২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
shadhin kanto

ঝালকাঠির পেয়ারারাজ্য পর্যটক বরণে প্রস্তুত

প্রতিনিধি :
স্বাধীন কণ্ঠ
আপডেট :
জুলাই ৯, ২০২২
57
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
পেয়ারারাজ্য পর্যটক বরণে প্রস্তুত
| ছবি : পেয়ারারাজ্য পর্যটক বরণে প্রস্তুত

এ রহমান, ঝালকাঠিঃ ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে পর্যটক বরণে প্রস্তুত দক্ষিণের জেলা ঝালকাঠির বাংলার আপেল খ্যাত পেয়ারারাজ্যে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে এবার পর্যটকদের চাপ কয়েকগুন বেশি হবে বলে আশাবাদী এ অঞ্চলের লোকজন। পর্যটকদের আগমনে বাড়বে পেয়ারার চাহিদা, সেই সাথে বাড়বে দামও।

অপরদিকে পর্যটকদের আগমনে ভাসমান পেয়ারা বাজারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন।পর্যটকদের বাড়তি বিনোদনের সুবিধা দিতে গড়ে উঠেছে কয়েকটি পার্ক। পেয়ারা বাগানের মধ্যেই এ পার্কগুলো স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টি নন্দন নান্দনিক অনন্য শৈল্পিক ব্যবস্থাপনায়। সেই সাথে রয়েছে সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার ও বিভিন্ন জাতীয় ফাস্টফুড।

আরও পড়ুন>>>কাল চুয়াডাঙ্গায় রক্ত ঝরবে লা‌খো প্রা‌ণের

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভীমরুলী ভাসমান পেয়ারা বাজার সংলগ্ন মাত্র ৩০ গজের মধ্যেই রয়েছে গৌরব ইকোপার্ক। ২ একর জমিতে নিজস্ব অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনায় এ পার্কটি গড়ে তুলেছেন বেকার যুবক গৌতম রায় সুমন। পার্কটির ভিতরে রয়েছে অর্ধশত বসার স্থান, শিশুদের খেলার জন্য দোলনাসহ বিভিন্ন ধরনের আয়োজন। সড়ক ও নৌ, উভয় পথেই পেয়ারা বাগানে ভ্রমণকালে এ পার্কটিতে বিনোদন সুবিধা নিতে পারবেন আগন্তুক পর্যটকরা।

এছাড়াও বিশাল পেয়ারা রাজ্য এলাকায় বাগানের ভিতরেই রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি পার্ক। করোনার মধ্যেও এসব এলাকায় ছিলো পর্যটক ও বিনোদন প্রেমিদের উপচেপড়া ভীড়।

ঝালকাঠি সদর উপজেলা, পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি ও বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলার ৫৫ গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছে মিষ্টি পেয়ারা রাজ্য। প্রতিবছর আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস এলেই পেয়ারার কারণে পাল্টে যায় ওই অঞ্চলের চিত্র। পেয়ারা বেচাবিক্রির জন্য ওইসব এলাকার খালে রয়েছে ভাসমান বাজার। প্রতিদিন শত শত নৌকায় চাষীরা আসে পেয়ারা বিক্রি করতে। ট্রাক ও বড় বড় ট্রলার নিয়ে আসেন পাইকাররা পেয়ারা কিনতে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় আরিচা ফেরিঘাটের বিড়ম্বনা না থাকায় পাইকার ও পর্যটকদের আগমন প্রতিবছরের চেয়ে এবছর বেশি হবে। ফলে এ অঞ্চলের শুধু পেয়ারাই নয় অন্যান্য কৃষি পণ্যও ঢাকাসহ সারাদেশে অল্প সময়ে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সেই সাথে চাষীরা পণ্যের ন্যায্য ও কাঙ্খিত মূল্য পাবেন বলে সম্ভাবনার আশায় বুক বাধছেন ওই এলাকার চাষীরা।

এছাড়া প্রাকৃতিক অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণ পিপাসুরা। শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয়, বাংলাদেশে প্রবাসী বিদেশী অতিথিরাও আসেন উপভোগ করতে।

স্থানীয়দের কাছে জানা গেল, এ অঞ্চলের ‘সবচেয়ে বড়’ ভাসমান হাট সদর উপজেলার ভীমরুলীতে, যা সারা দেশেই অনন্য। এছাড়াও পাশের পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির (নেছারাবাদ) আটঘর, কুড়িয়ানা, আতা, ঝালকাঠির মাদ্রা। এসবই পিরোজপুর সন্ধ্যা নদী থেকে বয়ে আসা একই খাল পাড়ে অবস্থিত।

ভীমরুলী এলাকার পেয়ারা চাষী গৌতম মিস্ত্রি জানান, আমরা কয়েক পুরুষ পেয়ারা চাষ করেই জীবিকা নির্বাহ করি। এ বছর বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে তেমন বৃষ্টি হয়নি। যা হয়েছে তাও আবার উত্তর-পশ্চিম দিকের ঠান্ডা বৃষ্টি। ওই বৃষ্টির কারণে পেয়ারা গাছে ফুল দেরীতে আসছে। যদি পূর্ব দিকের বৃষ্টি হতো তাহলে তা একটু গরম থাকতো। আর পেয়ারা গাছেও ফুল তাড়াতাড়ি আসতো। একই অভিজ্ঞতা কথা জানান আদমকাঠি গ্রামের পেয়ারা চাষী প্রেমানন্দ মন্ডল (৭০)। পেয়ারার ফলন দেরীতে হলেও সুবিধাজনক দিক হিসেবে গ্রহণ করছেন তারা। ঈদুল আজহার কয়েকদিনের মধ্যেই পেয়ারা পাকতে শুরু করবে। ঈদের ছুটির ফাকে ভ্রমণ পিপাসু ও বিনোদন প্রেমিরা ভাসমান পেয়ারাবাজার পরিদর্শনে এলে তারা ভরা মৌসূম দেখতে পাবেন।

ডুমুরিয়া গ্রামের পঙ্কজ বড়াল জানান, দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম সহজ মাধ্যম পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় পাইকার ও পর্যটকদের আগমন প্রতিবছরের চেয়ে এবছর বেশি হবে। ফলে পেয়ারার সাথে অন্যান্য কৃষি পণ্যও পাইকাররা কিনে অল্প সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করতে পারবে। এতে আমরা পণ্যের ন্যায্য ও কাঙ্খিত মূল্য পাবো বলে সম্ভাবনার কথা জানান এ প্রান্তিক চাষী।
পেয়ারারাজ্য পর্যটক বরণে প্রস্তুত
গৌরব ইকো পার্কের সত্তাধিকারী গৌতম রায় সুমন জানান, একসময়ে গণপূর্ত বিভাগে ঠিকাদারী কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। মা মারা যাবার পরে বাবার সঙ্গ দিতেই ঠিকাদারী কাজ ছেড়ে এলাকায় আসি এবং নিজেদের জমি দেখা শুনা করি। একপর্যায়ে ভাসমান বাজার (স্বীকৃতিকালীন) পরিচালনা কমিটির সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি। ২একর জমিতে পার্কটি স্থাপন করা হলেও বর্গাকৃতি করতে ২০শতাংশ জমি লিজ নেয়া হয়েছে। বাকি পুরোটাই পৈত্রিক সম্পত্তি। এখানে আনন্দ বিনোদনের জন্য মনোরম ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরী করা হয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড, সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থাও। যাতে দূরদূরান্ত থেকে আগত পর্যটক ও বিনোদনপ্রেমিরা এসে এখানে নির্বিঘ্নে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
পেয়ারারাজ্য পর্যটক বরণে প্রস্তুত
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম সম্ভাবনার কথা জানিয়ে বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় আরিচা ফেরিঘাটের বিড়ম্বনা না থাকায় পাইকার ও পর্যটকদের আগমন প্রতিবছরের চেয়ে এবছর বেশি হবে। ফলে এ অঞ্চলের শুধু পেয়ারাই নয় অন্যান্য কৃষি পণ্যও ঢাকাসহ সারাদেশে অল্প সময়ে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। সেই সাথে চাষীরা পণ্যের ন্যায্য ও কাঙ্খিত মূল্য পাবেন বলে সম্ভাবনার আশায় বুক বাধছেন ওই এলাকার চাষীরা। এছাড়াও পর্যটকদের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি বিনোদন স্পট। সেগুলোকেও পেয়ারা মৌসূমকে ঘিরে আধুনিকায়ন করা হয়েছে। প্রতি বছরের চেয়ে এবছর দেশী-বিদেশী পর্যটক অনেক বেশি আসবেন, অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি দৃঢ় হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

গরম খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram