করোনা মহামারির অনিশ্চয়তায় ২৯ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী আতঙ্কে
ডেক্স রির্পোট: করোনা মহামারির কারণে দেশের বড় দুই পাবলিক পরীক্ষা (জেএসসি-জেডিসি ও এইচএসসি) বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত পরীক্ষাগুলোর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে, তা নিয়ে অভিভাবক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
বর্তমানে ২৯ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন। এটি বাতিলের দাবি তুলেছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোর্সে ২৯ লাখ ১০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সরকারি ও বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের চাকরির বয়স নিয়েও শঙ্কিত। এ কারণে বিকল্প মূল্যায়ন পদ্ধতিতে শিক্ষাজীবন এগিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারিজনিত উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তারা কোনো ধরনের লেখাপড়া করতে পারছেন না। সময় কাটছে বিভিন্নভাবে। যারা পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ করেছেন তারাও পরীক্ষা দিতে পারছেন না। ফলে অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এদিকে বয়সও পেরিয়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে তারা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এজন্য বিকল্প মূল্যায়নের মাধ্যমে পরবর্তী স্তরে উত্তীর্ণ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আরমান বলেন, কয়েক মাস আগে আমাদের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে সে পরীক্ষা নেয়া হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা দেয়ার মতো পরিস্থিতি বা প্রস্তুতি কোনোটাই নেই। কলেজের পক্ষ থেকে অনলাইন ক্লাস নেয়া হলেও সেটি পর্যাপ্ত না। এ পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেয়া হলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, তিনিসহ তার সহপাঠীরা একই ধরনের সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। এই কারণে পরীক্ষা বাতিল করে ভিন্ন পন্থায় মূল্যায়নের মাধ্যমে সার্টিফিকেট দেয়ার দাবি জানান এই শিক্ষার্থী।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরীক্ষা বাতিল করে ক্লাস মূল্যায়নের মাধ্যমে অটোপাসের দাবি জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
মিরপুরে বাংলা কলেজে পড়ুয়া অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী বিলকিস হায়দারের অভিভাবক স্বপন আলী হায়দার। তিনি বলেন, দেশের যে পরিস্থিতি তাতে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে তার সন্তানরা পড়ালেখা থেকে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, যেহেতু কলেজ বন্ধ রেখে দীর্ঘদিন ক্লাস নেয়া সম্ভব হয়নি, সে কারণে হঠাৎ করে পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিলে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়বে। শিক্ষাজীবনে তাদের বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এজন্য বিকল্প কিছু ভাবা উচিত।’
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দীন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার এক দুই সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা নেয়া যাবে। আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত দেয়া হলে সেটা ভিন্ন কথা। এই স্তরের শিক্ষায় স্বয়ংক্রিয় পাস দেয়া ঠিক হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা মার্চেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছরের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বেশিরভাগ বিষয়ের পরীক্ষা শেষ হলেও করোনা মহামারির কারণে দুই থেকে পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষা আটকে যায়। তখন থেকেই শিক্ষার্থীরা অপেক্ষায় রয়েছেন কবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, তা নিয়ে।
এরপর কেটে গেছে ৯ থেকে ১০ মাস। এই অবস্থায় অনেকের মধ্যেই উৎকণ্ঠা আর হতাশা দানা বাঁধছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, চতুর্থ বর্ষ শেষ না হলে সনদ দেয়া হবে না। আর সনদ না মিললে চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণও করা হবে না।
এদিকে স্বয়ংক্রিয় পাসের দাবিতে সম্প্রতি গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে অটোপাস দিতে বিভিন্ন কলেজের বিএ (সম্মান) ও চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষার্থীরা এই দাবি জানান।
জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাস কোর্স, দ্বিতীয় বর্ষ ও তৃতীয় বর্ষ, মাস্টার্স ফাইনাল এপ্রিলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে এসব পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়। ডিগ্রি পাস কোর্সে প্রতিটি বর্ষে ৩৪টি পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের স্বয়ংক্রিয় পাসের বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি এখনো ভাবা হচ্ছে না। আমরা অপেক্ষা করছি। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় এনে এই মুহূর্তে ফেস টু ফেস পরীক্ষাও নেয়া যাচ্ছে না। তাই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। ভ্যাকসিন এলেও সমস্যার সমাধান হবে।