ফেসবুক পোস্টে খুজে পেলেন ১২ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মাকে
খুলনা প্রতিনিধি: বিনা সুতার জালে পৃথিবী আজ একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। সভ্যতার আলোয় পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত যোগ হচ্ছে নিত্য নতুন প্রযুক্তি।
প্রযুক্তির বর্তমান দুনিয়ায় সহস্র রকমের বিনোদন যেমন সহজেই উপভোগ করা যায়, তেমনি হাজার মাইল দূরত্বের প্রতিবন্ধক নিমিশেই উধাও করে দেওয়া যায়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্ক জাকারবার্গ বন্ধুদের এক প্ল্যাটফরমে যুক্ত করতে গিয়ে, আজ গোটা পৃথিবীর মানুষকে এক বিনা সুতার জালে আবদ্ধ করে ফেলেছেন। এ এক ভালবাসার, ভাললাগার অন্যরকম উদ্যোগ।
কেউ হয়ত ঈর্ষান্বিত হয়ে বলেন, স্যোসাল মিডিয়া একটি ড্রাগের নাম। বিজ্ঞান কিংবা প্রযুক্তি দুনিয়ার প্রতিটি বস্তুর ভাল মন্দ নির্ভর করে ব্যবহারকারীর উপর।
বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারী ২৭০ কোটি মানুষ। প্রতি মুহুত্বেই ফেসবুকে ঘটে কোটি ঘটনার সংমিশ্রন।
ফেসবুক ব্যবহার করে ১২ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মাকে খুজে পেলেন মাহাবুর রহমান মামুন। গতকাল শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকা থেকে মাকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি।
মামুন জানান, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার কাছিহারা গ্রামের রফিকুল ইসলাম সরদারের ছেলে তিনি। বর্তমানে তার আরো তিন জন বোন আছে । তাদের মা নূর নাহার বেগম(৪৫) এর প্রায় ১৫ বছর আগে মানুষিক সমস্যা দেখা দেয়।
২০০৮ সালে যখন মামুনের বয়স ১১/১২ বছর তখন কোন এক রাতে তার মা নুরনাহার বেগম সকলের চোখের আড়ালে কোলের শিশু সন্তানকে নিয়ে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যান। তার পর থেকে মাকে খোঁজা-খুঁজি করতে এলাকায় মাইকিং, স্থানীয় পত্র পত্রিকায় নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন তিনি।
সারাদেশ খু্ঁজেও মা ও তার ছোট ভাইয়ের কোন হদিস পাননি তিনি। মাকে ফিরে পাওয়ার আশাও আর ছিলনা, গত বৃহস্পতিবার মামুন এলাকার পার্শ্ববর্তি কালিগঞ্জ উপজেলার জনৈক শুশান্ত বিশ্বাসের ফেসবুক আইডিতে হারিয়ে যাওয়া তার মায়ের ছবিসহ একটি পোষ্ট দেখে তার সন্ধান পান।
সেই সুত্র ধরে শনিবার সকালে ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর শহরের চুকনগর মেডিকেল ক্লিনিকে এসে চিকিৎসক উজ্জ্বল বিশ্বাসের সহায়তায় ১২ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মা’কে খু্ঁজে পান মামুন।
তবে মা’কে পেলেও তার ছোট ভাইয়ের কোন সন্ধান পাননি। তার ধারণা ছোট ভাইকে হয়তো মানষিক প্রতিবন্ধী মা’য়ের কাছ থেকে কেউ নিয়ে থাকতে পারে। এতদিন পরে মা’কে খুঁজে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে মা’কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মামুন। তার মা’ও ছেলেকে দেখে চিনতে পারে বলে জানান তিনি। মা’কে খু্ঁজে পেয়ে তাদের পরিবারে চলছে যেন আনন্দের বন্যা। খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে তার খুঁজে পাওয়া হারানো মা’কে দেখতে লোকজন ভীড় করছে।
এ বিষয়ে কথা হয় নুরনাহার বেগমকে খুঁজে পেতে সহায়তাকারী চুকনগর মেডিকেল সেন্টারের কর্মরত ডা: উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান, গত বুধবার সন্ধ্যায় অজ্ঞাত পরিচয়ের এই মহিলাকে শহরে ঘোরা ফেরা করতে দেখে এবং কথা বার্তার ধরণ শুনে লোকজন ভীড় করে। তিনিও উৎসুক হিসেবে মহিলাকে দেখতে এগিয়ে যান। এক পর্যায়ে মহিলার কাছে তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ, শ্যামনগরের কায়েকটি গ্রামের নাম বলেন। তখন তিনি মহিলার একটা ছবি তুলে কালিগঞ্জ উপজেলায় আমার এক আত্মীয় শুশান্ত বিশ্বাসের ফেসবুক আইডিতে মহিলার ছবিটি সেন্ড করে পোষ্ট দিতে বলি এবং মহিলাকে খুঁজে পেতে তার মোবাইল ফোন নাম্বার সংযুক্ত করে দেয়।
ফেসবুকে ছবি দেখে নুর নাহার বেগমের ছেলে মামুন এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজন চিনতে পেরে শনিবার তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করে চুকনগর আসলে তিনি তার মা’য়ের সন্ধান দেন। পরে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্হিতিতে মামুনের হাতে তার মাকে তুলে দেয়া হয়। তিনি আরো জানান, নুরনাহার বেগম মানষিক প্রতিবন্ধি হলেও তার কথা বার্তায় মনে হয়েছে তিনি লেখাপড়া জানা একজন মহিলা। ইংরেজিতে নিজের নাম লেখা এবং পবিত্র কোরআন শরীফের সুরা মুখস্হ পড়তে পারেন শুনে বোঝা যায় তিনি একজন শিক্ষিতা নারী।