পদত্যাগে বাধ্য হলেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের ইনচার্জ
ডেস্ক রিপোর্টঃ যশোরের নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ খুকু বিশ্বাস দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি।আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নানা অনিয়ম, দুর্নীতির এবং অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠান তার বিরুদ্ধে। একপর্যায়ে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করেন ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ।
আজ রবিবার সকাল ৯টার দিকে যশোর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেয় আন্দোলকারী প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। এক পর্যায়ে নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জের কক্ষে প্রবেশ করে ইনচার্জকে ঘেরাও করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে অত্র কলেজের বিক্ষভরত শিক্ষার্থীরা। টানা পাঁচ ঘন্টা আন্দোলনের পর দুপুর ২টার দিকে সিভিল সার্জন ও জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়কের উপস্থিতিতে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করে পদত্যাগ করেন ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ খুকু বিশ্বাস। পদত্যাগের পর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব গ্রহন করেন নার্সিং ইন্সট্রাক্টর মোছা: আরজিনা খাতুন। ইনচার্জের পদত্যাগে সন্তোষ প্রকাশ করে উল্লাস করেন যশোর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি পরবর্তীতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা যেন এ ধরনের দূর্নীতি করার সাহস না পায়। তার জন্য দূর্নীতিগ্রস্থ ইনচার্জের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সরকার থেকে দেওয়া প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীর মাসিক স্টাইপেন্ড কারণ দেখিয়ে কর্তন করা হয়। বলা হয় কর্তন করা টাকা সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু ডিজিএনএম থেকে স্পষ্ট বলা আছে কোনো টাকা ফেরত নেয় না তারা। কলেজের সহকারী শিক্ষকরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সরকারি স্টাইপেন্ডের টাকা আত্মসাৎ করে এবং এর প্রধান মদদ দাতা ইনচার্জ। হোস্টেলে মেয়েদের ডাইনিং খরচ ১৫০০ টাকা, ২০ দিন খেলেও দিতে হয় ৩০ দিন খেলেও দিতে হয়। যে মাসে ২০ দিন খায় সে মাসের বাকি ১০ দিন ডাইনিং বন্ধ থাকলেও সম্পূর্ণ টাকা নেওয়া হয়। এই টাকা ফান্ডে জমা থাকে বলা হলেও কোন স্বচ্ছতা দেখাতে পারেনি। ইনচার্জসহ শিক্ষকরা এই টাকা আত্মসাৎ করে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, একজন স্টুডেন্ট এর বাবা মারা গিয়েছে, ইনচার্জের কাছে ছুটি চাইতে গেলে সরাসরি ইনচার্জ উত্তর করে 'মাটি দিয়ে দিতে বলো ২ দিন পর কলেজ বন্ধ হবে, তখন বাসায় যাবে।' একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান কিভাবে একথা বলেন। ইসলাম ধর্মের ধর্মীয় অনুভূতি তে আঘাত করে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী (আশিষ) এবং একই সাথে মায়ের বয়সী আঞ্জুমান খালার সাথে (আশিষ) অশ্লীল আচারণ করলে আমরা প্রতিবাদ করি। ইনডোরে মিউচুয়াল করার চেষ্টা করলে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়ে শাস্তি দাবি করলে ইনচার্জ একাই তার পক্ষে কথা বলে আমাদেরকে দমিয়ে রাখেন। অভিযুক্ত আশিষ রাত্রিকালীন ডিউটি চলাকালীন মাদকাসক্ত এবং নানা অপকর্মে যুক্ত থাকে জানতে পেরে হোস্টেলের মেয়েরা লিখিত অভিযোগ দিলেও ইনচার্জ তার ক্ষমতা বলে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে শিক্ষার্থীদেরকে ব্যক্তিগতভাবে ইনচার্জের রুমে ডেকে হেনস্থা করা হয়। ভাইভা ও ফরমেটিভ মার্ক কম দিবে এমন ভয়ভীতি দেখিয়ে সকল ম্যামরা শিক্ষার্থীদের দমিয়ে রাখে। যার মদদ দেন ইনচার্জ নিজেই। কারণবসত ঘোষিত ছুটির একদিন পর কলেজে আসলে ছাত্রত্ববাতিল সহ অভিভাবকের ডেকে অপমান অপদস্ত করা হয়। হোস্টেলের মেয়েদের সাথে অশ্লীল ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের।
যশোর সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান জানান, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ইনচার্জের রুমে ঢুকে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলো শুনি এবং ইনচার্জের সাথে কথা বলি। আমাদের উপস্থিতিতে ইনচার্জ মহাপরিচালকের সাথে কথা বলে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করেন। অত্র কলেজের একজন শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত হিসাবে দায়িত্ব নেন।