১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
shadhin kanto

চুয়াডাঙ্গায় কলেজ অধ্যক্ষকে সভাপতির গালিগালাজ, ভিডিও ভাইরাল

প্রতিনিধি :
স্বাধীন কণ্ঠ
আপডেট :
জুন ১৫, ২০২২
15
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
চুয়াডাঙ্গায় অধ্যক্ষকে সভাপতির গালিগালাজ
| ছবি : চুয়াডাঙ্গায় অধ্যক্ষকে সভাপতির গালিগালাজ

জনি আহমেদ, চুয়াডাঙ্গাঃ শিক্ষক মানেই জাতির মেরুদণ্ড। যে শিক্ষক জাতিকে উচ্চপর্যায়ে যেতে সাহায্য করে অথচ সেসকল অনেক শিক্ষকদেরই সমাজের বুকে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা বর্তমানে অহরহ ঘটছে। যা জাতির জন্য লজ্জাজনক। তেমনই এক লজ্জাজনক ঘটনার জন্ম দিয়েছেন চুয়াডাঙ্গায় তেতুল শেখ কলেজের সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ।

মনে মনে পূর্ব দ্বন্দ্বের জেরও লেগেছিল ওই কলেজের অধ্যক্ষ মারফুল হক এর সাথে সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখের। তারই অংশ হিসেবে অধ্যক্ষকে গালিগালাজ করে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে কলেজের সভাপতির বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন>>>নরসিংদীতে জেলা পুলিশের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ

ওই লাঞ্ছিতের ঘটনায় এদিন মঙ্গলবার (১৪ জুন) রাত ১০টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ মারফুল হক সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে অধ্যক্ষের গালিগালাজের সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা সমালোচনা।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১০ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা গেছে, তেতুল শেখ কলেজের অধ্যক্ষ মারফুল হকের অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ। কলেজের ভালমন্দ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার একপর্যায়ে হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে অধ্যক্ষকে গালাগালি শুরু করেন সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ। তিনি বারবার অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করার ঘটনাও ভিডিওতে স্পষ্ট শোনা বা দেখা যাচ্ছে। সেসময় ‘তুই কলেজের ক্যাম্পাসে হাঁটতে পারবি না। এটা কি তোর বাপের জমি? তোর বাপকে জমি কিনতে বল, তারপর সেই জমিতে হাঁটবি। শুয়া-- বাচ্চা তোর চাকরি খেয়ে ফেলবো এমন ভাষা ছুড়ে দিয়ে মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করেন তিনি।

ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, সভাপতি অধ্যক্ষকে ননসেন্স, শুয়ো---, শুয়ো--বাচ্চা, কুত্তা বলে গালিগালাজও করছেন।

তেতুল শেখ কলেজের অধ্যক্ষ মারফুল হক জানান, আমি কলেজে ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি যোগদান করি। যোগদানের পর থেকে আমার সাথে কারণে অকারণে বিবাদে জড়ান সভাপতি। তিনি জোর করে আমাকে পদত্যাগ করাতে চান। প্রায়ই তার একান্ত ব্যক্তিগত কাজ করে দেয়ার জন্য চাপ দেন। একপর্যায়ে অকারণে আমাকেসহ অন্য শিক্ষকদের মানসিক নির্যাতন করেন। তিনি প্রায়ই আমাকে গালিগালাজ করেন এবং অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগের জন্য চাপ দিতে থাকেন। সম্প্রতি কলেজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৬০ লাখ টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে সরিয়ে নিয়েছে সভাপতি। ওই ব্যাপারে কিছু বললেই তিনি অশোভন আচরণ করেন। শুধু একদিনই নয়, প্রতিদিনই এ ধরণের বাজে আচরণ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, সভাপতি সাহেব চাটুকারিতা পছন্দ করেন। তিনি চান কলেজের সকল শিক্ষক-কর্মচারী তার হুকুমের গোলাম হয়ে থাকবেন। এর ব্যত্যয় হলেই মানসিকভাবে নির্যাতন করেন তিনি। ওই ঘটনায় রাতে আমি সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।

তেতুল শেখ কলেজের সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ বলেন, আমার কলেজটি চুয়াডাঙ্গা জেলার শ্রেষ্ঠ কলেজ। গত ১০-১৫ দিন আগে কলেজে ক্লাসে বিশৃঙ্খলা দেখে আমি অধ্যক্ষকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে অসম্মান করে সব ঠিক আছে যান বলে জবাব দেন। এতে আমি উত্তেজিত হয়ে তাকে কড়া ভাষায় কিছু কথা বলেছি মাত্র। সেটি তিনি গোপনে ভিডিও করে ভাইরাল করেছেন।আজ বুধবার সকালে কলেজে কমিটির লোকজনদের নিয়ে মিটিং করে তার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

তিনি আরও জানান, গত দেড় বছর আগে আমি ওই অধ্যক্ষকে নিয়োগ দিই। আমি তাকে একজনের সুপারিশে নিয়েছিলাম। যোগদানের পর বুঝতে পারি তিনি অযোগ্য। তিনি কলেজের উন্নতি চান না। তিনি কলেজের পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি কলেজের প্রভাষক জানান, ২০১১ সালে আমাকে নিয়োগ দেয়ার নামে ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন তেতুল শেখ কলেজের সভাপতি আব্দুল্লাহ শেখ। সেসময় নিয়োগও দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ৪ বছর পর বের করে দেন। আমি খুব গরীব মানুষ। খুব কষ্ট করে টাকা দিয়েছিলাম।

তিনি আরও জানান, জীবননগর আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের লতিফ মিয়ার ছেলে মোস্তফা আমজাদকে নিয়োগ দেয়ার নামে তার কাছ থেকে ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ৫ গাড়ি ইট, ২ গাড়ি ইটের সুরকি, ভবনের টিন, রং ও রডের অ্যাঙ্গেল নিয়েছিলেন। তাকে অ্যাকাউন্টিং বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার ৫ বছর পর বের করে দেন।

একইভাবে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পান্তাপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমানকে উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেন ৭ লাখ টাকার বিনিময়ে। পরে ৭ দিনের মাথায় কলেজ থেকে বের করে দেন। ওই পদে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আদর্শআন্দুলিয়া গ্রামের সুরজ আলমকে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেন। তিনি বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন।

এভাবে আরও ৪ জন শিক্ষককে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়ার পর বের করে দেন। ওই অধ্যক্ষকে সরিয়ে নতুন অধ্যক্ষকে নিতে ইতোমধ্যে তিনি ১৯ লাখ টাকা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, কলেজের অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে আজ বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারে মানববন্ধন করবে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার সচেতন মহল।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমান জানান, ওই ঘটনায় রাতে কলেজের অধ্যক্ষ একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

গরম খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram