স্বপ্নদ্রষ্টার স্বপ্নিল চোখে, স্বপ্নময় কন্ঠের জাদুতে সৃষ্টি হয়েছে প্রিয় বাংলাদেশ
বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ রক্তঝরা ইতিহাস। এক সাগর রক্ত ও লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ স্বাধীনতা।
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট নামে এদেশের নিরীহ মানুষের উপর গণহত্যা চালায়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে।
স্বাধীনতা অর্জনে আমাদের ৩০ লাখ মানুষকে শহিদ হতে হয়েছে, ২ লাখ মা-বোনকে ইজ্জত দিতে হয়েছে। সব কালো স্বপ্ন মুছে ফেলে, হায়নার কবল থেকে ছিন্ন করে তুলে আনতে বিজয়।
২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এক অপরাজেয় প্রাচীর থেকে ভেসে আসা দুর্বার সঙ্গীতের মতন 'আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।'
এক নতুন মানচিত্র সৃষ্টি হয় পৃথিবীর বুকে।বাংলাদেশের নবজন্ম হলো।
৫৩টি বছর পেরিয়ে গেছে আমাদের স্বাধীনতার। আমরা হলাম নব প্রজন্ম,আমরা এখন স্বাধীন দেশের নাগরিক।
এই নতুন প্রজন্ম কি জানে আসলে স্বাধীনতার অর্থ কি?
এই নব প্রজন্ম স্বাধীনতা শব্দটির মানে ভুলতে বসেছে। নব প্রজন্মের কাছে "স্বাধীনতা" এখন গল্প, পাঠ্য বই, ইতিহাস ও পত্রিকা এবং প্রতি বছর এই দিনে স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে, ছবি তুলে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মধ্যেই আবদ্ধ।
কিন্তু স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ কি বহন করে এটা?
স্বাধীনতা একজন মানুষের জন্মগত অধিকার। স্বাধীনতা বাংলা অক্ষরে লিখিত কোনো শব্দ না। স্বাধীনতা হল বাংলাদেশ নামক দেশটির নব সূচনার জন্য হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, বৈষম্য অনাচার দূরীকরণে শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, ধর্ষিতা নারীসহ, জনসাধারণ ও কৃষকের রক্ত ও ঘামঝরা শ্রমের সংমিশ্রণ।
একাত্তরের ২৬শে মার্চ দিনটি বাঙালির ২৩ বছরের শোষণ দমনের পথে শেষের শুরু। যে অধ্যায়ে লেগে আছে দাঁত কামড়ানো ব্যাথা,যা ছিনিয়ে আনে মুক্তি। যা একটি জাতির জীবনযাত্রাকেই বদলে দেয়।
যেই স্বপ্নদ্রষ্টার স্বপ্নিল চোখে, স্বপ্নময় কন্ঠের জাদুতে সৃষ্টি হয়েছে প্রিয় বাংলাদেশ, সেই স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের" এক কালজয়ী উক্তি আছে,
'স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের মানুষ যারা আমার যুবক শ্রেণী আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়।'
এটিই সেই স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা
"বঙ্গবন্ধুর" এই উক্তি।
আমি একজন স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক।
আমার চোখে স্বাধীনতা মানে শালীনতার সাথে নারীদের এগিয়ে চলা। নারীদের নিরাপদ এক রাষ্ট্রের নিশ্চয়তা প্রদান করা। স্বাধীনতা মানে, শ্রম ও সততার মিশেলে দেশ ও দশের সেবা করা।
কিন্তু বর্তমানের বাস্তবতা আমাদের শোনায় ভিন্ন এক স্বাধীনতার গল্প। যে গল্পে এখনো আমরা দুর্নীতির বিষাক্ত ছোবলে জর্জরিত হয়ে থাকি প্রতি মূহুর্তে।
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজীর কালো থাবা কেড়ে নিয়েছে আমাদের ব্যাক্তি স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা।
তাহলে স্বাধীনতা কি শুধু উদযাপন কিংবা গল্পের পাঠ্য হিসেবেই রয়ে যাবে?
আমরা কি স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতার তৃপ্তি পাবো না? স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টার স্বপ্ন কি পূরণ করতে পারবো না আমরা?
আমরা হলাম নব প্রজন্ম, এই তারুণ্যের হাতেই অর্পিত স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম। যে যেখানে আছি, যার যার জায়গা থেকে মানুষের জন্য কাজ করে যাও তরুণদল।
লাল সবুজের বুকে আমাদের স্বপ্ন দ্রষ্টার স্বপ্ন তোমাদেরই ছড়িয়ে দিতে হবে।
আজকের এই দূষিত বাস্তবতার দায় আমাদের সবার।এ দায় কারোর একার নয়।প্রকৃত দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
আমাদের স্বাধীনতা হোক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্বাধীনতা, তারুণ্যের হাত ধরে আসুক নতুন সুখী, সমৃদ্ধিশালী এক বাংলাদেশ।
তাহলেই স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদদের স্বপ্ন পূরণ হবে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই আমাদেরকে দূর্নীতি, সন্ত্রাস, রাহাজানির হাত থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশ তখন সত্যিকারের সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে।
তাই তরুণ সমাজ আসো সবাই মিলে গড়ে তুলি এক নতুন এক রঙিন দেশ,বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ।
লেখিকা: জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তি।