যশোর শিক্ষাবোর্ডে মানবিক চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন ড. মোল্লা আমীর হোসেন

যশোর-শিক্ষাবোর্ডে-মানবিক
যশোর শিক্ষাবোর্ডে মানবিক চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন ড. মোল্লা আমীর হোসেন

যশোর প্রতিনিধি: মানবসেবায় একের পর অন্যন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই তিনি শিক্ষাবোর্ডের সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে সেবা দিয়ে চলেছেন।

তাঁর কাছে সমস্যার কথা বলতে পারলে তিনি কোনো কালক্ষেপণ না করে তাৎক্ষণিক সমাধান করে দেন। নিজে প্রতিটি শাখায় বলে দিয়ে দ্রুত কার্য সাধন করে দেন। এতে সেবাগ্রহীতারা খুবই খুশি। কেউ আর এখন কোনো হয়রানীর অভিযোগ করে না। শতভাগ হয়রানীমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত সেবা পাওয়া যাচ্ছে।

চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রায় এক বছরের মধ্যেই তিনি যশোর শিক্ষাবোর্ডের সব স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কাছে মানবিক চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন।

মানবিক সেবা পেয়ে চেয়ারম্যানের স্নেহাশীষ ব্যবহারে কেঁদে দিলেন সাতক্ষীরার ছাত্রী নওশিন আফরিন সাবিহা। তিনি জানান, সাতক্ষীরা পুলিশ লাইন স্কুল থেকে ২০০৯ এস এস সি পাস করেছেন তিনি । কিন্তু ভুলবশত তার এসএসসির সনদপত্রসহ সকল কাগজপত্রে জেন্ডার পুরুষ লেখা হয়েছে। সেই কারণে তিনি ২০২০ সালের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে আবেদন করতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছিলেন। তখন আবেদনের সময় শেষ হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি, তিনি বিষয়টি চেয়ারম্যান স্যারকে জানালে স্যার দ্রুত সমাধান করে দেন।

২৩ নভেম্বর রাতে বোর্ড অনলাইনে নাম সংশোধনী সফটওয়্যারে আবেদন করার পর ওইদিন সন্ধ্যায় তিনি মোবাইলে ফোনে বিষয়টি চেয়ারম্যান স্যারকে জানান। ২৪ নভেম্বর আবেদনের শেষ দিন ছিল। সন্ধ্যা ৭টায় চেয়ারম্যান স্যার যাচ্ছিলেন বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে সরকারি কাজে। চেয়্যারমান স্যার তাৎক্ষণিক ভাবে বোর্ডের প্রকৌশলী মোজাম্মেল ও মুরাদ সাহেবকে ফোন করে দ্রুত অনলাইনে সংশোধনে করে দেয়ার নির্দেশ দেন। তখনই তারা বাসা থেকে অফিসে চলে আসেন এবং কম্পিউটার ওপেন করে ডাটা সংশোধন করে দেন। রাত ৯ টা ৫ মিনিটে নওশিন অনলাইনে চেক করে দেখে তার ভুল সংশোধন হয়ে গেছে। তখনই চেয়ারম্যানকে স্যারকে রিং করে ধন্যবাদ জানান। ।চেয়্যারম্যান স্যার তাকে প্রাণখুলে দোয়া করেন ও সাফল্য কামনা করেন।

যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. আমীর হোসেন স্যার মানুষ না , যেন ফেরেশতা তূল্য। স্যারের জন্য প্রাণখুলে দোয়া করেছেন, স্যার যেন দীর্ঘজীবী হন। আল্লাহ স্যারকে দেশ ও জাতির আরো সেবা করার তৌফিক দান করেন। নওশিন নিজে এ রিপোর্টারের সাথে এভাবে অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

আর এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন বাগেরহাটের এক অসহায় ছাত্রী স্বর্ণা আক্তারের বয়স সংমশোধন করে দিয়ে।

