১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
shadhin kanto

যশোরের মনিরামপুরে চোর সন্দেহে মাদরাসাছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা!

প্রতিনিধি :
স্বাধীন কণ্ঠ
আপডেট :
ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১
193
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 
মনিরামপুর প্রতিনিধি যশোরঃ
যশোরের মণিরামপুরে এবার মোবাইলফোন সেট চোর সন্দেহে নির্যাতনে মামুন হাসান (২২) নামে এক মাদরাসাছাত্র নিহত হয়েছে।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্হ্য কেন্দ্রে  তার মৃত্যু হয়।
এরআগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১টা থেকে তিনটা পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টা হাত-পা বেঁধে মারপিট করা হয় মামুনকে। এরপর স্থানীয় একটি মসজিদের পাশে তাকে ফেলে রাখা হয়।
বুধবার সকালে থানা থেকে পুলিশ নিয়ে তার  মা ছকিনা বেগম মামুনকে উদ্ধার করে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্হ্য কেন্দ্রে ভর্তি করেন।
মামুন হাসান, মণিরামপুর উপজেলার খোজালিপুর এলাকার মশিয়ার গাজীর ছেলে। তিনি মণিরামপুর আলিয়া মাদরাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
স্থানীয় ইউপি মেম্বর আনিছুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাতে চুরির উদ্দেশে একই গ্রামের আয়নালদের ঘরে উঠতে যায় মামুন ও আরমান নামে দুই যুবক।
তখন তারা মামুনকে ধরে মারপিট করে। রাত তিনটার দিকে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি মামুনের হাত-পা বাঁধা। কয়েকজন নারী ও শিশু ছাড়া কাউকে পাইনি। আমি বাঁধন খুলে দিয়ে মামুনের বাড়িতে খবর দিই। প্রথমে কেউ আসেনি।
আবারও তাদের খবর দেওয়া হয়। এভাবে সকাল হয়ে যায়। ততক্ষণে পুলিশ এসে পড়ে।
মেম্বরের দাবি, মামুন নিজ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে একাধিকবার বৈদ্যুতিক সেচপাম্প (মোটর), মোবাইলফোন চুরি করে। আটমাস আগে আয়নালদের একটি ফোন চুরি করে মামুন। তখন সালিশের মাধ্যমে মোবাইলফোন সেট ফেরত দেয় সে। তবে, মামুনের বিরুদ্ধে আর কোনো চুরির প্রমাণ দিতে পারেননি মেম্বর।
গতরাতে নির্যাতনের সময় তার কাছে চোরাই কোনো মালামাল পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন মেম্বর।
এদিকে, মামুনের সাথে থাকা আরমানকে মঙ্গলবার রাতে হালকা মারপিট করে ছেড়ে দেওয়া হয়। আরমানের বাড়ি কদমবাড়িয়া গ্রামে। খোজালিপুর ও কদমবাড়িয়া দুই গ্রামের অবস্থান পাশাপাশি।
মামুনের মা ছকিনা বেগম বলেন, রাত ১১টার দিকে ভাত খেয়ে বাড়ির পাশে খালা রেহেনা বেগমের দোকানে যায় ছেলে। তখন আরমান নামে তার এক বন্ধু মামুনকে ডেকে বাড়ির পাশে হরিহর নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। তাদের দুইজনকে সেখানে দেখে দল পাকিয়ে লোকজন এসে মামুনকে নদীর পানিতে ফেলে মারপিট করে। সেখান থেকে তুলে আয়নালদের বাড়িতে নিয়ে তাকে পেটায়।
খবর পেয়ে যেয়ে দেখি আমার ছেলের মরণাপন্ন। তখন ওরা বলে, আমার ছেলে মোবাইল চুরি করেছে। আমি চোরাই ফোন দেখতে চাইলে মেম্বর আমারে মারতে আসে।
আমার ছেলেরে সিরাজ, মামুন, আলমগীর, আয়নাল, আকের, ইউনুস, মুরাদ, ইসরাইল, আকতারুল, মিন্টুসহ আরো অনেকে মেরেছে।
ছকিনা বেগম আরো বলেন, রাত তিনটার দিকে যখন আমার ছেলে মারা যাচ্ছিল তখন ওরা চুরির অপবাদ দিয়ে ওর চুল কেটে দেয়। সকালে আমি থানায় এসে পুলিশ নিয়ে যাই। পরে পুলিশের সাহায্যে ওরে মণিরামপুর হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালের বেডে বিকেল তিনটার দিকে আমার ছেলে মারা যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, পূর্বের মোবাইলফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মামুনের উপর ক্ষিপ্ত ছিল আয়নালরা। সেই কারণে মঙ্গলবার রাতে তারা মামুনকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে।
কাশিমনগর ইউপি চেয়ারম্যান জিএম আহাদ আলী বলেন, রাতে আনিছুর মেম্বর আমাকে বিষয়টি জানায়। মোবাইল চুরি করতে গেলে মামুনকে জনগণ মারপিট করে বলে জেনেছি। মামুন কিছুটা উচ্ছৃঙ্খল প্রকৃতির ছিল। তবে, আমি কখনো ওর বিরুদ্ধে চুরির সালিশ করিনি।
মণিরামপুর হাসপাতালের চিকিৎসক উলফাত-আরা বলেন, বুধবার সকাল আটটা ২৫ মিনিটে মামুনকে হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমরা রোগীকে যশোর  হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলি। কিন্তু স্বজনরা নেননি। পরে বিকেল তিনটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মণিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল থেকে বলেন, আমি ঘটনাস্থলে আছি। শুনেছি, মামুনকে মারপিট করা হয়েছে। ফলে তার মৃত্যু হয়েছে। যারা মেরেছে তারা চুরির বিষয়টি বলছে। ঘটনার সাথে জড়িত দুইজনকে আটক করা হয়েছে। অধিকতর তদন্ত চলছে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মণিরামপুরে মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী সন্দেহে বোরহান কবির নামে এক কলেজছাত্রকেও  পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
গরম খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram