অবহেলায় একুশে পদকপ্রাপ্ত কবিয়াল বিজয় সরকারের স্মৃতি
রিপন বিশ্বাস, নড়াইলঃ নড়াইলে একুশে পদকপ্রাপ্ত বিজয় সরকারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হচ্ছে। মঞ্চ, গ্রীন রুম চত্বর এখন গরু ও মাছের খাবার জ্বালানি ঘর হিসেবে ব্যবহৃত।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নড়াইল সদরের ডুমদি গ্রামে বিজয় মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। এখানে কবি যে ঘরে বসবাস করতেন সেখানে একটি টিনসেড ঘরও রয়েছে। পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হচ্ছে কবির ব্যবহৃত খাট, পাদুকা, পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র।
আরও পড়ুন>>>সড়ক দুর্ঘটনায় সরকারি কলেজ শিক্ষক সহ নিহত ২
কবির বসতভিটায় কবি পরিবারের কেউ না থাকায় গ্রামবাসিদের সহায়তায় এখানে ৬ বছর আগে ডুমদি গ্রামের বাসিন্দা বিমল সিকদার নামে এক ব্যক্তি দেখাশোনা করলেও সে নিজেই মঞ্চ ও গ্রীন রুমে গরু ও মাছের খাবার রেখে ওই চত্বর নোংরা করছে।
অবহেলায় বিজয় সরকারের স্মৃতি
একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি সম্রাট বিজয় সরকারের বাড়ি নড়াইল সদরের ডুমদি গ্রামে অবস্থিত। বিজয় সরকার মঞ্চ, গ্রীন রুম এবং চত্বর এখন গরু ও মাছের খাবার এবং জ্বালানি ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকলেও বিলের অর্থ পরিশোধের অভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। টয়লেট ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে পোকা মাকড়ের মলসহ নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে। ৩৫ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি বিজয় সরকারের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। এখানে বিজয় স্মৃতিসংগ্রহশালা নির্মানের জন্য এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও তা পূরণ হয়নি।
কবি সম্রাটের বসতভিটা সদর উপজেলার বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ডুমদি গ্রামে যেতে হলে পেরুতে হবে এক কিলো
মিটার রাস্তা যা এখনও পাকা হয়নি।
আরও পড়ুন>>>পিরোজপুরের কাউখালীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এক কিশোর নিহত
নড়াইল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চিত্রাংকন বিভাগের শিক্ষক নিখিল চন্দ্র দাস জানান, কিছু দিন আগে বিজয় সরকারের বাড়ি গিয়েছিলাম। দেখলাম কবি মঞ্চ, গ্রীন রুম এবং ওই এলাকা ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। নৃত্যের শিক্ষক বিকাশ সিকদার জানান, গত শুক্রবার (৯জুলাই) বিজয় সরকারের বাড়িতে গিয়ে দেখি মঞ্চের ওপর বসে স্থানীয় এক ব্যক্তি গরুর খড় কাটছে। গ্রীন রুমে মাছের খাবার এবং জ্বালানী রাখা হয়েছে।
বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ভবরঞ্জন রায় বলেন, গত ১৫ দিন আগেও বিজয় মঞ্চ ও গ্রীন রুম থেকে গরু ও মাছের খাবারসহ ওই এলাকা পরিস্কার করার ব্যবস্থা করেছিলাম। পরে আবার যা তাই। দুর-দুরান্ত থেকে প্রতিদিন এক থেকে দেড়’শো বিজয় ভক্ত তাঁর বাড়ি দেখতে আসেন। কিন্তু বর্ষাকালে বিপাকে পড়েন দর্শনার্থীরা।
প্রায় এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকাকরণের জন্য বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দেন-দরবার করা হয়েছে। সর্বশেষ কয়েক মাস আগে এলজিইডির মাধ্যমে এমপির বিশেষ প্রকল্পের মধ্যে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নড়াইল-২ আসনের সাবেক এমপি বিজয় সংগ্রহশালা নির্মানের জন্য ১৬ কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছিলেন। তারপর আর কি হয়েছে তা বলতে পারবো না।
এ ব্যাপারে নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, বিজয় মঞ্চ, গ্রীন রুম এবং ওই চত্বরের বেহাল অবস্থা সম্পর্কে আমার জানা নেই। তবে আমি খোঁজ নিয়ে দ্রত এসব অপসারণের ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়া ১ কিঃমিঃ রাস্তা পাকাকরণের বিষয়ে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলবো এবং বিজয় সংগ্রহশালা নির্মানের প্রস্তাবনা কোন পর্যায়ে রয়েছে সে ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছি।
অবহেলায় বিজয় সরকারের স্মৃতি
পোষা পাখি উড়ে যাবে স্বজনী একদিন ভাবি নাই মনে, ‘তুমি জাননা রে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা, ‘এ পৃথিবী যেমন আছে তেমনই ঠিক রবে, সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে, ‘নবী নামের নৌকা গড় আল্লা নামের পাল খাটাও বিসমিল্লাহ বলিয়া মোমিন কুলের তরী খুলে দাও, ‘জানিতে চাই দয়াল তোমার আসল নামটা কি’ এ রকম অসংখ্য গানের স্রষ্টা বাংলার কবিগানের অন্যতম প্রধান পুরুষ চারণ কবি বিজয় সরকার একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। এক হাজার ৮০০ বেশি গান লিখেছেন তিনি। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন। অসাপ্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা কবিয়াল বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রয়ারি নড়াইল সদরের নিভৃতপল্লী ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বার্ধ্যকজনিত কারণে ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর ভারতে পরলোক গমন করেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কেউটিয়া গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়।