যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কানাডার পাল্টা শুল্কারোপ

স্বাধীন কন্ঠ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা শুল্ক ঘোষণা করেছে কানাডা। এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা হলো। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা মার্কিন পণ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে। এই শুল্কের আওতায় বিয়ার, ওয়াইন, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, ক্রীড়া সরঞ্জামসহ ১৫৫ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার (১০৬.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের মার্কিন পণ্য রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তিনি অবৈধ অভিবাসন ও মাদক পাচারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই সিদ্ধান্ত নেন। ট্রুডো বলেছেন, তিনি কানাডিয়ানদের পক্ষে দাঁড়াতে পিছপা হবেন না। তবে এই সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের মানুষের ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন।
শনিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রুডো বলেন, আমরা এখানে আসতে চাইনি, আমরা এটি চাইনি। ৩০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে এবং আরও ১২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর শুল্ক ২১ দিন পর কার্যকর করা হবে। যাতে করে কানাডার কোম্পানিগুলো প্রস্তুতি নিতে পারে।
ট্রুডোর এই পদক্ষেপের নিশানায় রয়েছে মার্কিন বিয়ার, ওয়াইন, বুরবন, ফল ও ফলের রস, শাকসবজি, সুগন্ধি, পোশাক, জুতা, গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি, ক্রীড়া সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র। এ ছাড়া কাঠ ও প্লাস্টিকের ওপরও শুল্ক আরোপ করা হবে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও প্রক্রিয়াকরণ সম্পর্কিত অ-শুল্ক পদক্ষেপও বিবেচনা করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক এবং কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পাল্টা শুল্কের ফলে ভোক্তাদের জন্য বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে পারে। শুল্ক হলো একটি দেশে পণ্য প্রবেশের সময় তার মূল্যের সমানুপাতিক হারে আরোপিত অভ্যন্তরীণ কর।
যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির আশঙ্কা অনেক বিশ্ব নেতাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কারণ এটি বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পণ্য বিক্রি করা কোম্পানিগুলোর জন্য ব্যয়বহুল করে তুলবে। উইলসন সেন্টারের কানাডা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ক্রিস্টোফার স্যান্ডস বিবিসিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক হলো পারস্পরিক ধ্বংস নিশ্চিত এবং এটি মানুষের জীবনে খুব দ্রুত প্রভাব ফেলবে।
তিনি বলেন, মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট সম্প্রতি প্রস্তাবিত সামঞ্জস্যের সময় থাকবে না। এটি একটি বিশাল আঘাত, যা খুব দ্রুত অনেক মানুষের জীবনকে কঠিন করে তুলবে।
কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি গভীরভাবে একীভূত। প্রতিদিন আনুমানিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের উৎপাদিত পণ্য সীমান্ত অতিক্রম করে। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিদেশি অপরিশোধিত তেল সরবরাহকারী কানাডা। সর্বশেষ সরকারি বাণিজ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত তেলের ৬১ শতাংশ কানাডা থেকে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিকৃত কানাডিয়ান পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলেও জ্বালানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। শনিবার হোয়াইট হাউজ বলেছে, শুল্ক বাস্তবায়ন যুক্তরাষ্ট্রে বিষাক্ত মাদকের প্রবাহ বন্ধ করার জন্য চীন, মেক্সিকো এবং কানাডাকে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় জবাবদিহি করার জন্য প্রয়োজনীয়।
তবে ট্রুডো সীমান্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ফেন্টানিলের ১ শতাংশেরও কম কানাডা থেকে আসে। তিনি আরও বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের ১ শতাংশেরও কম সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে।
ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, তার শুল্কের বিরুদ্ধে দেশগুলো পাল্টা পদক্ষেপ নিলে তিনি শুল্ক আরও বাড়াতে প্রস্তুত রয়েছেন। শুল্ক ঘোষণার আগে কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজের সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ট্রুডো শনিবার বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেননি। কানাডা ও ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান মার্ক কার্নি বিবিসি নিউজনাইটকে শুক্রবার বলেছেন, শুল্ক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে।
কানাডার লিবারেল পার্টির নেতা হিসেবে ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌড়ে থাকা কার্নি বলেছেন, এটি বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুনাম ক্ষুণ্ন করবে।