মাগুরা প্রতিনিধি: বাণিজ্যিকভাবে দেশি হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন মাগুরার বেকার যুবকরা। বিশেষ করে পুকুর ও পতিত জমিতে মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁস পালন করছেন তারা। প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, বর্তমানে জেলায় ১২০টি খামারে বাণিজ্যিকভাবে পালন হচ্ছে হাাঁস।
মাগুরার সদর উপজেলার হাঁসচাষি আকিদুল জানান, চার একর জমির একটি দীঘিতে তিনি প্রথমে মাছ চাষ শুরু করেন। সফলতা পাবার পর মাছ চাষের সঙ্গেই তিনি শুরু করেছেন দেশি ক্যাম্বেল হাঁস পালন। বর্তমানে তার খামারে এক হাজার হাঁস আছে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁসের খাবার দেয়াসহ অন্যান্য পরিচর্যা করি। প্রতিদিন এ হাঁস খামার থেকে ৪০০ থেকে ৪৫০টি ডিম পাচ্ছি। বাজারের পাইকারি ডিম ব্যবসায়ীরা খামার থেকেই ডিম নিয়ে যায়। আমার হাঁস পালনে সফলতা দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবক উদ্ধুদ্ধ হচ্ছে। তারা এ বিষয়ে আমার কাছ থেকে নানা পরামর্শও নিচ্ছে।’
চাউলিয়া ইউনিয়নের সিরিজদিয়া বাঁওড়ে হাঁস চাষ করছেন সোহেল হোসেন নামে এক যুবক। তিনি বলেন, ‘আমি ফরিদপুর রাজেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছি। বেকার না থেকে পড়াশুনার পাশাপাশি নিজের গ্রামের বাঁওড়ে হাঁস চাষ শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, ‘শুরুটা সহজ ছিল না। আমি জেলার প্রাণিসম্পদ অফিসে হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করতে যাই। কিন্তু তাদের মেশিন নষ্ট থাকায় তারা আমাকে বাচ্চা সরবরাহ করতে পারেনি। পরে খুলনার দৌলতপুর থেকে হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করে খামারে পরিচর্যা শুরু করি। বর্তমানে হাঁসের ভ্যাকসিন সংকট থাকায় অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। ভ্যাকসিন দিতে পারলে হাঁসাগুলো সুস্থ-সবল ও বেশিদিন ডিম দিতে পারে।’
সোহেল বলেন, ‘আমার খামারে বর্তমানে ৪০০ হাঁস রয়েছে। নিয়মিত পরিচর্যা ও যথাসময়ে খাদ্য দিতে পারলে দ্রুতই ডিম দেওয়ার উপযোগী হয় হাঁস। ডিম বিক্রির পাশাপাশি ভালো দামে হাঁসও বিক্রি করা যায়। যার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।’
চাঁদপুর গ্রামের দুবাইফেরত যুবক আশরাফুল বলেন, ‘পারিবারিক উন্নতির জন্য বিদেশ গিয়েছিলাম। সেখানে অনেক পরিশ্রম করেছি কিন্তু সফলতা পাইনি। তাই দেশে ফিরে এসে বেকার জীবনযাপন করছিলাম। পরে হাঁস পালনের সফলতা দেখে নিজের দুই একর পুকুরে দেশি হাঁস পালন শুরু করি। হাঁস চাষে আমার বাড়তি কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। পুকুরের শামুক, লতা, পাতা ও প্রাকৃতিক খাদ্য খেয়ে তারা বড় হচ্ছে। আজ এ হাঁস পালন করে আমি আমার পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। সরকারি সহযোগিতা পেলে এ চাষ আরো বাড়ানো সম্ভব হতো।’
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ হাদিউজ্জামান বলেন, ‘হাঁস পালনে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। ইতিমধ্যে জেলায় ১২০টি হাঁসের খামার তৈরি হয়েছে। বেকার যুবকদের উদ্বুদ্ধ, প্রশিণের মাধ্যমে আমরা জেলায় আরো খামার বাড়াতে চেষ্টা করছি। পাশাপাশি এসব খামার দেখভালের জন্য কাজ করছে আমাদের মাঠকর্মীরা। প্রাণিসম্পদ দপ্তর বেকার যুবকদের বর্তমানে ৪ শতাংশ হারে ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছে।
