২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
shadhin kanto

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ : এখনই সময় সতর্ক হওয়ার

প্রতিনিধি :
স্বাধীন কণ্ঠ
আপডেট :
নভেম্বর ১৬, ২০২০
8
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ
| ছবি : করোনার দ্বিতীয় ঢেউ

ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস সংক্রমণের বছরপূর্তি হতে চলেছে। পৃথিবীব্যাপী মানুষ আতঙ্কের মধ্য দিয়ে পার করেছেন দুঃস্বপ্নের একটি বছর। কিন্তু করোনাভাইরাস নিয়ে উৎকণ্ঠা এবং আতঙ্কের শেষ হতে না হতেই আলোচনার বিষয়বস্তু এসে দাঁড়িয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ বা সেকেন্ড ওয়েভ। কেবল পশ্চিমা দেশেই নয়, বাংলাদেশেও দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। তাছাড়া শীতের আগমনী বার্তাও পাওয়া যাচ্ছে। আসন্ন শীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার আশঙ্কা আছে। ধারণা করা হতো, শীতকালে করোনার সংক্রমণ বাড়ে আর গ্রীষ্মকালে কমে, কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। তবে চীনে সংক্রমণের শুরুটা শীতেই ছিল, এমনকি কিছু কিছু শীত প্রধান দেশে করোনার সংক্রমণ এবং ধ্বংসযজ্ঞ ছিল ভয়ংকর! তবে আবহাওয়ার সঙ্গে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, তার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ, দেখা গেছে একপর্যায়ে করোনা শীত-গ্রীষ্ম মানেনি, বরং শীত, গরম এমনকি নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার দেশগুলোতে নির্মমভাবে তার থাবা বসিয়েছে।

আসলেই কি দ্বিতীয় ঢেউ আসবে? দ্বিতীয় ঢেউ বলতে প্রকৃত অর্থে কী বোঝায়? তার প্রস্তুতিই বা কেমন হওয়া উচিত?- বিভ্রান্ত না হয়ে এসব বিষয়ে আমাদের সবার স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত। বৃদ্ধি পাওয়া প্রথম সংক্রমণের সার্বিক হার কমে গিয়ে বা স্তিমিত হয়ে পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী হলে তাকে দ্বিতীয় ঢেউ বলা হয়। উনিশ শতকের গোঁড়ার দিকে স্প্যানিশ ফ্লুর মোট তিনটি ঢেউ বা ওয়েভ দেখা গিয়েছিল। এর মধ্যে দ্বিতীয় ঢেউটা ছিল প্রথমটির তুলনায় মারাত্মক। তাই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সবার মাঝে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, তা নিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত বসে থাকার কোনো উপায় নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, করোনাভাইরাস সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই গবেষণার পর্যায়ে রয়ে গেছে। এটি কি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়বে নাকি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে, টিকা কবে নাগাদ আসবে বা আসলেও তা কতটা কার্যকরী হবে, ভাইরাসের হার্ড ইমিউনিটি আসলেই সম্ভব কি না ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর এখনো ধোঁয়াশায়। সর্বোপরি করোনা আদৌ পৃথিবী থেকে নির্মূল হবে কিনা, নাকি আমাদের জীবন-জীবিকার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই ভাইরাসের সঙ্গে নিত্য বসবাস করতে হবে, তা নিয়ে এখনো রয়ে গেছে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব!

ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে সংক্রমণের হার বাড়ছে এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে, এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশেও। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইতিমধ্যে পুরোপুরি বা শহরভিত্তিক কঠোর লকডাউন এবং কারফিউ শুরু করেছে। অনেকে মনে করছেন আমাদের দেশের প্রথম ঢেউ তো শেষ হয়নি, সেখানে দ্বিতীয় ঢেউ আদৌ হবে কিনা, কিংবা তা হলে কতটা গুরুতর হবে, এসব নিয়ে সংশয় রয়েছে এবং বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান থেকে এমনকি উচ্চমহল থেকে সতর্কবাণী করা হচ্ছে। যেহেতু জনসাধারণের ঘরের বাইরে যাওয়া বেড়েছে, বাড়ছে জনসমাগম, এমনকি অফিস-আদালত, দোকানপাটসহ অনেক কিছুই আগের মতোই চলছে, সে কারণে সংক্রমণের হার বাড়তেই পারে। যারা আগে ঘর থেকে বের হননি, তারাও এখন বের হচ্ছেন। শিশু-কিশোররাও বের হচ্ছে, অনেক দেশে তো স্কুল-কলেজও খুলে গেছে। ফলে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত তরুণ জনগোষ্ঠী, শিশু-কিশোরেরা উপসর্গহীন ক্যারিয়ারে পরিণত হচ্ছে, তারা আবার অন্যদের মধ্যে নিজের অজান্তেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।

পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও একই অবস্থা। শহর ও গ্রামে মানুষ নির্ভয়ে চলাফেরা করছে, অনেকেই প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই যেখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। স্কুল না খুললেও শিশুদের নিয়ে বাবা-মায়েরা বাইরে যাচ্ছেন। শিশুরা সতর্ক থাকতে পারে না বলে ক্যারিয়ারে পরিণত হয়। নিজেদের উপসর্গ না হলেও পরিবারে বয়স্কদের সংক্রমিত করছে তারা। যেহেতু জনসমাগম বেড়ে চলেছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বালাই নাই, জনসাধারণের মধ্যে একটা উদাসীনতা বা শৈথিল্য ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এমনকি ন্যূনতম মাস্ক পরারও তোয়াক্কা নাই এবং অনেকেই শারীরিক দূরত্ব মেনে চলছেন না, তাই অদূর ভবিষ্যতে সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি তো আছেই।

আসছে শীতে সংক্রমণ কি বাড়বে?

কভিড-১৯ কিন্তু শুরু হয়েছিল গত শীতেই, যা চীনে পুরো শীতকালটায় তাণ্ডব চালিয়েছিল। এমন কি শীত প্রধান দেশগুলোতে সংক্রমণের হার জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে বলে লক্ষ্য করা গেছে। এ ছাড়া গবেষকেরা বলেন, যে কোনো ভাইরাস শীতল ও শুষ্ক আবহাওয়া পছন্দ করে। আর শীতে বাতাসের আর্দ্রতাও কমে, আবহাওয়ার পরিবর্তন এসে শুষ্ক হয়ে যায়। তা ছাড়া শীতে মানুষের দরজা-জানালা বদ্ধ ঘরে থাকার প্রবণতা বাড়ে, ফলে অ্যারোসল ছড়ায় বেশি। আর তাই বদ্ধ ঘরে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি।

এমনিতেই শীতকালে মানুষের নানা ধরনের রোগ-ব্যাধি যেমন : ফ্লু, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ (হাঁপানি বা ব্রঙ্কাইটিস) বাড়ে এবং প্রতি বছর এ ধরনের রোগীতে শীতকালে আমাদের হাসপাতাল পূর্ণ হয়ে যায়। তা ছাড়া শীতকালে দুনিয়াজুড়ে বয়স্ক ও শিশুদের ফুসফুস সংক্রমণজনিত মৃত্যুহারও সবচেয়ে বেশি হয়। উপরন্তু এ বছর অনেক নবজাতক শিশু লকডাউন ও মহামারীর কারণে যথাসময়ে সব টিকা পায়নি। সারা পৃথিবীতেই এ অবস্থা। ফলে এবার শীতে অনেক বেশি সংখ্যক শিশু নিউমোনিয়া, হুপিং কফ, হাম, মাম্পস ইত্যাদিতে আক্রান্ত হবে বলে এখনই ধারণা করা হচ্ছে। এমন কি কভিডসহ অন্যান্য ফুসফুসের সংক্রমণ বাড়বে, তা ধারণা করাই যায়। কারণ এখনো করোনা সংক্রমণ না নিয়ন্ত্রিত হয়েছে, না এর টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। এ ছাড়া শীতকালে সংক্রমণের হার আরও বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো এ সময়ে আমাদের ঘোরাঘুরি, নানা উৎসব, অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে-শাদি, পিকনিক, ওয়াজ-মাহফিল, মেলা, সেমিনার সিম্পোজিয়াম, সাংস্কৃতিক কাজকর্মসহ গণজমায়েত বেড়ে যায়। কাজেই এসব অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বাড়বে।

কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটে। স্প্যানিশ ফ্লুর বেলায় দ্বিতীয় সংক্রমণ ঢেউয়ে মিউটেটেড বা পরিবর্তিত ভাইরাসের শক্তি ছিল বেশি। আবার কোনো কোনো সময় ভাইরাস পরিবর্তন হয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। করোনার ক্ষেত্রে কী হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। যেহেতু যথাযথ টিকা এখনো পাওয়া যায়নি, তাই প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলাই হবে যথোপযুক্ত কাজ। এ কথা সত্য সংক্রমণের হার বাড়লেও মৃত্যুহার কিছুটা কমতির দিকে। সবকিছু স্বাভাবিকভাবে আগের মতো চলছে, তার মানে এই নয় যে করোনা সংক্রমণ শেষ হয়ে গেছে। সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণে এবং জীবন-জীবিকার তাড়নায় সব খুলে দেওয়া হয়েছে, মহামারী শেষ হয়ে গেছে বলে নয়, এ কথা মনে রাখা দরকার। তাই সবকিছু স্বাভাবিক মানে কিন্তু ঢালাওভাবে স্বাভাবিক নয়। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে বের হতে হচ্ছে বৈকি, তাই বলে বেড়ানো, উৎসব, সামাজিকতা, জনসমাগম করার মতো সার্বিক অবস্থা তো আর এখনো আগের মতো স্বাভাবিক হয়নি। তাই কঠোর ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেন চলা এবং সচেতনতার কোনো বিকল্প নাই।

শুধু জানলে হবে না, মানতেই হবে : ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মুখে মাস্ক পরতে হবে। অপ্রয়োজনে বাইরে যাবেন না। কাজ শেষে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসুন।

বাইরে গেলে যথাসম্ভব শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। বাস-ট্রেন-লঞ্চ, হাটে-বাজারে-দোকানে, রাস্তা-ঘাটে এমনকি হাসপাতালের আউটডোর ইনডোরসহ সব জায়গায় গায়ের ওপর গা দিয়ে চলাচল বন্ধ করুন।

বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস অব্যাহত রাখুন। হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন। অসুস্থবোধ করলে, জ্বর, কাশি বা গলা ব্যথা, স্বাদহীনতা দেখা দিলে উপসর্গ যত মৃদুই হোক, নিজেকে সবার কাছ থেকে আলাদা করে ফেলুন। পরীক্ষা না করা বা চিকিৎসকের পরামর্শ না নেওয়া পর্যন্ত বের হবেন না। এ সময় বাড়ির সবার কাছ থেকেও দূরে থাকুন। অনেকেরই মৃদু উপসর্গ হচ্ছে, আর তা নিয়েই সবাই বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যা কোনোভাবে কাম্য নয়।

শীতকালে যে কোনো রকম জনসমাগম, উৎসব, অনুষ্ঠান, ভিড় এড়িয়ে চলুন। এগুলো করতেই হলে সীমিত পরিসরে অল্পসংখ্যক মানুষ নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করুন। শিশুদের নিয়ে অকারণে বাইরে যাবেন না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ। সেটা শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই করা। তাই বলে তাদের নিয়ে সমুদ্রসৈকতে, রিসোর্টে বা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে ঘুরে বেড়ানো উচিত না। শিশুরা নীরব বাহক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

যারা বয়স্ক ব্যক্তি বা যারা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত যেমন : উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, কিডনি বা লিভারের রোগ, স্ট্রোক বা জটিল সমস্যায় আক্রান্ত, তাদের সংক্রমণের ঝুঁকি কিন্তু ততটা কমেনি, বরং বেড়েই চলছে। প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে তাদের বাইরে যেতে দেওয়া যাবে না। আলাদা ঘরে রাখা এবং তাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা পরিবারের অন্যান্যদের গুরুদায়িত্ব। অন্যদিকে যারা বাইরে থেকে ঘরে আসবেন, তারাও এ সমস্ত ব্যক্তিদের কাছে যাবেন না বা প্রয়োজনে সতর্কতার সঙ্গে তাদের সঙ্গে মিশবেন।

শীতের আগে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়ার টিকা ঝুঁকিপূর্ণদের দিয়ে নিন।

করোনা মোকাবিলায় প্রশাসনিক যেসব প্রস্তুতি রাখতে হবে :

যেহেতু শীতে সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, তাই প্রশাসনকেও আগে ভাগেই সতর্ক ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ‘মাস্ক ছাড়া কোনো সেবা নয়’, এটাকে শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবে পরিণত করতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।

