ঝালকাঠির মহাসড়কে অর্ধশতাধিক স্পীড ব্রেকার, ঘটছে দুর্ঘটনা
এ রহমান, ঝালকাঠিঃ ঝালকাঠির উপর দিয়ে চলে গেছে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক। এ মহাসড়কের ৫৪ কিলোমিটারে অর্ধশতাধিক স্পীড ব্রেকার রয়েছে। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় এ স্পীড ব্র্রেকারগুলো টপকাতে হয় প্রতিটি যানবাহনকে।
মহাসড়ক ছাড়াও জেলা অভ্যান্তরে যাত্রীবাহী ও মালবাহী যান চলাচলের রাস্তায়ও রয়েছে অসংখ্য স্পীড ব্রেকার।
ঝালকাঠি জেলায় কতগুলো স্পীড ব্রেকার রয়েছে তার সঠিক কোন পরিসংখ্যাছন নেই কোন দপ্তরেই। নেই কোন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানও। এভাবেই ঝালকাঠি জেলার প্রায় সব সড়ক ও মহাসড়কে অপরিকল্পিত আর অবৈধ স্পিড ব্রেকারের দখলে চলে গেছে। অথচ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নেই কোন স্পিড ব্রেকার।
আরও পড়ুন>>>চুয়াডাঙ্গায় খেলতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে শিশুর মৃত্যু
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালের সীমান্তবর্তি কালিজিরা ব্রিজের পশ্চিম পাড় থেকে ঝালকাঠি জেলার এরিয়ার শুরু হয়ে পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার সীমান্ত পর্যন্ত ৩৯কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। আবার এ সড়কেরই রাজাপুর মেডিকেল মোড় থেকে বেকুটিয়া ব্রিজের পূর্বে কাউখালী উপজেলার সীমান্ত পর্যন্ত ৮কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে।
অপরদিকে জেলার নলছিটি উপজেলার খায়েরহাট ব্রিজ থেকে পটুয়াখালীগামী ৭কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। জেলার মোট ৫৪ কিলোমিটার মহাসড়কে স্পীড ব্রেকার রয়েছে অর্ধশতাধিক। যা গড়ে প্রতি কিলোমিটারে ১টি করে স্পীড ব্রেকার রয়েছে।
সূত্রমতে, সড়ক ও মহাসড়কে বিপুলসংখ্যক স্পিড ব্রেকার কীভাবে বসল তার কোনো তথ্য নেই খোঁদ সড়ক বিভাগে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের চাঁপে এগুলো বসানো হয়েছে। এক্ষেত্রে তারা প্রায় অসহায়। অথচ সড়ক-মহাসড়কে এভাবে স্পিড ব্রেকার দেওয়ার বিধান নেই। দিকনির্দেশক চিহ্ন এবং পথচারী পারাপারের জেব্রা ক্রসিংয়ের বাইরে এসব সড়কে থাকতে পারে শুধু র্যাম্বেল স্ট্রেট (আধা ইঞ্চি উঁচু বিট একসাথে ছয় থেকে আটটি)। অথচ বিপজ্জনক স্পিড ব্র্রেকারগুলো বসিয়ে শুধু গাড়ির ক্ষতিই করা হচ্ছেনা, দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বাড়িয়ে তোলা হচ্ছে কয়েকগুণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের পাশে ৫/৭টি দোকান থাকলেই তার দু’প্রান্তে বসিয়ে দেয়া হয়েছে দুটি স্পীড ব্রেকার। কোথাও কোথাও প্রভাবশালী কারো বাড়িতে প্রবেশের শাখা সড়ক কিংবা বিত্তশালী শিল্প মালিকের কারখানার সামনেও তৈরি করে রাখা হয়েছে জোড়ায় জোড়ায় গতিরোধক।
যেমনটা দেখা গেছে বরিশাল থেকে ঝালকাঠির পথে আমিরাবাদ, রায়াপুর, ষাটপাকিয়া, ভৈরবপাশা, প্রতাপ, ঢাপড়, সুতালড়ি, পেট্রোলপাম্প মোড় এলাকায়। অবস্থাটা এমন হয়েছে নিয়মনিতীর তোয়াক্কা না করে যার যেখানে ইচ্ছে হয়েছে সেখানেই সে স্পিড ব্র্রেকার বসিয়েছে। ঝালকাঠি-রাজাপুর সড়কে নৈকাঠি বাজার সংলগ্ন একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সামনে দুইটি স্পিড ব্রেকার বসানো হয়েছিলো । যেখানে রাতে এক অটোরিক্সা চালক উল্টে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। পরে ওই ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মামলার ভয়ে পরের দিনই স্পীড ব্রেকার তুলে নেয়।
অথচ বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশ্ববর্তী একমাত্র রাজাপুর উপজেলা হাসপাতালের সামনে নেই কোন স্পীড ব্রেকার। ফলে প্রতিনিয়ত চরম ঝুঁকি নিয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা ও হাসপাতালে আগতদের মহাসড়ক পারাপার হতে হচ্ছে।
স্থানীয় সচেতন মহল হাসপাতালের সামনের সড়কে জরুরী ভিত্তিতে র্যাম্বেল স্ট্রেট নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হুমায়ুন কবীর বলেন, সড়কে মসৃণ গতিতে যানবাহন চলাচল করবে এটাই মূলত সড়ক ও সেতু বিভাগের নীতি। সড়ক বিধিতে স্পিড ব্রেকার বলতে কিছু নেই। উন্নতদেশগুলোতেও একই নিয়ম বিদ্যমান। তারপরেও আমাদের দেশের বাস্তবতায় এটা পুরোপুরি পালন করা সম্ভব হয় না।
তিনি আরও বলেন, কিছু স্পিড ব্রেকার আমাদের দিতে হয়, কিন্তু যৌক্তিক প্রয়োজনীয়তার বাইরে চাঁপের মুখে বা আমাদের অজান্তে বেশিরভাগ স্পিড ব্রেকার বসানো হয়েছে।
ঝালকাঠির মহাসড়কে অসংখ্য স্পীড ব্রেকার
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী “এক্সপ্রেসওয়ে” যেমন- ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা সড়কে স্পিড ব্রেকার বা জেব্রা ক্রসিং দেওয়ার বিধান নেই। এছাড়া আন্তঃজেলা সড়ক কিংবা মহাসড়কগুলোতেও একেবারে জরুরি না হলে কোনো স্পিড ব্রেকার দেয়া যাবেনা। যদি দিতেই হয় সেক্সেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক সড়ক বিভাগকে চিঠি দিয়ে থাকেন। পরবর্তীতে যাচাই করে সেখানে স্পিড ব্রেকার বসানো হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি ঝালকাঠির ক্ষেত্রে এসব বিধিবিধানের কোনোটিই পালিত হচ্ছে না। এখানে যে যার মতো করে স্পিড ব্রেকার বসাচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কে যাতায়াতে এটা যে কতোটা ক্ষতিকর তা কেউ বিবেচনা করে দেখছেন না।
ঝালকাঠির মহাসড়কে অসংখ্য স্পীড ব্রেকার
ঝালকাঠি আন্তঃজেলা বাস ও মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, বরিশাল থেকে ঝালকাঠির দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার। এইটুকু সড়কে ২৭টি স্পিড ব্রেকার থাকায় যানবাহনের চালকরা গাড়ি চালাতে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এমনতিই আমাদের দেশের স্পিড ব্রেকারগুলো কোনো নিয়ম-কানুন মেনে তৈরি হয়না। কোথাও আবার উঁচু করে বানানো হয়েছে স্পিড ব্রেকার।