স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রযেন পরিত্যাক্ত ভুতুড়ে বাড়ি
এ রহমান, ঝালকাঠিঃ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগড় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে কর্মরতদের স্বেচ্ছাচারিতা, জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করা, দায়িত্বে অবহেলা, সরকারী আদেশ না মানা, স্যাকমোর উপজেলা সদরে ভাড়া বাসায় থাকা, স্থানীয়দের সরকারী সেবা না দেয়ায় জনসেবা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সরকারী এ ভবনটি একটি ভুতুরে বাড়িতে পরিণত হয়েছে।
হঠাৎ ভিন্ন এলাকার কেউ দেখলে মনে করবে এ যেন জমিদারদের পরিত্যক্ত ভুতুরে বাড়ি।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে এসময়ে সরকারী দায়িত্বে থাকা কাউকেই উপস্থিত পাওয়া যায় নি। একেন্দ্রে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো), এফডব্লিউভি, ইন্সপেক্টর, আয়া ও নৈশ প্রহরী পদায়ন আছে।
আরও পড়ুন>>>যশোরে শিশুর মরদেহ উদ্ধার,পরিবারের অভিযোগ ধর্ষণ করে হত্যা
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুপুর সাড়ে ১২টার সময়ে শুক্তাগড় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের প্রধান ফটক বন্ধ, উড়ছে না জাতীয় পতাকা। এমন দৃশ্য দেখে ভিতরে প্রবেশ করে পুরো কেন্দ্র ঘুরলেও ভিতরের সব কক্ষই তালাবদ্ধ এবং শুনশান নিরবতা বিরাজমান। কেউ আছেন, কেউ আছেন এভাবে ডাকাডাকি করলেও মিলেনি কোন সাড়া শব্দ। বাইরে বের হয়ে পতাকা টানানো হয়েছিলো কিনা তার কোন স্ট্যান্ড এবং স্ট্যান্ড রাখার জায়গাও খুজে পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রের পাশ থেকেই পিছনের যাবার সরু পথ অতিক্রম করলেই কোয়াটার চোখে পড়ে। সেখানে বসবাসরত পরিবারের কাছে জিজ্ঞাসা করলে নৈশ প্রহরী লাল মিয়া মৃধা নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে বের হয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে কথা বলেন। সবাই উপজেলায় মিটিংয়ে গেছেন, তাই এখন আর কেউ নাই। আমি নৈশ প্রহরী, আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি।
ওই কেন্দ্রের পরিদর্শক উজ্জল তালুকদার জানান, আমি মাঠ কর্মীদের তদারকির দায়িত্ব পালন করি। স্যাকমো ওখানে না থেকে তিনি রাজাপুরে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। তার কাজেও মন্থর গতি। বৃদ্ধ মানুষ, শারিরীকভাবেও অনেক দুর্বল তিনি। তার বাড়ি পার্শ্ববর্তি জেলা পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায়। সেখানে তার মটোরসাইকেল ত্রুটিতে সার্জেন্ট একটি মামলা দিয়েছিলো, আজ (সোমবার) সকালে তিনি উপজেলা অফিসে হাজিরা দিয়ে তার সমাধান করতে গেছেন।
এফডব্লিউভি এই কেন্দ্রে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন সপ্তাহে ২দিন। আয়া ও নৈশ প্রহরী ওই এলাকারই বাসিন্দা। জনগণের স্বাস্থ্য সেবার মূল ব্যক্তিই হলেন স্যাকমো। অসুস্থ মানুষ দিয়ে আসলে এধরনের প্রতিষ্ঠানের সেবা দেয়া সম্ভব না। সঠিকভাবে স্বাস্থ্য সেবা না পাওয়ায় স্থানীয় জনগণও এখন আর তেমন আসেন না।
স্যাকমো রমেন বড়াল মুঠোফোনে জানান, সকালে উপজেলা সমন্বয় সভায় উপস্থিত থেকে জরুরী কাজে নাজিরপুর চলে আসছি। ওখানে খাবারের কোন ব্যবস্থা না থাকায় উপজেলার মেডিকেল মোড়ে ভাড়া বাসায় থাকি এবং স্বপরিবারে না থাকায় হোটেলেই খাবার খাই। জাতীয় দিবস সমূহে জাতীয় পতাকা টানানো হয়। অন্যসময়ের সরকারী কর্মদিবসে জাতীয় পতাকা টানাতে হয় কি না তা আমার জানা নেই। পতাকা স্ট্যান্ড ও পতাকা কোথায় তারও কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এ যেন পরিত্যাক্ত ভুতুড়ে বাড়ি
তিনি আরো জানান, সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস টাইম হলেও আমরা মিটিংয়ের জন্য বের হইছি কিন্তু আয়া কেন উপস্থিত নেই তা বলতে পারছি না। বুধবার তার সাথে সাক্ষাত করার জন্য অনুরোধ জানান স্যাকমো রমেন বড়াল।
এবিষয়টি অবহিত করতে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শৌরেন্দ্রনাথ সাহার মোবাইল নম্বর (০১৭১১২৩০৪১৬) পরিদর্শক উজ্জল তালুকদারের কাছ থেকে নেয়া হয়। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ওই নম্বরে তিনবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ যেন পরিত্যাক্ত ভুতুড়ে বাড়ি
জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুখ লাল বৌদ্ধ জানান, বিষয়টি আমি আপনার (প্রতিবেদকের) কাছ থেকে শুনলাম। উপজেলা কর্মকর্তাকে জানানো হবে, তার কাছ থেকে ছুটি নিয়েছে কিনা। ১০ আগস্ট আমাদের মাসিক সমন্বয় সভা রয়েছে, সেখানে উত্থাপন করা হবে।