বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তরুণদের ভাবনা
মাত্র চারটি অক্ষর এই 'ভা লো বা সা',এই চারটি অক্ষর মিলিত হয়ে তৈরি হয়েছে একটি পূর্ণ শব্দ "ভালোবাসা"। শব্দটা ছোট হলেও এর বিশালতা আকাশচুম্বী।
পৃথিবীর আদিকাল থেকেই মানব-মানবীর বিদ্যমান ভালোবাসা কবিকে দিয়েছে কবিতা, রং কে দিয়েছে ছবি, শিল্পীকে দিয়েছে সুর। তাই নান্দনিকতার উৎসভূমিই হচ্ছে প্রেম।
আমি যদি বলি, গোটা পৃথিবীকে একটি বাগানরূপে কল্পনা করলে,সেই বাগানের সব চেয়ে সুগন্ধি ফুলটি হচ্ছে ভালোবাসা। তাহলে বিষয়টা কেমন হয়?
প্রেম থেকে ভালোবাসার জন্ম হয় নাকি ভালোবাসা থেকে প্রেমের জন্ম?
আচ্ছা আসলে কি এই ভালোবাসা বা আসলে ভালোবাসার সংজ্ঞা ই বা কি?
আচ্ছা একটু পুরাতন দিনের দিকে তাকাই, গ্রিক উপকথায় মানুষ প্রেমে পড়ে তখনই, যখন কিউপিড তার তীরে কাউকে ঘায়েল করে। তবে বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। বিজ্ঞান মনে করে, প্রেম বা ভালোবাসা মানুষের মস্তিষ্কের একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যাধি।
প্রেম দীর্ঘকাল ধরেই দার্শনিক এবং কবিদের জন্য একটি একচেটিয়া চিন্তার বিষয়। এই ভালোবাসার বিষয়টি কিন্তু গভীর ভাবে ভাবিয়েছে বিজ্ঞানীদেরও। বিজ্ঞান বলছে, প্রেম বা ভালোবাসার একটি প্রকৃত বিজ্ঞান রয়েছে।
প্রেমেপড়া মস্তিষ্কের জৈব রসায়নে বিশাল, কিন্তু পরিমাপযোগ্য পরিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত হয়। বিজ্ঞান প্রেমের তিনটি মৌলিক অংশ চিহ্নিত করেছে। প্রতিটি মস্তিষ্কের রাসায়নিকের একটি অনন্য মিশ্রণ দ্বারা চালিত।
প্রেমে পড়া পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই ইস্ট্রোজেন এবং টেস্টোস্টেরন হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আকর্ষণ অ্যাড্রেনালিন, ডোপামিন এবং সেরোটোনিন দ্বারা চালিত হয়। এই রাসায়নিকগুলো মস্তিষ্কে উত্তেজনাপূর্ণ ও অভিনব অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রকাশিত হয়।
দীর্ঘমেয়াদি সংযুক্তি হরমোন এবং মস্তিষ্কের রাসায়নিকের একটি ভিন্ন সেট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মস্তিষ্কের অক্সিটোসিন এবং ভাসোপ্রেসিন বন্ধনকে উৎসাহিত করে।
বিজ্ঞানীরা আরও বলেছেন, প্রেমে পড়ার প্রক্রিয়াটি কিছু ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চোখ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রেম থেকেই ধীরে ধীরে জন্ম হয় ভালোবাসার। যাবতীয় সুস্বাদের সমগ্র ব্যঞ্জনাই হলো ভালোবাসা। আবহ সুন্দরের ভূষিত সৌন্দর্য্যই যেন ভালোবাসা।
বর্বর আদিমতা বনাম যান্ত্রিক অসভ্যতার দোলাচল দাবা খেলে যায় স্বার্থসংঘাতের কিস্তিমাতে। তবুও মানুষ আশায় থাকে, ভালোবাসতে চায়, ভালো রাখতে চায়, ভালো থাকতে চায়। মানুষ যতদিন ভালো থাকতে চাইবে, পৃথিবীতে ভালোবাসা রবে অমলিন।
সময়ের ব্যবধানে হয়ত বদলেছে ভালোবাসা প্রকাশের ধরন, তবুও এতো পরিবর্তনের ভিড়েও সেই প্রিয় মানুষকে একনজর দেখার আকুতি কিংবা তাকে খুশি করার প্রবণতায় আসেনি কোন পরিবর্তন।
আজও এক অকৃত্রিম মায়াজালে প্রিয়জনকে ধরে রাখার প্রচেষ্টা কিংবা প্রিয় মানুষের হাসির কারণ হবার মরিয়া হই আমরা সবাই।
তবে বর্তমানে আমরা দেখতে পাই,ফেব্রুয়ারি মাস এলেই রোজ ডে, কিস ডে, হাগ ডে, টেডি ডে, চকলেট ডে ভ্যালেন্টাইনস ডে সহ আরও নানান ডে।
এসব দিবসের মধ্যে সবাই ভ্যালেন্টাইন দিবস নিয়ে একটু ঘটা করে ভাবে। তবে ভালোবাসা কি নিদিষ্ট একটি দিনের উদযাপনা দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব? ভালবাসা কি ব্রান্ডের উপহার সামগ্রী আদান প্রদানের মাধ্যমে পরিমাপ করা যায়?
