আদালতে ধাক্কা খেলো লাভ জিহাদ
ডেস্ক রির্পোট: ভারতের বিহার বিধানসভা ভোটের সময় লাভ জিহাদ নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি এবং হরিয়ানা, কর্ণাটকের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা লাভ জিহাদ রুখতে আইন করার কথা বলেছিলেন।
ভারতে সেই লাভ জিহাদ তত্ত্বে আঘাত এলো দুই জায়গা থেকে। এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানিয়ে দিয়েছে, দুই জন প্রাপ্তবয়স্ক তাঁদের পছন্দসই জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পারবেন। সেখানে ধর্ম দেখা হবে না।
দেখা হবে, দুজনেই একসঙ্গে জীবন কাটাতে রাজি কি না। আর কানপুরের পুলিশ গত দুই বছরে হওয়া দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিয়ের ঘটনার তদন্ত করে এবং খতিয়ে দেখে জানালো, এই সব ঘটনার সঙ্গে বিদেশি অর্থের কোনো যোগ নেই, চক্রান্তও হয়নি।
যে সব ক্ষেত্রে এই বিয়ে আইন অনুযায়ী হয়নি, সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছে তারা।
বিচারপতি পঙ্কজ নাকভি ও বিচারপতি বিবেক আগরওয়ালের রায় হলো, দুই জন প্রাপ্তবয়স্ক চাইলে একসঙ্গে থাকতে পারেন। আইন অনুসারে পারেন। তাঁরা একই লিঙ্গের হতে পারেন অথবা বিপরীত লিঙ্গের। কোনো ব্যক্তি বা পরিবার তাঁদের জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। সরকারও নয়।
পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও কুশীনগরের সালামতকে বিয়ে করেছিলেন প্রিয়ঙ্কা খারওয়ার।
বিয়ের পরে তাঁর নাম হয় আলিয়া। প্রিয়ঙ্কা বা আলিয়ার বাবা পুলিশে অভিযোগ করেন,
তাঁর মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে। তখন হাইকোর্টে মামলা করে সালামত।
হাইকোর্টের রায় হলো, সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদ অনুসারে দুই প্রাপ্তবয়স্কের নিজের ইচ্ছেয় একসঙ্গে থাকার অধিকার আছে। সেখানে কারো হস্তক্ষেপ সম্ভব নয়।
প্রিয়ঙ্কার বাবার অভিযোগ ছিল, জোর করে ধর্ম পরিবর্তন করানো হয়েছে তাঁর মেয়ের। বিয়ের জন্য ধর্ম পরিবর্তন করানো যায় না। কিন্তু বিচারপতিরা বলেন, তাঁরা এখানে কে হিন্দু কে মুসলিম তা দেখবেন না। তাঁরা দেখবেন, দুই জনের বিয়ের বয়স হয়েছে কি না। আর তাঁরা স্বেচ্ছায় একসঙ্গে আছেন কি না। বিচারপতিরা জানিয়েছেন, প্রিয়ঙ্কা বা আলিয়া চাইলে বাবা ও পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন এবং তাঁদের আশা, পরিবারের সঙ্গে শ্রদ্ধাশীল হয়ে উপযুক্ত ব্যবহার করবেন তিনি।
অন্যদিকে কানপুরের পুলিশ জানিয়েছে, গত দুই বছরে সেখানে ভিন্নধর্মে বিয়ের ১৪টি ঘটনা ঘটেছিল। প্রতিটি তারা তদন্ত করে দেখেছে। তিনটি ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক ছিল এবং নিজেদের ইচ্ছেয় বিয়ে করেছে। এগারোটি ক্ষেত্রে আইন ভাঙা হয়েছে। তিনটি ক্ষেত্রে ছেলে নিজের নাম বদলে দিয়েছিল। দেখাতে চেয়েছিল সে মেয়েটির ধর্মের। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাকি ক্ষেত্রে মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি বলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কানপুরের ইন্সপেক্টর জেনারেল মোহিত আগরওয়াল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ''এখনো পর্যন্ত বিশেষ তদন্তকারী দল চক্রান্তের কোনো হদিশ পায়নি। সংগঠিতভাবে এরকম কাজ করা হয়েছে, এমন কথাও বলা যাচ্ছে না।
এর পিছনে বিদেশি অর্থ আছে, তার প্রমাণও মেলেনি।''
তথ্যসুত্র: ডয়চে ভেলে বাংলা এনডিটিভি, নিউজ ১৮