমান-মুমিনুলের প্রতিরোধে শেষ প্রথম সেশন
শুরু থেকে প্রান্ত আগলে প্রতিরোধ গড়ে খেলছেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। প্রথম ঘণ্টায় জাকির, শান্ত দ্রুত বিদায় নিলেও প্রথম সেশনের বাকিটা সময় তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেন তিনি। এই সময় তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন মুমিনুল। তাতে প্রথম সেশনটা নিজেদের করে নিতে পেরেছে সফরকারী দল।
তৃতীয় উইকেটে পঞ্চাশ ছাড়ানো জুটি উপহার দিয়েছেন সাদমান-মুমিনুল। লাঞ্চ বিরতির আগে এই জুটিতে তারা যোগ করেছেন ৮১ রান। প্রথম সেশনের শেষ বলটিতে চার মেরে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন সাদমান। তাতে ২০২২ সালের পর প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে ফিফটির দেখা পেলেন বাঁহাতি ওপেনার। অভিজ্ঞ মুমিনুল ৪৫ রানে অপরাজিত আছেন। বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে ৩১৪ রানে।
বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না শান্তর ইনিংস
৩১ রানে জাকিরের আউটে শুরুর জুটি ভাঙার পর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করছিলেন শান্ত-সাদমান। তাদের ব্যাটেই স্কোর পঞ্চাশ ছাড়িয়েছে। কিন্তু ২৭তম ওভারে খুররাম শেহজাদের দারুণ ডেলিভারিতে সাজঘরের পথ ধরেছেন অধিনায়ক নাজমুল শান্ত। খুররামের গুড লেংথের ডেলিভারি অনেক ভেতরে ঢুকে পড়ে। নাজমুল ডিফেন্ড করতে গেলেও তাতে লাইন মিস করেন। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল আঘাত করে স্টাম্পে! বোল্ড হয়ে শান্ত ৪২ বলে ১৬ রানে ফিরেছেন।
জাকিরকে ফিরিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দিলেন নাসিম
গতকালের পর তৃতীয় দিনের শুরুটাও সতর্কভাবে করেছিল বাংলাদেশ। দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলছিলেন। কিন্তু দিনের পঞ্চম ওভারে ব্রেক থ্রু এনে দেন নাসিম শাহ! জাকির হাসানকে রিজওয়ানের গ্লাভসবন্দি করান তিনি। তাতে ৫৮ বলে ১২ রানে ফিরেছেন জাকির।
নাসিম শাহর লেংথ বলটি ছিল অনেক বাইরে। জাকির কোনও ধরনের ফুট ওয়ার্ক না করেই খেলতে চেয়েছিলেন। ফলাফল বল ব্যাটের কানা ছুঁয়ে কিপারের গ্লাভসে জমা পড়েছে।
সাদমান-জাকিরের ব্যাটে তৃতীয় দিন শুরু বাংলাদেশের
সিরিজের প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন তৃতীয় সেশনের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তান প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল। ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান করে তারা। স্বাগতিকদের লক্ষ্য ছিল শেষ বিকালে বাংলাদেশের কিছু উইকেট নিয়ে তাদের ওপর চাপ বাড়ানো। কিন্তু সাদমান ইসলাম ও জাকির হাসান ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। কোনও উইকেট না হারিয়ে দিন শেষ করেছেন।
রাওয়ালপিন্ডিতে তৃতীয় দিন একই উদ্যোমে মাঠে নেমেছেন সফরকারী দুই ওপেনার। গতকাল বিনা উইকেটে ১২ ওভারে ২৭ রানে দিন শেষ করার পর আজ সকালের সেশনে ব্যাট করতে নেমেছেন। ৪২১ রানে পিছিয়ে সফরকারীরা।