বানারীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর কর্মকর্তাদের পকেট ভার
রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া,বরিশালঃ বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার চাখার ইউনিয়নে আশ্রয়ণ প্রকল্পের গৃহনির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে জমিসহঘর বরাদ্দ দেয়ার জন্য গত ২৩ জানুয়ারী দেশব্যাপী একযোগে ৭০ হাজার গৃহনির্মাণের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর মধ্যে বানারীপাড়ায় ২০০ টি বরাদ্দকৃত ঘরও রয়েছে। উপজেলার চাখার ইউনিয়নের সাকরাল গ্রামের ২একর জমির ওপর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬৫ টি গৃহের কাজও ওই দিন শুরু হয়। ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রতিটি গৃহ নির্মাণ করা হবে বলে জানা যায়।
২১ ফেব্রুয়ারী রাতে ওই গ্রামের সুলতান মৃধার মাছের ঘের সংলগ্ন সরকারী খাস জমির মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণাধীন ৬৫ টি গৃহের মধ্যে ১২ ঘরের ৩২ টির পিলার ভেঙ্গে ফেলে দুর্বত্তরা।
স্থানীয় সোনাহার গ্রামের মৃত কাসেম কাজীর ছেলে মোঃ সুমন কাজী (২৭) সহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামী করে চাখার ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা বাদশা মিয়া বানারীপাড়া থানায় ২২ ফেব্রুয়ারী রাতে মামলা দায়ের করা হয়।
পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট নিশাত শারমিনের নেতৃত্বে পুলিশ আসামীদের বাড়ীতে অভিযান চালায়। এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে পিলার গুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে তা আস্তর বালুর পরিবর্তে বিট বালু মিশানো হয়েছে। প্রতিটি ঘরের দরজা ও জানালার উপরে লিংটনের পরিবর্তে কোথাও ২ টি কোথাও ৩ টি রডের উপরে ইট গাঁথা হয়। তাছাড়াও সিমেন্ট ও বালুর পরিমান কম হওয়ায় প্রকল্পের চলমান ৬৫ টি ঘরের মধ্যে নির্মিতব্য ৪৪ টি ঘরের প্রত্যেকটি পিলার নড়বড়ে অবস্থা ও খুঁটি দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে।
জানালার এঙ্গেল গুলো ও খুবই নিম্নমানের দেখা যায়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে প্রকল্পের ওই স্থানে পানি জমে একাকার হয়ে যায়। ভিট উচু না করায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরতদের বর্ষা মৌসুমে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হবে।
স্থানীয় আব্দুল মান্নান হাওলাদার জানান, কয়েকদিন আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাকা গৃহের কাজ করার সময় ওয়াল ধসে নির্মাণ শ্রমিকদের মাথার ওপরে পড়ে। ঘটনা জানাজানি হওয়ায় ওই শ্রমিককে কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প সংলগ্ন তার সম্পত্তি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভিতরে নিয়ে তাকে প্রথমে ৫টি ঘর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখন একটি ঘর দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।
একজনের ভূমি দখল করে তাকে ভূমিহীন করে অন্যকে ভূমিসহ ঘর দেওয়া কতটা মানবিক এ প্রশ্ন তোলেন অশীতিপর এ বৃদ্ধ। জানা গেছে প্রকল্পটির তত্ত্বাবধানে রয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী মহসিন-উল হাসান ।
এদিকে এর আগে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ঘরগুলোও নিম্নমানের হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও জনপ্রনিধিরা পরস্পরের যোগশাজসে নিম্মমানের ঘর নির্মাণ করে দিয়ে তাদের পকেট ভার করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা জানান আশ্রয়ণ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব প্রকল্প। অনিয়ম-দুর্নীতি ও নিম্নমানের কাজের অভিযোগ সঠিক নয়,বরং ভিত্তিহীন। তিনি ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন এবং যারা এই পিলার ভেঙ্গেছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবেনা বলেও জানান।