ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে কাঁদলেন রায়হানের মা

ডেক্স রির্পোট:  সিলেট নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান উদ্দিন (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন এবং স্থানীয়রা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার (১২ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, ৭২ ঘণ্টার ভেতরে রায়হানের ‘হত্যাকারীদের’ শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

মানববন্ধনে নিহত রায়হানের মা-বোনসহ দুই শতাধিক লোক উপস্থিত হয়ে রায়হান ‘হত্যার’ প্রতিবাদ করেন এবং ‘হত্যাকারীদের’ সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।

ছেলের হত্যাকারী পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দাবি করেন নিহত রায়হানের মা সালমা বেগম দুই হাত আকাশের দিকে তুলে হাউ-মাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অকালে সন্তান হারানো মায়ের আর্তনাদে তখন এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।

এ সময় তিনি আহাজারি করে বলেন, আমার ছেলে ছিনতাইকারী বা অপরাধী নয়। তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে বিনা দোষে রাতভর নির্যাতন করে হত্যা করেছে। পুলিশ মানুষের রক্ষক, কিন্তু সেই পুলিশই আজ আমার ছেলেকে হত্যা করল। ঘুষের টাকার জন্য পুলিশ আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। রায়হানের দুই মাস ২১ দিনের একমাত্র কন্যা সন্তান রয়েছে। সে বড় হলে তাকে আমি কী সান্ত্বনা দিবো, আর আমি কীভাবে এ শোক সহ্য করবো।

এদিকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় ওই ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তিন পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এর আগে রোববার (১১ অক্টোবর) সকালে রায়হান উদ্দিন মারা যান। তিনি সিলেট নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন রায়হান।

বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান উদ্দিনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে নিহতের পরিবার। এ ঘটনায় রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।

ঘটনার প্রথম দিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিনতাইকালে নগরের কাস্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হানকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগে রোববার বিকেলে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কে বা কারা রায়হানকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে হত্যা করেছে। এজাহারে রায়হান বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে যে মুঠোফোন নম্বর দিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, সেই নম্বরটিও উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, প্রতিদিনের মতো গত শনিবার (১০ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে রায়হান আহমদ নিজ কর্মস্থল নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটের ডা. গোলাম কিবরিয়া ও ডা. শান্তা রানীর চেম্বারে যান। পরদিন রোববার (১১ অক্টোবর) ভোর ৪টা ৩৩ মিনিটে ০১৭৮৩৫৬১১১১ মোবাইল নম্বর থেকে রায়হানের মা সালমা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল দিলে সেটি রিসিভ করেন রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ।

এ সময় রায়হান আর্তনাদ করে বলেন, তিনি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আছেন। তাকে বাঁচাতে দ্রুত টাকা নিয়ে বন্দর ফাঁড়িতে যেতে বলেন রায়হান। এ কথা শুনে রায়হানের চাচা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে রায়হান কোথায় জানতে চাইলে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য বলেন, সে ঘুমিয়ে গেছে। আর যে পুলিশ সদস্য রায়হানকে ধরে নিয়ে এসেছেন তিনিও চলে গেছেন। এ সময় হাবিবুল্লাহকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁড়িতে আসার কথা বলেন ওই পুলিশ সদস্য।

পুলিশের কথামতো হাবিুল্লাহ আবারও সকাল পৌনে ১০টার দিকে ফাঁড়িতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য জানান, রায়হান অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপর রায়হানের চাচা ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রায়হানকে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান। এ সময় হাবিবুল্লাহ পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনকে খবর দিলে তারা গিয়ে ওসমানীর মর্গে রায়হানের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ দেখতে পান।

এজাহারে মামলার বাদী উল্লেখ করেন, আমার স্বামীকে কে বা কারা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে পুলিশি হেফাজতে রেখে হাত-পায়ে আঘাত করে এবং হাতের নখ উপড়ে ফেলে। পুলিশ ফাঁড়িতে রাতভর নির্যাতনের ফলে আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here