মৌচাকের সন্ধান পেলেই ছুটে যান শাহ আলম

মৌচাকের সন্ধান পেলেই ছুটে যান
মৌয়াল শাহ আলম।

এ রহমান, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ গ্রামবাসী জানে না কিভাবে মধু সংগ্রহ করতে হয়। এজন্য গ্রামের কোথাও মৌচাক দেখলেই খুজেন শাহ আলম (৫৫)কে। সুন্দরবনের মৌয়াল না হলেও গ্রামে গ্রামে ঘুরে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করেন তিনি। তাই সন্ধান পেলে শাহ আলম যত্নসহকারে মৌমাছির বাসা সুরক্ষিত রেখে মধু সংগ্রহ করেন।
ভেজালমুক্ত খাটি মধু’র অর্ধেক গাছ মালিককে দিয়ে বাকি অর্ধেকটা মজুরী হিসেবে নেন তিনি।

গৃহস্থালীর লোকজন নিজস্ব পদ্ধতিতে যে পরিমাণ মধু সংগ্রহ করতে পারেন শাহ আলম তার চেয়ে কয়েকগুণ মধু সংগ্রহ করেন একটি মৌচাক থেকেই। মধু সংগ্রহের বিশেষ কৌশল আয়ত্ত করেছেন পেশাদার মৌয়ালদের থেকেই। পথে চলতেই হঠাৎ করে দেখা হয় শাহ আলমের সাথে। এ প্রতিবেদকে তিনি এসব কথা জানান।

আরও পড়ুন>>>সিঁদ কেটে শিশু চুরি, পুলিশ হেফাজতে মা!

শাহআলম আরো জানান, অভাবী সংসারে জন্ম নেয়ায় শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ করতে পারে নাই। প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পরেই শারিরীক পরিশ্রমে বিভিন্ন শ্রমজীবীর কাজ করতে হয়। একপর্যায়ে বরিশালের মৌয়ালদের সাথে পরিচয় এবং সখ্যতা হয়। কোথাও মৌচাকের সন্ধান পেলেই বরিশালের মৌয়ালদের ডাকতো। এসময়ে বরিশালের মৌয়ালরা মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে সামান্য কিছু পরিমাণে টাকা দিতো। এতে আর্থিকভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ মনে হতো। তাই মৌচাক থেকে কিভাবে মধু সংগ্রহ করে তা দেখে কৌশল আয়ত্ত করতে বছর খানেক লাগে। এরপর নিজেই পেশাদার মৌয়াল হিসেবে ৭/৮বছর ধরে মধু সংগ্রহ এবং বিক্রি করছেন।

রাজাপুর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে মৌয়াল শাহ আলম’র (৫৫) পৈত্রিক বাড়ি। শ্বশুর একই গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম তালুকদার। ব্যক্তিগত জীবনে শাহ আলম ৪কন্যা সন্তানের জনক। ছোট মেয়ে মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বাকি মেয়েদের পরহস্ত করেছেন সম্মানের সাথেই। শ্বশুর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম তালুকদারের স্ত্রী ও পুত্র সন্তান না থাকায় তার সম্পদ এবং সম্পত্তির অশিংদার দু’মেয়েই। সে হিসেবে শ্বশুরের মুক্তিযোদ্ধা ভাতার অর্ধেকটা অধিকারী শাহ আলম। মধু সংগ্রহ এবং প্রাপ্ত ভাতা’র অর্থেই চলে তার সংসার।

শাহ আলম আরো জানান, প্রতিটি মৌচাক থেকে কম হলেও ৩ থেকে ৬কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়। এতে অর্ধেক পরিমাণ ভাগে পেলে প্রতিকেজি মধু ৮শ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন মৌচাকের সন্ধান পাওয়া যায় না। মাঝেমধ্যে যখন পাই তখন উপার্জন বেশ ভালোই হয়। যখন মধু সংগ্রহের কাজ না থাকে তখন শ্রম বিক্রি করি স্ত্রী-সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here