অবশ্যই না। তবে বর্তমান সময়ে আমাদের কাছে ভালোবাসার মানে হলো,পকেটের টাকা দিয়ে ব্রান্ডের সামগ্রী কিনে উপহার দেওয়া, ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে মহামূল্যবান সময় ব্যয় করা রেস্টুরেন্টে। ঘটা করে পালন করা ভ্যালেন্টাইন দিবসের ভ্যালেন্টাইনই চুড়ুই পাখির মতো ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে যায়, পকেট খালি করে।
সত্যিকার অর্থে এগুলো নিন্দাসূচক ও আত্মকেন্দ্রিক কাজ।
ভালোবাসা হলো এমন জিনিস, যেখানে সুখের অনুভূতি আর প্রিয়জনকে প্রাপ্তির আনন্দে ভরে ওঠে প্রতিটি ভালোবাসার মানুষের হৃদয়।
ভালোবাসা হলো পরমাণু শক্তির মতো। জীবনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ, হাসি-কান্না সবকিছু ভাগাভাগি করে নিতে কিছু কাছের মানুষ ভালোবাসার মানুষের প্রয়োজন কিংবা কখনো কখনো প্রিয়জন।
আমরা জানি,ভালোবাসা মানুষকে সুখী হতে সাহায্য করে। তবে সম্মানহীন ভালোবাসা ঠুনকো।
ভালোবাসায় থাকতে হয় শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ। ভালোবাসা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
ভালোবাসতে হয় নিজেকেও। বাস্তবিক অর্থে ভালোবাসা হওয়া উচিত সামগ্রিক। যার সূচনাটা হতে হবে ঘর হতে একদম বিশ্বব্যাপী।
মানুষ আজকাল ভালোবাসায় ব্যর্থ হয়ে নিজের ও পরিবারের ক্ষতি করে।
ভালোবাসার সূচনা হোক জীবনদানকারী বাবা-মা হতে পৃথিবীর সবার জন্য।
ভালোবাসা তাই দিবসভিত্তিক নয়, তবে বছরের একটি বিশেষ দিন অনুরণিত হোক সব ব্যস্ত প্রেমিকের বাহুডোরে কিংবা আকুল প্রেয়সীর অনাহুত মন গুঞ্জরিত হোক গোপন পিয়াসী পূর্ণতায়। সত্য ও প্রেমের সমান্তরাল আরাধনা বাজুক আজ ভালোবাসার মিছিলে, ভালো এই দিনে।
ভালোবাসা দিবসে পারস্পরিক বিশ্বাস, প্রতিশ্রুতি রক্ষা আর জীবন যুদ্ধে এক সাথে সূর্যাস্ত দেখার মধ্যে দিয়েই পূর্ণতা পাক সকল ভালোবাসা।
প্রিয়োজনের জন্যই সাজানো থাকুক ক্ষুদ্র জীবনের সকল আয়োজন। তাই ভালোবাসার আকাশে রঙিন ঘুড়ি শুধু একটি দিন নয়, উড়ুক বছর জুড়েই। পরম যত্নে আর ভালোবাসায় কাছে থাকুক সব প্রিয়জন।পৃথিবী হোক মানুষের,ভালোবাসা হোক পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টির উপর।
লেখিকাঃ জেসিনা মুর্শীদ
তরুণ লেখিকা ও সমাজ সেবিকা।