স্বর্ণা জানান, মোল্লা আমীর হোসেন স্যারের মত মানুষ পৃথিবীতে আছেন বলেই পৃথিবী এখনও ভাল আছে, আমাদের মতো অসহায় মানুষরা সেবা পাচ্ছি। মানবিকতা টিকে আছে। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস টিকে আছে। স্বর্ণা জানান, তার জেএসসি ও এসএসসিতে জন্ম তারিখ ভুল ছিল অর্থাৎ জন্মসনদ ও পিইসি এর সনদের সাথে মিল ছিল না। তার বাবা বেঁচে নেই। মা অসুস্থ। কোন ভাইও নেই। আয় রোজগার বলতে তেমন কিছুই নেই। তিনি নিজেও দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তিনবার অপারেশন হয়েছে। তাই সংশোধনের জন্য যথাসময় পারেননি। প্রধান শিক্ষককে বারবার বলেও সহযোগিতা পাননি। ফলে নিজেই বোর্ডে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু যাবার খরচের টাকা কাছে নেই। তাই নিজের কানের দুল জোড়া বন্ধক রেখে চাচাতো বোনকে সাথে নিয়ে তিনি শিক্ষাবোর্ডে যান। শিক্ষাবোর্ডে অনেক ঘোরাঘুরি করেও কারো সহযোগিতা পেলেন না। তখন কাঁদছিলেন। এসময় এক আনসার সদস্য চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করার পরামর্শ দেন। সাহস করে চেয়ারম্যানের দফতরে যেয়ে দেখা করে বিষয়টি জানান। চেয়ারম্যান স্যার তার সব খরচের টাকা নিজের পকেট থেকে দিয়ে দেন । এবং জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য ম্যানুয়াল আবেদন করতে বলেন। একই সাথে একাডেমিক শাখার একজন কর্মচারিকে দায়িত্ব দেন আবেদনের কাজ সম্পন্ন করে দিতে। পরবর্তীতে বয়স সংশোধন কমিটিতে বিষয়টি উত্থাপিত হলে সদস্যগণ অনুমোদন করতে অপারগতা প্রকাশ করলে চেয়ারম্যান বিষয়টি বোর্ড কমিটির সভায় উত্থাপন করে পাস করিয়ে নেন। অনুমোদনের খবর পেয়ে স্বর্ণা আক্তার খুশিতে অঝোরে কেঁদেছেন ও স্যারের জন্য দোয়া করেছেন। স্বর্ণা অসুস্থ্য মাও কেঁদেছেন ও দোয়া করেছেন বলে জানান স্বর্ণা আক্তার।

চৌগাছার এবিসিডি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান স্যারের কাছে যেয়ে কেউ নিরাশ হয়ে ফেরে না। তিনি সবার শতভাগ সেবা নিশ্চিত করে দেন। তার অনেক ঘটনাই হয়তো প্রকাশ পায় না। এ রকম আরো শতশত সেবা নীরবে তিনি দিয়ে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন:
মুজিববর্ষ উপলক্ষে পরগনাহী দৌলতপুর মাদ্রাসায় মাস্ক, কোরআন, গাছ বিতরণ

বড়লেখা পৌর নির্বাচনে নৌকার মাঝি কামরান চৌধুরী, ধানের শীষে আনোয়ারুল

এস এম হাবিবুর রহমান পৌর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোজ্জামেল হক বলেন, দীর্ঘদিন পর যশোর শিক্ষাবোর্ড একজন বিশাল বড় মনের মানুষকে চেয়ারম্যান হিসেবে পেয়েছে। স্যারের গুণের কথা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। স্যার আগামী তিন বছর ধরে এভাবে কাজ করতে পারলে ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে যশোর শিক্ষাবোর্ডকে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পারবেন।

শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মোল্লা আমীর হোসেন বলেন, যশোর শিক্ষাবোর্ডে কোন শিক্ষার্থী সেবা বঞ্চিত হয়ে অসহায় অবস্থায় থাকবে এটা মেনে নেয়া যায় না। আমি যতদিন দায়িত্বে থাকবো সার্বক্ষণিক সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করে যাববো। সব সময় শিক্ষক-শিক্ষর্থীর পাশে আছি। শিক্ষা বোর্ড শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বোর্ড, আমি সেবকমাত্র। এটাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমি নিজেকে উৎস্বর্গ করতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুন:
নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির 
গ্যালারিতে অস্ট্রেলিয়ান তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব ভারতীয় তরুণের, অতঃপর…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here