এ ছাড়া সংক্রমণ শনাক্তের টেস্ট, ট্রেসিং, আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইন যাতে বাস্তবায়িত হয়, তারও ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ ইতিমধ্যে এসব ব্যবস্থাপনায় গাছাড়া বা ঢিলেঢালা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিশেষ করে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা এবং কোয়ারেন্টাইন মানার ব্যাপারে বাধ্য করতে হবে। ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তাসহ তাদের মানসম্মত সুরক্ষা সামগ্রীর যেন ঘাটতি না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনোক্রমেই যেন আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে না পড়ে, টেস্ট বা পরীক্ষা নিয়ে জনসাধারণকে যেন ভোগান্তি এবং তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার না হতে হয়, সেদিকটাও নিশ্চিত করতে হবে।

কোনোভাবেই পরীক্ষার এবং চিকিৎসার নামে প্রতারণা যেন না হয়, সেদিকে শুরু থেকেই নজরদারি বাড়ানো দরকার।

জনগণ ও সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছাড়া কোনো পরিস্থিতি থেকেই উত্তরণ সম্ভব নয়। দুর্নীতিবাজ, সুবিধাবাদী, স্বার্থপর, মুনাফাখোর এবং লোভী, যারা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এমনকি করোনা মহামারীর এই বিপদের দিনে মানবতা বা মনুষ্যত্বের তোয়াক্কা না করে যারা আখের গোছাতে ব্যস্ত তাদেরকে চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথম অবস্থার উন্নতির ফলে এবং ভর্তি সংখ্যা কম হওয়াতে অনেক কভিড হাসপাতাল বন্ধ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আবার রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সেগুলো যেন দ্রুততম সময়ে চালু করা যায়, সে ব্যবস্থা এখনই নিয়ে রাখতে হবে।

ঢেউ এলে আমরা সামাল দিতে পারব তো?

রোগটি যেহেতু নতুন তাই প্রথম দিকে ডাক্তার-নার্স এবং প্রশাসনসহ সর্বস্তরের প্রস্তুতি ও অভিজ্ঞতার কিছুটা ঘাটতি ছিল। তবে এগুলো থেকে আমরা উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছি। এমনি শুরুতে ডাক্তার নার্সসহ সর্বস্তরের প্রশাসনিক ব্যবস্থার মধ্যে যে ভীতি বা ইতস্তত ভাব ছিল, তাও কেটে গেছে। বর্তমানে ডাক্তার-নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা দক্ষতার সঙ্গে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ওষুধপত্র, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা সামগ্রীর যে অপ্রতুলতা ছিল সে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তাছাড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা-বেড, আইসিইউ-ভেন্টিলেটরসহ মোটামুটি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে প্রস্তুত। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল এবং প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোও সক্ষমতা বাড়িয়ে দক্ষতার সঙ্গে ভালোভাবে করোনার চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

জনগণের সচেতনতার মধ্যেই রয়েছে সফলতা। করোনা প্রতিরোধের ভ্যাকসিন এখনো হাতের নাগালে আসেনি, কবে নাগাদ আসবে তাও অনিশ্চিত। টিকা হাতের নাগালে এলেও সর্বস্তরের জনগণ তো একই সঙ্গে টিকা পাবে না, পেলেও সেই টিকা কতদিন প্রটেকশন বা সুরক্ষা দেবে তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। মূলকথা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউ কিংবা দ্বিতীয় ঢেউ যেটিই হোক না কেন, প্রতিরোধের লাগাম কিন্তু আপনার-আমার হাতেই। আপনার সুরক্ষা বা নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনাকেই নিতে হবে। কারণ আপনি আক্রান্ত হলে তখন প্রশাসন, কোনো গোষ্ঠী, দল বা অন্যকে দোষারোপ করে কোনো লাভ হবে না। তাই অন্য কিছু মানুন আর না মানুন, মাত্র তিনটি সাধারণ কাজ করলে করোনাভাইরাসের মতো ভয়ংকর দানবকে আমরা রুখে দিতে পারব। এক. নিয়মিত মাস্ক পরতে হবে, দুই. নিয়মিত অন্ততপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করে হাতকে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে এবং তিন. ঘরের বাইরে অন্য মানুষের সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব (অন্ততপক্ষে তিন ফুট) বজায় রাখতে হবে। করোনাভাইরাসের কার্যকরী টিকা গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত, এই তিনটি কাজ টিকা একমাত্র বিকল্প এমনকি তা টিকার চেয়ে অধিক কার্যকরী। আপাতত এই তিনটি কাজই আমাদের পরিবার, সমাজ ও দেশের মানুষকে করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবা থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য যথেষ্ট। তাই আত্মবিশ্বাস ও আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সচেতনতা থাকলে আমরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম হব।

► লেখক : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

গরম খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram