কপিলমুনিতে বাঁশ ও বেতশিল্পের কারিগরা দুর্দিনে
শেখ খায়রুল ইসলাম, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি এলাকা থেকে বাঁশ ও বেতশিল্প প্রায় বিলুপ্ত হতে চলেছে।
পরিবেশ বিপর্যয় তথা উপকুলীয় এলাকায় ঘুর্ণিঝড় আইলা, সিডর, নারগিস ও আম্পান ইত্যাদির কারণে এলাকাসমুহ প্লাবিত হওয়ায় লোনা পানির প্রভাব, বাঁশ- বেত চাষে প্রয়োজনীয় পুঁজি ও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে বিলুপ্ত হতে বসেছে এ শিল্প।
আরও পড়ুন>>>মাছের সাথে শত্রুতা! থানায় অভিযোগ
অন্যদিকে দেশীয় প্লাষ্টিকের বাজার জমজমাট হওয়ায় এ পেশায় নিয়োজিতরা বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পন্য ও অন্যান্য দ্রব্যের সাথে পাল্লা দিতে না পারায় তাদের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ছে।
যার কারণে গ্রাম থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব শিল্প।
ফলে এলাকাটিতে বাঁশ শিল্পের কারিগরদের ভাগ্যে নেমে এসেছে দুর্দিন।
অনেকে তাদের পূর্ব পুরুষের পেশাকে আঁকড়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেও হিমশিম খাচ্ছেন।
আরও পড়ুন>>>যশোরের ১৫৫৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই শহিদ মিনার
এক সময় পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে বাঁশের তৈরি সামগ্রীর কদর ছিল খুব বেশী। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন তা আর বিশেষ চোখে পড়ে না।
অপ্রতুল ব্যবহার আর বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বাঁশ ও বেত শিল্পীরা তাদের বাপ-দাদার পেশাকে ছেড়ে অন্যান্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
হাতেগোনা কয়েকজন শিল্পের কারিগররা নিরুপায় হয়ে ঐতিহ্যটাকে আঁকড়ে ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক সময় বাঁশের তৈরি কুলা, খাচা, চালনী, চাটাই, ডোল, ডালা, খাদি, ঝুড়ি, পলো, চেয়ার, পাখা, টোপা প্রভৃতি বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হতো।
আরও পড়ুন>>>বড়লেখায় পরগনাহী দৌলতপুর মাদ্রাসার ৭১তম মাহফিল ৮ ফেব্রুয়ারী
এলাকার গ্রামগুলোতে এসব শিল্পের চাহিদা ছিল অনেক বেশি, যার চাহিদা পূরণেও সক্ষম ছিল এ শিল্পে নিয়োজিতরা। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে এ শিল্পের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এ পেশায় দক্ষ শিল্পীদের পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম দুরাবস্থা।
যার ফলে কুটির শিল্পের উপর নির্ভরশীল পরিবারে চলছে দুর্দিন। বেকার হয়ে অনেকেই মানবেতার জীবন যাপন করছেন।
অন্যদিকে আগের তুলনায় মত বাঁশের জন্ম বা উৎপাদন সঠিকভাবে হচ্ছে না। যে বাঁশ ৫০/৬০ টাকায় বিক্রি হত কালের পরিবর্তে এখন সেই বাঁশের মূল্য ৩৫০-৪০০ টাকা। অথচ বাঁশজাত পন্যের দাম সে পরিমাণে বাড়েনি। অন্যদিকে বাঁশের বংশবৃদ্ধির আগেই উজাড় করে কাঁটা হচ্ছে এসব বাঁশ।
আশির দশকে গ্রামের বেশীর ভাগ ঘরবাড়িই বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হতো। একটি ঘর তৈরি করতে বাঁশ লাগত প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি। সে সময় প্রত্যেকটি গ্রামে বড়বড় বাঁশঝাড় ও বেত বাগান দেখা যেত। কিন্তু এখন তা আর চোখে পড়ে না। কারণ, বাঁশঝাড় ও বেতবাগান পরিস্কার করে সেখানে গড়ে উঠেছে নতুন বাড়ি ও স্থাপনা।
অপর দিকে শহরে গড়ে উঠেছে বড় বড় পাকা দালান। এসব কারণে কপিলমুনি অঞ্চলের বাঁশশিল্পীদের উপার্জন কমে গেছে।
বাঁশজাত দ্রব্যের কাজে নিয়োজিত কপিলমুনির নেপাল দাস জানান, ক্রয়ের তুলনায় বিক্রি মূল্য অধিক না পাওয়ায় এ পেশায় সংশ্লিষ্টরা পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে কাজের প্রতি তারা দারুনভাবে অনীহা প্রকাশ করছেন এবং অনেকেই পৈত্রিক পেশা ছেড়ে অন্যান্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়েছেন।