সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে হত্যাচেষ্টা মামলার অভিযোগ গঠন
ডেক্স রিপোর্ট: সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীকে সাবেক রেলপথ মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি করে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
আজ (২২ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহারিয়ার কবিরের আদালতে বহুল আলোচিত এই মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়।
একই আদালতে বৃহস্পতিবার সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যার ঘটনায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলারও চার্জ গঠন করা হয়। এই দুটি মামলায়ই আসামি করা হয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে।
সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট সরওয়ার আহমদ আবদাল বলেন, সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ সহ ১৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর শাহ এএমএস কিবরিয়ার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় বিস্ফোরক মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আজ থেকে এই মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলো।
তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার কিবরিয়া হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত থাকলেও সাক্ষীরা হাজির না হওয়ায় এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে গেছে। এই মামলাও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে চলমান রয়েছে।
এর আগে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয় কিবরিয়া হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অন্য আসামিদের সিলেটের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আর জামিনে থাকা সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছ আদালতে হাজির হন। এ মামলার মোট ১১ জন আসামি বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ২১ জুন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সুনামগঞ্জের দিরাই বাজারে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। সমাবেশে তখন প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ভয়াবহ ওই গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ ২৯ জন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় এক যুবলীগ কর্মী নিহত হন।
এ ঘটনায় এসআই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে দিরাই থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলা করেন। পরে অধিকতর তদন্তে এ মামলায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ, হুজির শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ একাধিক জঙ্গি নেতাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেয় সিআইডি।
এদিকে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা শেষে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের গ্রেনেড হামলায় নিহত হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া, তার ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদাসহ পাঁচজন। এ ঘটনায় আহত হন ৭০ জন।
এ ঘটনায় হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ খান বাদী হয়ে সদর থানায় হত্যা এবং বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন। হত্যা মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়। পরে ২০১১ সালে অধিকতর তদন্তে আরও ২৬ জনকে আসামি করা হয়।
এরপর তৃতীয় দফার তদন্তে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছসহ প্রায় ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন।