২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
shadhin kanto

আজ মহান স্বাধীনতা দিবস

প্রতিনিধি :
স্বাধীন কন্ঠ
আপডেট :
মার্চ ২৬, ২০২৪
32
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

স্টাফ রিপোর্টার : আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। হাজার বছরের সংগ্রামমুখর বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করে।

স্বাধীন বাংলাদেশ এবার ৫৪ বছরে পা দিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর দীর্ঘ ১৯০ বছরে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও নির্যাতনের হাত থেকে ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ মুক্তি পেলেও পূর্ব বাংলার জনগণের ওপর নতুন করে জেঁকে বসে সামরিক জান্তা। ধর্মের ভিত্তিতে ভারতকে ভাগ করে পাকিস্তান নামের যে রাষ্ট্রের জন্ম হয়, পূর্ব বাংলা থেকে ছিল তার হাজার মাইলের ভৌগলিক বিছিন্নতা। শুধু তাই নয়, ভাষা-সংস্কৃতির কোনো মিল ছিল না বাঙালিদের সঙ্গে পাকিস্তানিদের। তা সত্ত্বেও ধর্মের উন্মাদনাকে পুঁজি করে পূর্ব বাংলাকে সঙ্গে যুক্ত করা হয় পাকিস্তানের সঙ্গে।

বাঙালির ওপর চেপে বসা পাকিস্তান রাষ্ট্রের যাত্রার শুরুতেই পূর্ব বাংলার মানুষ সীমাহীন অত্যাচার, শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিকসহ সব দিক থেকে বিভিন্নভাবে বৈষমের স্বীকার হয়। বঞ্চিত হতে থাকে ন্যায্য অধিকার থেকে। তবে এই পরিস্থিতিকে তখন থেকেই মেনে নেয়নি এ ভূখণ্ডের মানুষ। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলার ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিবাদে নামে, আন্দোলন গড়ে তুলতে থাকে। দ্রুতই এই আন্দোলন সংগ্রামগুলো একত্রিত হয়ে জাতীয় সংগ্রামে রূপ নিতে থাকে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে পরিণত হয় এবং ’৭১ -এ রক্ষক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। আর বাঙালির এই আন্দোলন-সংগ্রামকে সংগঠিত ও নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

পাকিস্তানের দুঃশাসন আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি শুরু থেকেই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নামে। দানবরূপী পাকিস্তান রাষ্ট্রের শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসতে বাঙালি ধাপে ধাপে আন্দোলন গড়ে তোলে। মহান ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সংগ্রামের পথ প্রশস্ত হয়। ’৫৪-তে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-তে শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনসহ দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জাতি ১৯৭১ সালে এসে উপনীত হয়। পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসন, অত্যাচার নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাঙালির ধারাবাহিক আন্দোলন এক পর্যায়ে স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে পরিণত হয়।

বাঙালির এ আন্দোলনকে নেতৃত্ব দেন শেখ মুজিবুর রহমান। আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে শেখ মুজিব বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা ও বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স) দেওয়া বক্তব্যে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির নির্দেশ দেন। তথন থেকেই বাংলার সর্বস্তরের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ ও গণহত্যা শুরু করে। অপারেশন সার্চ লাইটের নামে গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে। এর আগেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা বার্তা লিখে যান—‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। ....চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। ’ বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা প্রথমে ইপিআরের ওয়্যারলেস মাধ্যমে প্রচারিত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী, নারী, পুরুষ, বাংলার সর্বস্তরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৫ মার্চ রাত থেকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী গণহত্যা শুরু করে, বর্বরোচিত কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে তাদের দোসর জামায়াতে ইসলাম, মুসলিম লীগ, রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এর বিরুদ্ধে অসীম সাহস নিয়ে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করে বাঙালি। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির কাছে পরাজিত পাকিস্তানি বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাথ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে বাঙালি জাতির চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন এই মহান স্বাধীনতা দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে যথাযথ সম্মানের সঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে।

গরম খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram