যশোরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কর্মবিরতি, শহরময় ময়লার ভাগাড়
জেলা প্রতিনিধি যশোর : যশোরে পাঁচ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। ফলে শহরময় ময়লারস্তুপ জমে ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে পৌরশহর।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পৌরকর্তৃপক্ষ দাবি না মানায় একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে পৌরশহরে। এতে ময়লা-আজর্বনার দুর্গন্ধে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পৌর নাগরীরকরা।
এদিকে, দাবি না মানা পর্যন্ত ময়লার স্তুপ সরাবেননা বলে জানিয়েছেন, পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মতিলাল হরিজন। অপরদিকে পৌরসভা সচিব আজমল হোসেন জানিয়েছেন, তাদের আলোচনার জন্য ডাকা হলেও সে ডাকে সাড়া দেননি পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। তবে, সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি ২০২১)পাঁচদফা দাবিতে কর্মবিরতির পাশাপাশি মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়ন।
আরও পড়ুন>>>চট্টগ্রামের( চসিক) নির্বাচন অনিয়মের মডেল : মাহবুব তালুকদার
পৌরসভার তথ্য মতে, সম্প্রতি এশিয় উন্নয়ন ব্যাংকের পরামর্শে পরিচ্ছন্ন শহর প্রকল্পের আওতায় গৃহস্থিলি বর্জ্য সংগ্রহরে জন্য স্মরণ ও সম্মৃদ্ধি নামে দু’টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সাথে সমঝোতা হয় পৌরসভার। যারা মাসিক ৫০ থেকে ১৫০ টাকার বিনিময়ে পৌরনাগরিকদের বাড়িবাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আধুনিক পদ্ধতিতে ময়লা সংগ্রহ করবে।
এরই প্রেক্ষিতে আন্দোলন শুরু করে পৌরসভার চুক্তিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মতিলাল হরিজন জানান, নগর ও গৃহস্থালী বর্জ্য সংগ্রহে এনজিওদের সাথে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল, অহরিজনদের নিয়োগ বাতিল, মজুরি বৃদ্ধি, চাকুরি স্থায়ীকরণ ও শ্রম আইন বাস্তবায়নসহ ৫দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের দাবি না মানায় তারা এ কর্মবিরতি পালন করছেন।
তিনি বলেন, মেয়র মহোদয় আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি আমাদের দাবি-দাওয়া পুরন করবেন, কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা তার কোন চিহ্ন দেখতে পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা শহরের ময়লা অপসারন বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি না মানা হবে ততক্ষণ আমরা কাজে ফিরবো না, শহরের কোন ময়লা ফেলবো না।
মতিলাল আরও বলেন, ‘মেয়র সাহেব ঢাকায় থাকায় আমাদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলার জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমরা ওভাবে মেয়র সাহেবের সাথে কথা বলতে চাচ্ছিনা। এর আগেও তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু তা তিনি বাস্তবায়ন করেননি। তিনি যদি আমাদের সাথে কথা বলতে চান তবে আমাদের ইউনিয়ন বরাবর একটা চিঠি দিয়ে আমন্ত্রন জানাক, তাহলে আমরা সেখানে সব শ্রমিক সংগঠন এবং সাংবাদিকদের নিয়ে মিটিং করতে যাবো। অন্যথায় ৫ দফা দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করবো না।
এ ব্যাপারে জানতে পৌর মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে আসন্ন পৌর নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য তিনি ঢাকায় অবস্থান করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পরে পৌরসভার সচিব আজমল হোসেনের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা লোক পাঠিয়ে তাদের আলোচনার জন্য ডেকেছি, কিন্তু তারা আমাদের কাছে না এসে তৃতীয় কোন পক্ষের উষ্কানিতে কাজ বন্ধ করে আন্দোলন করছে। মেয়র মহোদয় নির্বাচনের কাজে ঢাকায় অবস্থান করায় আমরা তাদের অপেক্ষাও করতে বলেছি, কিন্তু তারা তা শোনেনি, কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ৫দফা দাবির কথা তুলে ধরলে তিনি বলেন, তাদের একটি দাবিও যৌক্তিক নয়। বাংলাদেশের কোন পৌরসভায় মাস্টাররোল ছাড়া পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ হয়না।
তারপরও আমরা মেয়রের সাথে আলাপ করে তাদের দু’একটা দাবি বিবেচনা করার কথা জানিয়েছি। কিন্তু তারা সে পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরতে পারলো না। আর তারা এনজিওদের সাথে যে চুক্তির কথা বলছে এটা বিভ্রান্তিকর। তাদের কাজ রাস্তা পরিষ্কার করা, বাসা-বাড়ির ময়লা সংগ্রহ নয়। কিন্তু তারা অনেকটা গায়ের জোরে এটা করতে চায়।
এর ফলে পৌরনাগরিকরা হয়রানি আর অশ্বস্তির শিকার হন। এডিবির প্রেসিক্রিপশন অনুযায়ি স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে ময়লা সংগ্রহের প্রকল্প হাতে নিয়েছি। তাতে তারা বাধা দিচ্ছে।
শহরের ময়লার স্তুপের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আজমল হোসেন বলেন, ‘তারা যদি ময়লা না ফেলেন, তাহলে আমরা পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় শ্রমিক ভাড়া করে ময়লা অপসারণ করবো। এটা নিয়ে পৌর নাগরিকদের চিন্তার কোন কারন নেই। ওসি সাহেবকে জানিয়েছি, তিনি তাদের সাথে বসে আলোচনা করে আমাদের জানালে আমরা পরবর্তি পদক্ষেপ নেবো।
দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি মতিলাল হরিজন, সাধারণ সম্পাদক কমল বিশ্বাস, হরিজন ঐক্য পরিষেদের যশোর জেলা সভাপতি রাজেন বিশ্বাস, সহ-সভপতি মন্টু হরিজন, আনন্দ দাস, সাধারণ সম্পাদক কমল বিশ্বাস, বিডিআর পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক বিষ্টু কুমার দাস, গোরাপাড়া আঞ্চলিক নেতা বাবলু দাস, ধর্মতলা আঞ্চলিক নেতা শ্রীরাম প্রমুখ।