পৌনে ৪ কোটি টাকা পাচ্ছে ৯ পুলিশ সদস্যের পরিবার
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি চাকরিজীবীদের কাজে উদ্বুদ্ধ করতে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। ঘোষণা অনুযায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তাদের পরিবারকে ইতোমধ্যে ক্ষতিপূরণ দেয়া শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বেতনের গ্রেড অনুযায়ী সাড়ে ৩৭ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে মোট তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ পাচ্ছে ৯ পুলিশ সদস্যের পরিবার।
সম্প্রতি এ ক্ষতিপূরণের জন্য ১৬ পুলিশ সদস্যদের (যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন) পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। কিন্তু এদের মধ্যে ৯ পুলিশ সদস্যের পরিবার অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে ক্ষতিপূণের জন্য আবেদন করলে তাদের আবেদন মঞ্জুর হয়। এসব পরিবারকে ক্ষতিপূরণে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য গত রোববার হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। বাকি আবেদনগুলো এখনো মঞ্জুর হয়নি বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
যে ৯ পুলিশ সদস্যের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে-
পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), ঢাকার এসআই (নিরস্ত্র) মো. রাসেল বিশ্বাসের পরিবার ক্ষতিপূরণ বাবদ পাচ্ছে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। ঢাকা মেট্রোপলিটন উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) অনিতা রায়ের পরিবার পাচ্ছে ৫০ লাখ টাকা। সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে আরআরএফ, রাজশাহীর এসআই (নিরস্ত্র) মোশারফ হোসেন শেখের পরিবার।
ডিএমপির পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) রাজু আহম্মেদের পরিবার ৫০ লাখ টাকা; চট্টগ্রামের কনস্টেবল মো. মোখলেছুর রহমানের পরিবার সাড়ে ৩৭ লাখ; ডিএমপির কনস্টেবল মো. আলমগীর হোসেনের পরিবার সাড়ে ৩৭ লাখ; পিএমপির নায়েক মো. আল মামুনুর রশিদের পরিবার সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা।
সিরাজঞ্জের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ফজলুর রহমানের পরিবার ৫০ লাখ এবং রাজশাহীর এসআই (নিরস্ত্র) আবুল কালাম আজাদের পরিবার পাচ্ছে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা।
এর আগে গত ২৭ জুলাই প্রথম ক্ষতিপূরণে সম্মতি দেয়া হয় প্রয়াত প্রতিরক্ষা সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী এবং সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক মো. মঈন উদ্দিনের পরিবারের অনুকূলে।
উভয় পরিবারের নামে ৫০ লাখ টাকা করে মোট এক কোটি টাকা মঞ্জুরি দিতে দুটি আলাদা চিঠি পাঠানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাব কর্মকর্তার কাছে।
এরপর গত ১৯ আগস্ট পুলিশ সদস্যদের মধ্যে প্রথম ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লাখ টাকা দেয়ার সম্মতি দেয়া হয় করোনায় মারা যাওয়া চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের নগর গোয়েন্দা (দক্ষিণ) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমানের পরিবারকে।
চলতি (২০২০-২১) অর্থবছরের বাজেটে ‘স্বাস্থ্যঝুঁকি বাবদ ক্ষতিপূরণের জন্য বিশেষ অনুদান’ খাতে যে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে, তা থেকে এ ব্যয় করা হবে বলে অর্থ বিভাগ থেকে জানানো হয়।
জানা গেছে, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো তিনজনের শরীরে শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)। শনাক্তের কয়েক দিন পরই ভাইরাসটির সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে সরকার কয়েক ধাপে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করে। কিন্তু সাধারণ ছুটিতে ও এর পরবর্তী সময়েও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারি চাকরিজীবীদের কাজে উদ্বুদ্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ গ্রেডভেদে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পাবেন। মারা গেলে পাবেন ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে গত ২৩ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি করা হয়। এত বলা হয়, করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ-সংক্রান্ত সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরাসরি আর্থিক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
ওই পরিপত্রে আরও বলা হয়, ২০১৫-এর বেতন স্কেল অনুযায়ী, ১৫-২০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন পাঁচ লাখ, মারা গেলে পাবেন ২৫ লাখ টাকা। ১০-১৪তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন সাড়ে সাত লাখ এবং মারা গেলে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া প্রথম-নবম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন ১০ লাখ এবং মারা গেলে ৫০ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের সবার জন্য স্বাস্থ্যবীমার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বীমার ক্ষেত্রে সরকারকেই প্রিমিয়াম দিতে হবে। এছাড়া বীমার টাকা পেতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে সরাসরি আর্থিক সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
করোনায় আক্রান্তের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেয়া এখনো শুরু হয়নি।