যশোরের ১৭৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অর্থ বরাদ্দ
ডেস্ক রিপোর্টঃ
নতুন করে প্রাণ পাচ্ছে ‘সততা স্টোর’। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের উদ্ভাবন মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসায় স্থাপিত এ স্টোরকে আরও গতিশীল করতে নতুন অর্থায়ন করা হচ্ছে। এ বছর যশোরের ১৭৫টি মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসায় অর্থ বরাদ্দ করেছে দুদক। স্টোর গতিশীল করার মাধ্যমে কৈশোরেই শিক্ষার্থীরা লোভ-লালসা ত্যাগ করে সততার সঙ্গে বেড়ে ওঠার ‘হাতে-কলমে’ নতুন পাঠ গ্রহণ করবে বলে দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সততা স্টোর হচ্ছে স্কুল প্রাঙ্গণে স্থাপিত বিক্রেতাবিহীন দোকান। এসব দোকানে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণের পাশাপাশি বিস্কুট, চিপস, চকলেট ইত্যাদি রাখা হয়। প্রতিটি সততা স্টোরে পণ্যের মূল্যতালিকা ও পণ্যমূল্য পরিশোধের জন্য ক্যাশ বাক্সে রাখা হয়। থাকে না শুধু বিক্রেতা। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিজেরাই ক্যাশ বাক্সে পণ্যের মূল্য পরিশোধ করবে-এটিই নিয়ম। এভাবেই শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে গ্রহণ করবে সততার প্রথম পাঠ।
দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপ-পরিচালক মো. আল-আমিন জানান, মানুষের ভালো গুণগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে সততা। পৃথিবীতে যত কঠিন কাজ আছে তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন হলো সৎ থাকা। লোভ-লালসা ত্যাগ করে সৎ থাকাটা খুবই কঠিন একটা ব্যাপার। বর্তমান যুগে এ গুণটি বিরল। একেবারে তৃণমূল পর্যায় থেকে যেন সৎ ব্যক্তিত্ব উঠে আসে, সেজন্য দুর্নীতি দমন কমিশন বের করেছে এক অভিনব কৌশল। আর সেটি ‘সততা স্টোর’।
ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নীতি, নৈতিকতা ও সততার আদর্শ গড়ে তোলার জন্য মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে দুদকের অর্থায়নে গঠন করা হয় সততা স্টোর নামের ব্যতিক্রমী এ দোকান। এর বৈশিষ্ট্য হলো তাতে পণ্যসামগ্রী থাকবে, কিন্তু কোনো বিক্রেতা বা সিসি ক্যামেরা থাকবে না। তবে দেয়ালে টানানো থাকবে প্রতিটি পণ্যের মূল্য তালিকা। কোনো কিছু কিনতে হলে স্টোরে থাকা সংশ্লিষ্ট খাতায় পণ্যের বিবরণ লিখতে হবে শিক্ষার্থীকে। এরপর পাশেই রয়েছে টাকা জমা দেওয়ার বক্স। যেকোনো শিক্ষার্থী তার পছন্দ মতো পণ্যটি কিনে বক্সে টাকা জমা রাখবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপিত এসব ‘সততা স্টোর’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরস্পর সৎ হওয়ার প্রতিযোগিতা করবে। এটা একটা পরিবর্তন ও সততার চর্চা একটি শুভ ও ইতিবাচক দিক। এভাবেই শিক্ষার্থীদের মানসিকতায় গুণগত পরিবর্তন আসবে বলে দুদক বিশ্বাস করে।
সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশন ২০১৭ সালে সর্বপ্রথম সততা স্টোর ধারণার সূচনা করে। দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় ও মাদরাসাগুলোতে সততা স্টোর স্থাপনের জন্য কমিশন প্রতি বছর অর্থায়ন করে আসছে। দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, যশোরের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে যশোর ও নড়াইল জেলার ২৪টি বিদ্যালয়ে সততা স্টোর স্থাপনের জন্য স্কুলপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের ব্যাপকভাবে সততার চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যশোর ও নড়াইল জেলার ২৫০টি বিদ্যালয়ের অনুকূলে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এরমধ্যে যশোর জেলার ১৭৫টি স্কুল ও মাদরাসা রয়েছে। যশোর সদর উপজেলায় ৩৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সাতটি উপজেলায় ২০টি করে ১৪০টি প্রতিষ্ঠানে এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থ বিতরণও শুরু হয়েছে।
যশোর শহরের কালেক্টরেট স্কুলে চালু রয়েছে সততা স্টোর। স্কুলের অধ্যক্ষ মো. মোদাচ্ছের হোসেন জানান, সরকারের কর্মপরিকল্পনায় শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধ জাগ্রত করে সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকার অনুশীলনের জন্য সততা স্টোর স্থাপন করা হয়েছে। স্কুলের সততা স্টোর থেকে শিক্ষার্থীর বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করে নিজেরাই মূল্য পরিশোধ করছে। এর মাধ্যমে ছাত্রজীবন থেকেই তারা সততার অনুশীলন করছে।
তিনি আরও জানান, দুদক থেকে দশ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়ে গতবছর সততা স্টোরটি চালু করেছিলেন। এখন সেই মূলধন বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে।
সততা স্টোর থেকে কোমলপানীয় ক্রয় করতে করতে কালেক্টরেট স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্র আব্দুল্লাহ আল সাবিত জানায়, স্টোর থেকে পণ্য কিনে নিজেরাই মূল্য পরিশোধ করছি। এর মাধ্যমে আমরা সৎ থাকার শিক্ষা গ্রহণ করছি।
স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী অহনা ঘোষ জানায়, আমরা এখান থেকে সৎভাবে জিনিস কিনছি। এখানে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকলেও সেটি না করে সৎ থাকার প্র্যাকটিস করছি। আবার এখানে ভালমানের জিনিসই রাখা হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ বা খারাপ জিনিস দিয়ে ঠকিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।
সততা স্টোর প্রসঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, যশোর জেলা সভাপতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা মনে করি, ‘সততা স্টোর’ থেকে যেসব শিক্ষার্থী পণ্য কিনছে, পণ্য কেনার পাশাপাশি তাদের দিতে হচ্ছে সততা এবং বিবেকের পরীক্ষা। যে কেউ চাইলে এখান থেকে মূল্য পরিশোধ না করে চুপিচুপি পণ্য নিয়ে চলে যেতে পারবে কিন্তু তারা সেটা করছে না। কারণ, এটি একটি সততা চর্চাকেন্দ্র। সততার পরীক্ষায় আমাদের দৃষ্টিতে ‘ছোটরা’ হারতে চায় না। আমরা জানি, একটি সৎ, সমৃদ্ধ এবং দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও দেশ গঠনে এ প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে তৈরি করা জরুরি। তাদের মধ্যে সততার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাহলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে দুর্নীতির তীব্রতা একেবারেই কমে যাবে।