বেনাপোল বন্দরে শুল্ক ফাঁকির মহোৎসব, চালান আটক, লাইসেন্স বাতিল।

শুল্ক ফাঁকির মহোৎসব,
বেনাপোল বন্দরে শুল্ক ফাঁকির মহোৎসব, চালান আটক, লাইসেন্স বাতিল।

এস এম মারুফ, স্টাফ রিপোর্টারঃ  দেশের সর্ববৃহৎ স্থল বন্দর যশোরের বেনাপোল বন্দরে শুল্ক ফাঁকির কারসাজিতে যুক্ত হয়ে এক শ্রেণির দূর্ণীতিবাজ কাস্টমস, বন্দর কর্মকর্তা ও সিএন্ডএফ এজেন্ট কর্মীরা সম্মিলিত ভাবে পরস্পরের যোগসাজশে সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অভিনব কৌশলে বন্দর শেড থেকে পণ্য চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে বলে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে। যার কয়েকটি পণ্য চালান ধরা খেলেও, অধিকাংশ থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।  আরো পড়ুন:  পাপুলের বিষয়ে এখনও ‘জানে না’ সংসদ

এমনই দুটি পণ্যের চালান বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাতে বন্দরের ৩৯ নং শেডে ধরা পড়ে, চালানটিতে অ্যালোমিনিয়ামের ঘোষণা দিয়ে আনা হয়েছে বিপুল পরিমান ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস কাপড়।

আর অন্যটি, রবিবার (১৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বেনাপোল স্থল বন্দরের ৩২ নং শেডের সামনে থেকে ভারতীয় একটি ট্রাকে (ডব্লিউবি-২৫ বি-৭১৩৩) একটি চালানে ব্লিচিং পাউডার ঘোষণা দিয়ে কফিসহ বিভিন্ন প্রকার অজানা রাসায়নিক জাতীয় পণ্য সহ ভারতীয় ট্রাকটি সহ পণ্য চালান দুটি আটক করে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

আর এই ঘটনায় দু’টি সিএন্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল এবং জব্দকৃত পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করে নিলাম করা হবে। এ দুটি পণ্য চালানে কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হচ্ছিল বলে সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, এলটেক অ্যালুমিনিয়াম ইন্ডাস্ট্রি গত ৯ নভেম্বর ভারত থেকে ১২ হাজার ৯০৮ কেজি অ্যালুমিনিয়াম ইনগট আমদানির ঘোষণা দেয়। যার মেনিফেস্ট নং-২৬৩২০/৩ তাং-০২/১১/২০। বিল অব এন্ট্রি নং-সি-৫৩০৭৮ তাং- ০৯/১১/২০। সিএন্ডএফ এজেন্ট মের্সাস ট্রিম ট্রেড।

পরে পণ্য চালানটি বেনাপোল শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেলের কর্মকর্তারা পরীক্ষণ করে ভারতীয় শাড়ি ২৫৪ পিস, পাঞ্জাবি ৩৭ পিস, ১৮৬ পিস থ্রিপিস, লেহেঙ্গা ৩৭ পিস, থানকাপড় ২৩ দশমিক ৬ মিটার, ফলস কাপড় ৪ পিস, খালি ব্লাড ব্যাগ ৬০ পিসসহ অন্যান্য পণ্য দেখতে পান। এ সময় বাংলাদেশি একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-১৬-৮১৬৩) জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়কি বাতিল করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বেনাপোল কাস্টমের সহকারী কমিশনার কল্যাণ মিত্র চাকমা জানান, মালামাল পরীক্ষণ শেষে এ্যাসেসমেন্টের পর বলা যাবে কত টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হচ্ছিল। এই আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট এর আগে কতটি পণ্য চালান আমদানি করেছেন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মের্সাস ট্রিম ট্রেডের স্বত্ত্বাধিকারী জিয়াউর রহমান জানান, খোলা মাঠ থেকে মাল ট্রাকে লোড করি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পণ্য, সেখানে কমার্সিয়াল পণ্য খোলা মাঠে থাকে না।ইনগটের কাগজপত্র ছাড় করে ইনগট লোড করি। আর এ ঘটনার সাথে আমার প্রতিষ্ঠান জড়িত নয়, গাড়ি চালক অন্যদের পণ্য আমাদের চালানের সাথে এনেছে। আমরা চালককে পুলিশে সোপর্দ করব।

৩৯ নং শেড ইনচার্জ শহিদুল জামান লিটন জানান, শেডের খোলা মাঠের মধ্যে থেকে ২০০ টন ইনগট ১৬ টি ট্রাক লোড হয়েছিল।খোলা মাঠে কিভাবে শাড়ি-থ্রিপিচের চালানটির কোন সুনির্দিষ্ট কাগজপত্র না থাকা স্বত্বেও ওই গাড়িতে উঠিয়ে দেওয়া হলো তা আমি জানি না।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, শুল্কফাঁকির ঘটনা দুঃখজনক। এ বন্দরে প্রায় প্রায়ই এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। এসব ঘটনায় প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। সাধারন ব্যবসায়ীদের হয়রানি বেড়ে যাচ্ছে।

বেনাপোল কাস্টমের কমিশনার মো: আজিজুর রহমান জানান, আমরা শুল্কফাঁকি প্রতিরোধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে শুল্কফাঁকির অভিযোগে আমরা অনেক প্রতিষ্ঠানের সিএন্ডএফ লাইসেন্স বাতিল করেছি। ব্লিচিং পাউডারের সাথে কফি ও অ্যালোমিনিয়ামের সাথে কাপড় আনার ঘটনায় আমরা সিএন্ডএফ এজেন্টের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল ও পণ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করেছি। এগুলো নিলাম করা হবে। সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্ট যদি সঠিক ব্যাখা দিতে না পারে তাহলে তাদের লাইসেন্স স্থায়ীভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

আরো পড়ুন:-এক পুলিশ কনস্টেবলের বিষপান করে আত্মহত্যা।

একমাত্র উপায় গণঅভ্যুত্থান: হাফিজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here