ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বিদায় নিলেন দুখী চাচাদের এসিল্যান্ড
![ভালোবাসায় সিক্ত বিদায়ী এসিল্যান্ড](https://www.shadhinkantho.com/wp-content/uploads/2021/02/Capture-12.jpg)
পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি: মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বিদায় নিলেন খুলনার পাইকগাছা উপজেলা ভূমি প্রশাসনের জনবান্ধব দুখী চাচাদের এসিল্যান্ড হিসেবে খ্যাত সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম।
মঙ্গলবার (০২ ফেব্রুয়ারী ) উপজেলা ভূমি প্রশাসন, অফিসার্স কাব, শিব্সা সাহিত্য অঙ্গন, উপজেলা কৃষি অফিস পরিবার, পাইকগাছা প্রেসকাব, কপিলমুনি প্রেসকাব, হাটার সাথী সংগঠন সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে মুহাম্মদ আরাফাতুল আলমকে বিদায়ী সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
আরও পড়ুন>>>নড়াইলে সরকারি কর্মকর্তা ও সুধীজনের সাথে বিভাগীয় কমিশনারের মতবিনিময়
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে অত্র উপজেলায় যোগদান করেন মুহাম্মদ আরাফাতুল আলম।
১ বছর ৪ মাসের কর্মকালীন সময়ে তিনি ভূমি সেবা সহজ ও মানুষের দৌর গোড়ায় পৌছে দেওয়ার মাধ্যমে উপজেলা ভূমি অফিসকে শতভাগ জনবান্ধব করেছেন। আদায় করেছেন ১ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা সর্বোচ্চ ভূমি রাজস্ব। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের উদ্যোগ শতভাগ ই-নামজারি সহ ডিজিটাল তথ্য ব্যাংক স্থাপনে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
আরও পড়ুন>>>নৌকার বিপক্ষে কাজ করায় দু’আওয়ামী লীগ নেতা বহিস্কার
তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়নার সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোকাবেলা করেছেন করোনা প্রতিরোধ কার্যক্রম। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মুজিব বর্ষের গৃহহীনদের ঘর নির্মাণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
সম্প্রতি সুষ্ঠু পৌরসভা নির্বাচনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। নানা কর্ম, পরিকল্পনা ও মানবিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ভূমি অফিসকে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। খুব সহজেই এলাকার দুস্থ, গরীব ও অসহায় মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন ভূমি প্রশাসনের তরুণ এ কর্মকর্তা। অনেকের কাছে তিনি দুখী চাচাদের এসিল্যান্ড হিসেবে পরিচিত।
আরও পড়ুন>>>আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সচল হলো বেনাপোল বন্দর
শিববাটী এলাকার আব্দুস সাত্তার গাজী জানান, আমি প্রতি সপ্তাহে ভূমি অফিসে আসি। তবে সেটি ভূমি সেবা পাওয়ার জন্য নয়। আমার দুটি চোখ অপারেশন করা এবং জটিল রোগে দীর্ঘদিন ভুগছি। যার ফলে আমি কোন কাজ করতে পারি না। আবার প্রতিদিন অনেক টাকার ঔষধ কিনতে হয়। এ জন্য প্রতি সপ্তাহে এসিল্যান্ড স্যারের সাথে দেখা করলে স্যার আমাকে চিকিৎসা সহায়তা করে থাকেন।
গদাইপুরের বৃদ্ধ দুখী সানা জানান, ২০১৯ সালের নভেম্বরের দিকে স্যারের সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়। আমার দীর্ঘদিনের ভূমি সমস্যার সমাধান দ্রুত সময়ের মধ্যে করে দেন। এই সূত্রে স্যারের সাথে আমার এক ধরণের আত্মার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অফিসে গেলেই আমাকে পিতার মত সম্মান দিয়ে নানা সহযোগিতা করেন।
অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম জানান, এসিল্যান্ড স্যারের মাধ্যমে আমি দ্রুত সময়ের মধ্যে কয়েকটি নামজারি সেবা পেয়েছি। শিব্সা সাহিত্য অঙ্গনের সভাপতি সুরাইয়া বানু ডলি জানান, এসিল্যান্ড আরাফাতুল আলম একজন সদা হাস্যোজ্জ্বল কর্মকর্তা। তিনি সকলের সাথে হেসেই কথা বলে থাকেন। তিনি একজন সাহিত্যমনা ব্যক্তিত্ব। ডিজিটাল যুগে মানুষ যখন বই পড়া ছেড়ে দিয়েছে তখন তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “বই পড়ি মন গড়ি” একটি পেইজের মাধ্যমে তরুণ সমাজকে বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করছেন।
এসিল্যান্ড আরাফাতুল আলমকে কক্সবাজারে বদলি করায় মঙ্গলবার তিনি শেষ কর্মদিবস সম্পন্ন করেন।
এ সময় জানতে চাইলে এসিল্যান্ড আরাফাতুল আলম বলেন, কর্মকালীন সময় খুব বেশি নয়, এর মধ্যে চেষ্টা করেছি ভূমিসেবাকে মানুষের দৌর গোড়ায় পৌছে দিতে। এখানকার মানুষ অনেক ভালো, অল্প সময়ের মধ্যেই এলাকার মানুষের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। সকলের সহযোগিতায় উপজেলা ভূমি অফিসকে জনবান্ধব করতে সক্ষম হয়েছি। যারা আমাকে সহযোগিতা করেছে তাদের সকলের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এলাকার মানুষ সবাই ভালো থাকুক, এটাই মহান আল্লাহর কাছে চাওয়া।