যশোর পুলিশ ক্লাব মাঠে এখনও চলছে অনুমোদনহীন বেআইনি ‘মেলা’!
ডেস্ক রিপোর্ট: করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মেলা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে চলছে যশোর পুলিশ ক্লাব মাঠে অস্থায়ী বাজারের নামে মেলা। যেখানে মানা হচ্ছেনা স্বাস্থ্যবিধি। একটি চক্র ‘অস্থায়ী বাজার’ নাম দিয়ে করোনার মধ্যেও মেলা জোরদার করেছে।
সরেজমিনে খোজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ওই মেলায় ১৩২টি স্টল রয়েছে। মেলাটি গত ৪ সেপ্টেম্ববর থেকে শুরু হয়েছে। আর সামনে কতদিন চলবে তাও কেউ বলতে পারছে না। প্রথম দিকে মেলা না জমায় আয়োজকদের কপালে চিন্তার ভাজ ছিল। কিন্তু এখন প্রতিদিন ক্রেতা দর্শনার্থীর ঠাসা ভিড় জমায় তাদের সে চিন্তা কেটে গেছে। এখন তাদের পোয়াবারো। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর উপচে পড়া ভিড় ছিল। যেখানে মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি ও শারিরিক দূরত্ব। সরকারের নির্দেশনা যশোরের পুলিশ ও প্রশাসন না মানায় মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে কথিত অস্থায়ী বাজারের নামে এই মেলা চলায় বিপাকে পড়ছে যশোর শহরের স্থায়ী ব্যবসায়ীরা। সম্মিলিত ব্যবসায়ী জোট প্রেসক্লাব যশোরে আলোচনা সভার মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কিন্তু ব্যবসায়ী নেতা ও সাধারন মানুষেদের তীব্র ক্ষোভ, এসব ধোপে টিকছে না। কে শোনে কার কথা ? জেলা প্রশাসনের অনুমোদন না থাকার পরও বর্তমান পরিস্থিতিতে কিভাবে এই মেলা চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মানুষ।
জানাগেছে, গত বছর মার্চে এই পুলিশ ক্লাব মাঠে মাসব্যাপী আনন্দ মেলা শুরু হয়েছিল। এখানে সার্কাস চালানোর জন্যও প্রস্তুতি নেয়া হয়। দুরদুরান্ত থেকে সার্কাসের লোকজন আগে থেকে চলে আসে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ১২ এপ্রিল প্রশাসন মেলা বন্ধ ঘোষণা করে। এতে আয়োজকদের অনেক টাকা গচ্চা যায়। এই ক্ষতি পূষিয়ে নিতে চক্রটি নানা কৌশল অবলম্বন করে। এরপর তারা পরিকল্পনা মাফিক অস্থায়ী বাজার নাম দেয়ার ছক আঁকে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়ে ১ সেপ্টেম্বর থেকে পুলিশ ক্লাব মাঠে মেলার অস্থায়ী বাজার চালু করা হয়। কৌশল হিসেবে মেলার আয়োজকরা নাম দিয়েছে ‘অস্থায়ী বাজার’।
আয়োজকরা প্রতিটি ১০/১২ বর্গফুট স্টল মাসিক হিসেবে ৫৫ হাজার টাকা করে ভাড়া দিয়েছেন। কেউ কেউ ১০/১২ বর্গফুটের ৬টি/৫টি/২টি ঘর একসাথে নিয়ে বড় স্টল বানিয়ে নিয়েছেন। তাদের ৫৫ হাজার টাকা হিসেবেই যে কয়টি নেবেন তার মূল্য পরিশোধ করতে হবে। আবার এই মাঠে চটপটি হোটেল ব্যবসায়ীদের সাথে আলাদা মোটা অংকের হিসেব রয়েছে আয়োজকদের। তবে স্টল মালিকদের কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা অগ্রিম নেয়া হয়নি। প্রতি রাতে তাগাদা দিয়ে দৈনিক হিসেবে ১৮শ’ ৩৩ টাকা করে তুলে নেয়া হয়। এ হিসেবে মেলার শুরু থেকে প্রতি মাসে ১৩২টি স্টল থেকে ৭২ লাখ টাকা ওঠে। এই টাকা সরকারের কোন খাতে জমা হচ্ছে বা আয়কর-ভ্যাট দিচ্ছে কিনা তা দাতা বা গ্রহীতারা কেউ বলতে পাচ্ছেনা।
এদিকে যশোরের বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির নেতারা জানান, মেলার আদলে অস্থায়ী বাজার বসানোর কারণে তাদের মত স্থায়ী ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। করোনার কারণে যশোরের মার্কেটগুলো দীর্ঘদিন বন্ধ ছিলো। যখনি মার্কেটগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা হয়েছে। ঠিক তখনি মেলার নামে অস্থায়ী বাজার জোরদার করা হয়েছে। সেখানে পোশাক, কসমেটিক, কোকারিজ, গৃহসজ্জাসহ নানা ধরণের পণ্যসামগ্রীর পসরা সাজানো। ফাস্টফুডের স্টলও রয়েছে সেখানে। মানুষ সেদিকে ছুটছে। সুযোগ বুঝে নিম্নমানের মালামাল বিভিন্ন ব্যান্ডের বলে ক্রেতাদের কাছে বিক্রির মাধ্যমে প্রতারণা করছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার সকল প্রকার জনসমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই হিসেবে মেলা আয়োজন মানে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে। এই পরিস্থিতির মধ্যে মেলা না চলাই ভালো। তারপরেও কেউ যদি মেলা আয়োজন বা অনুমোদন দেন তাহলে তা হবে বেআইনি।
যশোরের করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, পুলিশ ক্লাব মাঠে অস্থায়ী বাজারের নামে মেলার চলার বিষয়ে কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি।