চুয়াডাঙ্গার কালো সড়ক তিনজনের রক্তে হলো লাল
জনি আহমেদ, চুয়াডাঙ্গাঃ চুয়াডাঙ্গায় সড়ক আইন বাস্তবায়ন হয়ই না। ফলে প্রতিনিয়ত পঙ্গুত্বসহ নিহতের ঘটনা ঘটছে জেলার যে কোন প্রান্তে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়বদ্ধতা থাকা স্বত্ত্বেও সড়ক আইনের সঠিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয় না। ফলে সড়কের কালো পিচ লাল হয় প্রতিনিয়ত। তারই অংশ হিসেবে চুয়াডাঙ্গায় পৃথক পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় মোট তিনজন নিহত হয়েছেন।
বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) মধ্যরাত পর্যন্ত এ নিহতের ঘটনা ঘটে।
তারমধ্যে নিশান আলী (২৫) নামে এক সিএনজি চালক তাঁর পেশাদারিত্বের কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন।
সেসময় চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের আলুকদিয়া-ভালাইপুর নামক মাঝামাঝিস্থানে পৌঁছালে দ্রুতগতির একটি ট্রাক ওই সিএনজিকে ধাক্কা মারলে মারাত্মকভাবে আহত হন নিশান। ঝরতে থাকে রক্ত। সেসময় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর।
আরও পড়ুন>>>লক্ষ্মীপুরে সচিবের ঘুষ গ্রহণের ভিডিও প্রকাশ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা
নিহত নিশান আলী চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের কয়রাডাঙ্গা গ্রামের মল্লিকপাড়ার এস মহাম্মদের ছেলে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বিষয়টি নিশ্চিত করে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইন্দ্রজিত রায় বলেন, “আনুমানিক রাত ১ টার দিকে টহল দেয়ার সময় আলুকদিয়া-ভালাইপুরের মাঝামাঝি সড়কের উপর রক্তাক্ত অবস্থায় নিশানকে পড়ে থাকতে দেখি। পরে খবর পেয়ে আহত নিশানকে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।”
তিনি আরও বলেন, “পুরো সিএনজিটা ধুমড়ে মুচড়ে গেছে। দূর্ঘটনা কবলিত সড়কের চাকার সাফ দেখে মনে হচ্ছে বড় কোন যানবহন কিংবা ট্রাক সিএনজিকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে গেছে। সেসময় আহতের কাছ থেকে স্বর্ণের দুই জোড়া কানের দুল ও এক জোড়া হাতের বালা উদ্ধার করা হয়েছে।”
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আহত ব্যাক্তির মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ার ফলে রাত পৌনে ৩ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহব্বুর রহমান বলেন, কোন অভিযোগ না থাকায় আইনমাফিক পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে নিহতের মরদেহ।
অপরদিকে, এদিন বিকেল ৩টার দিকে একই জেলার জীবননগর উপজেলা থেকে এক মোটরসাইকেলে ৪ কিশোর বেপরোয়া গতিতে আসার সময় ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে দুই বন্ধু ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়। সেসময় ঘটনাস্থলেই সুমন নামে এক কিশোর নিহত হয়। দূর্ঘটনার পর চালক ট্রাকটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বুধবার বিকেলে একটি মোটরসাইকেলে চার কিশোর চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুর গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলা দেখতে যাচ্ছিল। চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়কে কাঁঠালতলা এলাকায় পৌঁছালে একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ।
নিহত সুমন আলী একই উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের কুঠিরপাড়ার কৃষক বাবলু রহমানের ছেলে এবং জয়রামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
আহতরা হলো-জয়রামপুর গ্রামের কুঠিরপাড়ার তারা মিয়ার ছেলে তামিম হোসেন (১২), একই পাড়ার আরিফুল ইসলামের ছেলে ইমন আলী (১২) ও শেখপাড়ার সাইফুল ইসলামের ছেলে ফখরুদ্দিন (১২)।
খবর পেয়ে দর্শনা থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আহত কিশোরদের উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। তাদের মধ্যে ইমনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়। বাকি তিনজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সুমন আলীকে মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসক সাদিয়া মা-আরিজ জানান, “পরিক্ষা-নিরিক্ষার পর সুমনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। আহত তামিম ও ফখরুদ্দিন শঙ্কামুক্ত নয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে রাজশাহী রেফার্ড করা হয়েছে। ”
অপরদিকে, বুধবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামে রাস্তা পার হওয়ার সময় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের ধাক্কায় সামসুন্নাহার (৪) নামে এক শিশু গুরুতর আহত হয়।
চুয়াডাঙ্গা সড়ক তিনজনের রক্তে লাল
স্থানীয়রা উদ্ধার করে প্রথমে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে সেখান থেকে রাজশাহী নেয়ার পথে সন্ধার পর চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় পৌঁছালে শিশু সামসুন্নাহার মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে।
শিশু সামসুন্নাহার চাঁদপুর গ্রামের মসজিদ পাড়ার আবুল কাশেমের মেয়ে। বুধবার সকালে মুক্তারপুর গ্রামে বাবার সঙ্গে নানা বাড়ি বেড়াতে এসেছিল।
চুয়াডাঙ্গা সড়ক তিনজনের রক্তে লাল
রাত ১০ টার দিকে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয় বলে নিশ্চিত করেন দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ।