২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
shadhin kanto

কদর বেড়েছে পাবনার শুঁটকির, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

প্রতিনিধি :
স্বাধীন কণ্ঠ
আপডেট :
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩
24
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

ডেস্ক রিপোর্টঃ পাবনায় চলনবিল, গাজনাবিলসহ বিভিন্ন বিল এলাকার তিন শতাধিক চাতালে চলতি মৌসুমে দেড়শ মেট্রিক টন শুঁটকি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

সুস্বাদু হওয়ায় পাবনার শুঁটকির বেশ চাহিদা রয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে অন্তত ২০ দেশে রপ্তানি হচ্ছে এখানকার শুঁটকি। তবে সুষ্ঠু সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে অনেক শুঁটকি নষ্ট হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন>>>ভালোবাসায় জড়িয়ে বসন্ত এলো ধরণীতে

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভৌগোলিক কারণেই এ অঞ্চলে ব্যাপক হারে মৎস্যজীবীদের বসতি গড়ে উঠেছে। তারা সারা বছর এসব এলাকার জলাশয় বা পুকুর থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ অঞ্চলের বড় বড় জলাশয়ের ধারে গড়ে উঠেছে শুঁটকি তৈরির চাতাল। ডিসেম্বরের প্রথম থেকে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত চলে শুঁটকি প্রক্রিয়ার কাজ।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাছ কেনা, ধোয়া, শুকানো ও বাছাই করে পৃথক করার কাজ চলে চাতালে। এলাকার শত শত নারী-পুরুষ শ্রমিক এ কাজের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে বিলগুলোতে উৎপাদিত মাছ থেকে চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলনবিল ও গাজনাবিল পাড়ে গড়ে উঠেছে তিন শতাধিক অস্থায়ী শুঁটকির চাতাল। চাটমোহর উপজেলার চলনবিল এলাকার বোয়াইলমারী ব্রিজ সংলগ্ন চাতাল, সুজানগরে গাজনাবিল পাড়ে চরদুলাই, সাঁথিয়ার সাতানীর চর, আরাজী গোপিনাথপুর, হুইখালী, কলাগাছী ও রঘুনাথপুরের জেলে, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা মাছ কেনা বা শুকানোর কাজ করেন।

আরও পড়ুন>>>শহরে চলছে অবৈধ স্থাপনা শুরু করেছে উচ্ছেদ অভিযান

একেকটি চাতালে গড়ে ১০ জন নারী-পুরুষ কাজ করেন। সে হিসাবে প্রায় তিন হাজার পরিবারের মৌসুমি কর্মসংস্থান হয়েছে। শ্রমিকরা দিন হাজিরায় কাজ করছেন শুঁটকি চাতালে।

স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিলের পানি কমতে থাকলে চলনবিল ও গাজনাবিলের বিভিন্ন স্থানে জেলেদের জালে ধরা পড়ে পুঁটি, খলসে, চেলা, ট্যাংরা, কৈ, মাগুর, শিং, বাতাসি, চিংড়ি, নলা, টাকি, গুচিবাইম, বোয়াল, ফলি, কাতলা, নওলা, শোল, গজারসহ নানা জাতের মাছ। এসব মাছ কিনে চাতালে শুকিয়ে উৎপাদন করা হয় শুঁটকি। পরে এ শুঁটকি পাঠানো হয় দেশ-বিদেশে।

দেশের বড় ব্যবসায়ীরা সরাসরি চাতাল থেকে পছন্দের শুঁটকি কিনে নেন। এসব শুঁটকি মানভেদে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডে বাছাই করা হয়। ‘এ’ গ্রেডের (ভালোমানের) শুঁটকি যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, দুবাই, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্তত ২০টি দেশে রপ্তানি হয়।

আরও পড়ুন>>>কামরাঙ্গীরচরে সড়ক দুর্ঘটনায় বৃদ্ধের মৃত্যু

এসব দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিদের কাছে চলনবিলের শুঁটকির কদর রয়েছে। এছাড়া ‘বি’ ও ‘সি’ গ্রেডের শুঁটকি দেশের ভেতরে দিনাজপুর, সৈয়দপুর, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে।

চলনবিল পাড়ের শুঁটকি ব্যবসায়ী রফিক সর্দার বলেন, ‘চলনবিলের মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে শুঁটকি তৈরি করে সৈয়দপুর, রংপুর, তিস্তার আড়তদারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে এখনো চলনবিল এলাকায় বাজার সৃষ্টি হয়নি।’

২৫ বছর ধরে শুঁটকির ব্যবসা করছেন সাঁথিয়ার বাসিন্দা মনির হোসেন। তিনি জানান, ভারতে পাবনা অঞ্চলের পুঁটি মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন জানান, তিন কেজি তাজা মাছ শুকিয়ে এক কেজি শুঁটকি হয়। মানভেদে প্রতি কেজি শুঁটকি ২০০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। শুঁটকির ব্যবসায় জড়িত হয়ে তারা সচ্ছলতার মুখ দেখছেন।

তবে এ ব্যবসায় ঝুঁকিও অনেক বেশি বলে জানান এ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ঠিকমতো শুঁটকি পরিচর্যা করতে না পারলে অনেক ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে টানা বৃষ্টিতে শুঁটকি নিয়ে বিপদে পড়তে হয়। আকাশ মেঘলা থাকলে অনেক মাছ রোদের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়।

উৎপাদিত শুঁটকি সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর এ অঞ্চলে লাখ লাখ টাকার শুঁটকি নষ্ট হয় বলে জানান ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন।

আরও পড়ুন>>>ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

চাটমোহর উপজেলার বোয়ালমারী এলাকার মৎস্যজীবী আজিজুল, গাজনাবিল পাড়ের সুজানগর উপজেলার মসজিদপাড়া গ্রামের মৎস্যজীবী কোরবান আলী, সাঁথিয়ার আরাজী গোপিনাথপুর ও সাতানির চরের শুঁটকি ব্যবসায়ী জমির উদ্দিন জানান, চলনবিল, গাজনাবিল, ঘুঘুদহরবিল, সোনাইবিল, বড়বিল, ছোটবিল ও বিল গ্যারকায় পুঁটি, বাইম, চান্দা, টাকিসহ বিভিন্ন জাতের দেশি মাছ কমে যাচ্ছে। বিলে চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার বেড়ে গেছে। এ কারণে বিলে মাছ কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে শুঁটকির ব্যবসায় ধস নামবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

এ বিষয়ে পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, চলনবিল ও গাজনাবিলসহ পাবনার অন্যান্য বিলের শুঁটকি কোনো রকম রাসায়নিকের প্রয়োগ ছাড়াই প্রক্রিয়াজাত করা হয়। প্রক্রিয়াজাতের সময় লবণ ছাড়া কিছু মেশানো হয় না। ফলে এ শুঁটকি স্বাস্থ্যসম্মত। এটা অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় সারাদেশে এর চাহিদা আছে।

তিনি আরও বলেন, চাষিরা যেভাবে মাছ শুকিয়ে শুঁটকি করছেন সেটা আধুনিক পদ্ধতি নয়। চাষিদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ দিয়ে আধুনিক উপায়ে শুঁটকি তৈরি ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে ভোক্তারা আরও স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি পাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

গরম খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram