ঝালকাঠিতে হাতি দিয়ে চাঁদা আদায়ে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা
এ রহমান, ঝালকাঠিঃ ঝালকাঠি শহরের বিভিন্ন সড়কে, অলিতে গলিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে পোষ্য হাতি দিয়ে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। হাতির আকস্মিক আক্রমনে আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে চাঁদা দিতে ব্যবসায়ী ও গৃহস্থালীর লোকজন বাধ্য হচ্ছেন ।
বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়কে প্রকাশ্যে হাতি দিয়ে চাঁদাবাজি করতে দেখা গেছে।
হাতির মাহুত সেলামির নামে শহরের বিভিন্ন সড়কে, অলিতে গলিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িতে, বিভিন্ন হাটবাজার ও সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন আটকিয়ে চাঁদা তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ব্যবসায়ী, গৃহস্থালীর লোকজন ও পথচারীরা।
আরও পড়ুন>>>আগামী বছর থেকে প্রাথমিকে সমাপনী পরীক্ষা হচ্ছে না
হাতির মাহুত রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘চাঁদা তো না, সালাম দিয়ে সাহায্য নিচ্ছি। সার্কাস বন্ধ থাকায় হাতি নিয়ে বিপাকে পড়েছি। হাতিকে খাওয়ানোর জন্য সাহায্য চাইতে চাইতে পিরোজপুর থেকে ঝালকাঠি শহর পর্যন্ত এসেছি।’
শহরের বিভিন্ন সড়কে, অলিতে গলিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িতে, হাটবাজারে হাতির মাহুত সেলামির নামে চাঁদা তুলছেন। চাঁদা দিলে হাতি শুঁড় দিয়ে গ্রহণ করে মাহুতকে দেয়। আর চাঁদা না পেলে উচ্চ স্বরে হুংকার ছাড়ে। ভয়ে ব্যবসায়ী ও পথচারী বাধ্য হয়ে চাঁদা দিচ্ছেন।
দুপুরেই জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে অল্প বয়সের একটি এবং ফায়ারসার্ভিস মোড় এলাকায় প্রাপ্ত বয়স্ক এশটিসহ মোট দুটি হাতিকে চাঁদা তুলতে দেখা যায়।
বাজারের ব্যবসায়ী সিকেন্দার আলী বলেন, ‘হাতির জ্বালায় আমরা অতিষ্ঠ। চাঁদা না দিলে নানাভাবে আমাদের বিরক্ত করছে। তাই ভয়ে চাঁদা দিচ্ছি। দুই হাতিকে চাঁদা দিয়েছি।’
ওই বাজারের মুদিদোকানি আফজাল হোসেন বলেন, ‘সকালে কেবল দোকান খুলে বসছি। ঠিক তখনই হাতি এসে দোকানের সামনে হাজির। টাকা নেই বলার পরও হাতি যাচ্ছে না। শুঁড় দিয়ে আমার গায়ে পানি দিচ্ছে। দোকানের মালামাল উল্টাপাল্টা করছে। তাই বাধ্য হয়ে প্রথমে ২০ টাকা চাঁদা দিয়েছি। না মানায় পরে ৫০ টাকা দিয়েছি।’
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকেই বাজারে কথা হয় পানের দোকানি লুৎফর রহমানের সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘করোনা তো আমারও কোমর ভেঙে দিছে। এই ছোট দোকান দিয়েই আমাদের সংসার চলোছে। কিন্তু হাতির জ্বালায় তো অতিষ্ঠ হয়ে উঠছি। দুই হাতিকে চাঁদা দিয়েছি। চাঁদা দিবো তাতেও দুঃখ নাই। কিন্তু এই হাতি যদি একবার ভুল করি শুঁড় দিয়া দাকানোত ঠেলা মারে, তাইলে সব শেষ হয়া যাইবে।’
বালাবাড়ি বাজারের চাল ব্যবসায়ী আজমত হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে মুই দোকান খুলি এক টাকাও বিক্রি করতে পারি নাই। কিন্তুক হাতি এসে হাজির। চাঁদার জন্য ভয় দেখাইছে। জীবনের ভয়ে বাধ্য হয়ে মাইনসেরটে ধার নিয়া ৫০ টাকা দিছি।
বিকনা গ্রামের মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নতুন কলেজ রোড এলাকায় একটি হাতি পথ রোধ করে। ভয়ে আমার সন্তান চিৎকার শুরু করে। তড়িঘড়ি করে ২০ টাকা দিলে হাতি নেয় না। পরে ৪০ টাকা দিলে রাস্তা ছেড়ে দেয়।’
আরেক হাতির মাহুত শাকিল হোসেন বলেন, ‘আমরা তো চুরি করছি না। পিরোজপুর থেকে মহাসড়ক দিয়ে বরিশালের উদ্দেশে রওনা হয়েছি। হাটবাজার, রাস্তাঘাটে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মানুষকে হাতি দেখিয়ে খুশি করে হাতির খাবারের জন্য টাকা নিচ্ছি। এতে দোষের কী?’
ঝালকাঠি সদর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘হাতি দিয়ে চাঁদা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। এ রকম ঘটনা আমাকে কেউ জানাননি। এখন জানলাম। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’