কাল চুয়াডাঙ্গায় রক্ত ঝরবে লাখো প্রাণের
জনি আহমেদ, চুয়াডাঙ্গঃ লোক দেখানো বা সামাজিকভাবে নিয়ম পালন করলেই কোরবানী সফল হয়না। কোরবানী মানেই আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভ করা। সেইসাথে ঈদের নামাজ আদায় করাসহ নিয়ত করে আত্মত্যাগ করাই কোরবানী।
কোরবানি হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত। এখানে সুন্নত অর্থ তরিকা বা পদ্ধতি, আদর্শ বা অনুসৃত একটি বিষয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন: ‘ফা ছল্লি লিরব্বিকা ওয়ানহার’ অর্থাৎ হে নবী (সা.)! আপনি আপনারা রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন। এতে নির্ধারিত হয়েছে যে, কোরবানি সকলের জন্য একটি ওয়াজিব (আবশ্যিক) বিধান।
আরও পড়ুন>>>বেনাপোলে ভারতগামী নারী-পুরুষ পাসপোর্ট যাত্রীদের রাত কাটছে রাস্তায়
প্রতি বছর জিলহজ মাসের সকাল থেকে অর্থ্যাৎ ১০ তারিখ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত এ দিবসটি পালিত হয়। যার নিকট নিসাব পরিমাণ সম্পদ (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা এ উভয়ের যেকোনো একটির মূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা ব্যবসাপণ্য থাকে, তাহলে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানির দিনগুলোতে কোরবানির চেয়ে শ্রেষ্ঠ আমল আর নেই।
সেই অংশহিসেবে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা অর্থ্যাৎ রাত পোহালেই শুরু হবে সেই আত্মত্যাগের খেলা। কোরবানী ঈদের জামাত শেষ করার পরপরই শুরু হবে রক্তের হলিখেলা।
হুজুররা হাতে চাকু ভুজালি নিয়ে ছুটে বেড়াবে জবাই করতে। কারো গরু, ছাগল, ভেড়াসহ দুম্বার রক্ত ঝরবে এবার চুয়াডাঙ্গায়।
প্রতিবছর একবারই আসে এ পশু কোরবানীর সর্বোচ্চ দিন। সারা দেশের ন্যায় চুয়াডাঙ্গায়ও প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে সব ধরনের পশু মিলে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার ৭০৮টি। যা বারো মাস জেলার সকল ব্যবসায়ীরা পশু জবাই করলেও ১০/১২ ভাগের এক ভাগের মত হবে। মুসলিম ধর্মের সেই আত্মত্যাগ আর আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি লাভের কোরবানী ঈদ রাত পোহালেই।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় হাজার হাজার পশু জবাই করার লক্ষ্যে এক বছরের জমে থাকা ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়ীরা ছুরি চাকু ভুজালিতে ধার দিতে উৎসবের আমেজে কয়েকদিন ধরেই ব্যস্ততায় ভরপুর চুয়াডাঙ্গার কামার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো।
দুই বছরের করোনার প্রভাব থাকায় তারা ঠিকমত ব্যবসা করতে পারেনি। তবে এবার ঈদে করোনার তেমন চাপ এখনও পর্যন্ত না আসায় ধুমছে পশু জবাইয়ের চাকু, ডাসা, ভুজালি ধার করার কাজে বাড়তি কথা বলার সময় নেই তাদের হাতে। শুধু পুরাতন অস্ত্রই নয় নতুন নতুন বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র বানাচ্ছে তারা। তবে এবার লোহার দাম বেশি থাকায় বানাতে খরচও বেশি পড়ছে এবার।
তাদের ভাষ্য, গত দুই বছরের করোনার ঘা শুকিয়ে উঠতে এবার কোরবানিকে ঘিরে পুরাতন চাকু ধার দেয়ার কাজও যেমন বেশি তেমনী নতুন নতুন অস্ত্রও তৈরীর কাজ বেশি। তবে গত দুই বছরের জের কাটিয়ে এবার সফলতার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছেন চুয়াডাঙ্গার কামাররা।
চুয়াডাঙ্গায় রক্ত ঝরবে লাখো প্রাণের
এবার মাংস কাটা ডাসা ধার দিতে লাগছে ২০০ টাকা, ছুরি ধার নিতে লাগছে ৫০ টাকা আর বটি ধার দিতে লাগছে ৮০ টাকা । এ থেকে তাদের প্রতিদিন আয় হচ্ছে ১২শ` থেকে ১৫শ` টাকা। তবে স্বাভাবিক দিনগুলোর চেয়ে আষাঢ়ের ভ্যাপসা গরমেও প্রায় ৪/৫ ঘণ্টা বেশি কাজ করতে হচ্ছে তাদের।
চুয়াডাঙ্গা বড় বাজার কামার পট্টির কামার রঞ্জন কর্মকার বলেন, আমাদের এখন কোরবানি ঈদ নিয়ে ব্যস্ততা অনেক বেশি। যারা কোরবানি দিবে তারা মাংস কাটা ডাসা, ছুরি, বটি এসকল অস্ত্র আমাদের কাছে নিয়ে আসছে আমরা ধার করে দিচ্ছি। প্রতিবছর আমাদের এ সময় খুব ব্যস্ততার মধ্যে দিন পার করি। গেল বছরের তুলনায় এবার ভালো কাজ হচ্ছে।
একই জায়গায় কামার হারুন বলেন, সব নিত্য পণ্যের দাম বেশি যার কারণে আমরা এবার অস্ত্র ধার দিতে টাকা একটু বেশি নিচ্ছি। করোনার মহামারীর কারনে যে ক্ষতি হয়েছে আমরা সেটা কাটিয়ে উঠতে চাই। এবার ভালো কাজ হচ্ছে। মানুষের সমাগমও অনেক বেশি। আশা করছি গত দুই বছরের ক্ষতি আমরা পুষিয়ে উঠতে পারবো।
চুয়াডাঙ্গায় রক্ত ঝরবে লাখো প্রাণের
চুয়াডাঙ্গা জেলা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার বলেন, এখন কামাররা মহা ব্যস্ত। সামনে কোরবানি ঈদ যে কারণে কামাররা পশু কোরবানির অস্ত্র ধারালো করার কাজে খুব ব্যস্ত। তবে বর্তমান সময় কামারদের সংখ্যা কমে গেছে। এখন কামারদের ছেলেমেয়েরাও অন্য পেশায় ঢুকে পড়ছে। এজন্য কামার শিল্প দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এবার কামাররা গত বছরের করোনার প্রভাব কাটিয়ে তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আশা করি কামাররা এবার ভালো লাভবান হবে ।