শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে
জেলা প্রতিনিধি যশোর : যশোরের সদর উপজেলার রুদ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি সরকারকে স্বাক্ষর জাল করে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ ও অন্যান্য দুর্নীতির মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
গতকাল রবিবার ( ১৪ ফেব্রুয়ারি ) মামলার ধার্যদিনে আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দীন হুসাইন তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আরও পড়ুন >>>কাশিয়ানীতে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে ওসি সহ ৪০ জন আহত
মৃণাল কান্তি শহরের বেজপাড়া এলাকার শশীভূষণ সরকারের ছেলে।
স্থানীয়রা বলছেন, মৃণাল কান্তির ঘনিষ্ট তৎকালীন সভাপতি ইব্রাহিম এখনো রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। ইব্রাহিমের ইন্ধনে মৃণাল কান্তি মামলার লুৎফর রহমান বিশ্বাসকে নানা ধরনের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন।
এ ঘটনায় গত কয়েকদিন আগে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন লুৎফর রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং একজন শিক্ষক প্রতিনিধির স্বাক্ষর জাল করে মৃণাল মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে দু’জন শিক্ষককে নিয়োগ দেন।
এমপিভুক্তির সময় দুর্নীতির বিষয়টি উঠে আসে। ওই সময় বিশেষ একটি মহলকে ম্যানেজ করে বিষয়টি ধামাচাপা দেন প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি গ্রামের কাগজের নজরে আসলে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এরপর নড়েচড়ে বসে শিক্ষা বিভাগসহ স্কুল পরিচালনা পরিষদ।
ওই সময় তার সহকারী হিসেবে তৎকালীন সভাপতি ইব্রাহিমের নামও উঠে আসে বিভিন্ন মানুষের মুখে মুখে। বেরিয়ে আসে দুর্নীতির সব কাহিনী।
মৃণাল কান্তির নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে সাধারণ শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজন। এ ঘটনায় স্কুলের সামনে মানববন্ধন পর্যন্ত হয়। স্কুল কমিটি তাকে শোকজ করে। মৃণাল কান্তি ওই সময় শোকজের মনগড়া জবাব দেন। একপর্যায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
একই বছরের ১০ জানুয়ারি স্কুল কমিটির দাতা সদস্য রুদ্রপুর গ্রামের লুৎফর রহমান বিশ্বাস আদালতে মামলা করেন। মামলায় মৃণাল কান্তি ছাড়াও নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক সদর উপজেলার গোয়ালদহ গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে এ কে এম সামছুল আলম ও মণিরামপুর উপজেলার এড়েন্দা গ্রামের তারিফ মোড়লের ছেলে মুনজুর রহমানকে বিবাদী করা হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়,প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি সরকার যোগদানের পর থেকেই স্কুলের সাধারণ শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের অগোচরে নানা ধরনের অবৈধ কর্মকান্ড শুরু করেন।
তিনি দু’জন শিক্ষককে জালিয়াতি করে নিয়োগ দেন। পরে ওই দু’জনকে এমপিওভুক্ত করার সময় দুর্নীতির বিষয়টি ফাঁস হয়। একে একে তার দুর্নীতির সবকিছু সামনে আসে।
আদালতের আদেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর ফসিয়ার রহমান মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা উঠে আসে। এক বছর এক মাস পর রোববার আদালতে হাজির হলে মৃণাল কান্তি সরকারকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তির বিরুদ্ধে স্কুলের চার লাখ ৯৮ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরও একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। পিবিআই তদন্ত করে ওই মামলারও সত্যতা পেয়েছে।
স্থানীয়রা মৃণাল কান্তির ঘনিষ্ট সহযোগী তৎকালীন সভাপতি ইব্রাহিমেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।