২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
shadhin kanto

বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইলে ভারত কী করবে?

প্রতিনিধি :
স্বাধীন কন্ঠ
আপডেট :
আগস্ট ১৭, ২০২৪
19
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সপ্তাহ দুয়েক আগে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখনও সেখানেই রয়েছেন তিনি। আন্দোলনকারীদের ওপর দমনপীড়ন ও হত্যার অভিযোগে দেশে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। সেগুলোর বিচারের স্বার্থে ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন।

গত বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অনেক মামলা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় যদি সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমাদের তাদের (ভারতকে) অনুরোধ করতে হবে তাকে (শেখ হাসিনাকে) বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে। এটি ভারত সরকারের জন্য বিব্রতকর হবে। ভারত এটি জানে এবং আমি নিশ্চিত যে তারা এ বিষয়ে খেয়াল রাখবে।

এখন, বাংলাদেশ যদি সত্যি ভারত সরকারের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানায়, তাহলে কী করবে নয়াদিল্লি? তারা কি আদৌ সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ফেরত পাঠাবে? কী আছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার প্রত্যর্পণ চুক্তিতে? এসব প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে সবার মনে।

কী আছে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে

২০১৩ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি সই হয়। এই চুক্তি দেশ দুটিকে প্রয়োজন অনুসারে দোষী সাব্যস্ত বা বিচারাধীন আসামি বিনিময় করতে অনুমতি দেয়।

২০১৬ সালে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে একটি সংশোধনী যুক্ত করা হয়। এতে এক বছরের বেশি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বিনিময়ের সুযোগ দেওয়া হয়। তবে রাজনৈতিক বন্দি এবং আশ্রয়প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য হবে না।

শেখ হাসিনার জন্য কি প্রযোজ্য

শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাতে হবে। কারণ, ভারতে প্রত্যর্পণ বিষয়ক কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ হলো এই মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশ অনুরোধ করলে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো হবে কি না, সে বিষয়ে গত শুক্রবার (১৬ আগস্ট) প্রশ্ন করা হয়েছিল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের কাছে। সেসময় তিনি বেশ সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এটিকে ‘অনুমানমূলক প্রশ্ন’ উল্লেখ করে রণধীর বলেন, তিনি এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পক্ষপাতি নন। তার মতে, পরিস্থিতি এখনো পরিবর্তন হচ্ছে।

তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে কীভাবে এবং কীসের ভিত্তিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে, সেটি এখনো স্পষ্ট করেনি ভারত সরকার।

আব্দুল মঈন খান বলেন, এটি স্পষ্ট যে, শেখ হাসিনা আপাতত ভারতেই থাকবেন। এটি এখন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদ এবং তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভর করছে, কোন পরিস্থিতিতে তাকে দেশত্যাগ করতে হয়েছিল এবং তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করা ও বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যায় এমন বিবৃতি দেওয়ার অনুমতি দেওয়া ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য সহায়ক হবে কি না।

সিএনএ’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জিন্দাল স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্তও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ শেখ হাসিনার ওপর যেসব অভিযোগ চাপিয়েছে, তার ভিত্তিতে ঢাকার অনুরোধ বিবেচনা করা এখন নয়াদিল্লির ওপর নির্ভর করছে।

কী করবে ভারত

ভারতের সঙ্গে শেখ হাসিনার সম্পর্ক বহু পুরোনো ও গভীর। ১৯৭৫ সালে বাবা-মাসহ পুরো পরিবার নিহত হওয়ার পর তিনি প্রতিবেশী দেশে ঠাঁই নিয়েছিলেন। তখন তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল নয়াদিল্লি। জার্মানি থেকে ফেরার পরপরই শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও তিনি ভারত এবং নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।

ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে পুরোনো সম্পর্ক থাকলেও ভারতকে মনে রাখতে হবে, এ অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা দরকার। তাছাড়া, এটি বাংলাদেশে শক্তিশালী ভারতবিরোধী মনোভাবও জাগিয়ে তুলতে পারে। এ অবস্থায় ভারতকে পুরোনো বন্ধু ও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই আপাতত শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতই বলা চলে।

তথ্যসূত্র: ফার্স্টপোস্ট, ট্রিবিউন ইন্ডিয়া, রয়টার্স

গরম খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram