২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
shadhin kanto

পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সাথে শুধু সিন্ডিকেট জড়িত নয়

প্রতিনিধি :
স্বাধীন কন্ঠ
আপডেট :
মার্চ ৯, ২০২৪
54
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

স্টাফ রিপোর্টার : মূল্যবৃদ্ধি হলেই যে বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে বা বাজারে সিন্ডিকেটে রয়েছে সে ধারণা যথাযথ নয় বলে জানিয়েছেন দ্রব্যমূল্য, বাজার ব্যবস্থাপনা ও প্রতিযোগিতা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আলোচকরা।

শনিবার (৯ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের ডেইলি স্টার ভবনে এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এ বৈঠক সঞ্চালনা করেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব বাংলাদেশ আইপি ফোরাম প্রধান নির্বাহী মনজুরুর রহমান।

গোলটেবিল বৈঠকে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার অন ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিকের (সিআইআরডিএপি) পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. হেলালউদ্দিন।

তিনি তার বক্তব্যে বলেন, যেকোনো দেশেই মূল্যবৃদ্ধি হার ওপরের দিকে যাচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির এই দায় কাকে দেবেন। আমাদের দেশে যেভাবে মূল্যের স্তর বাড়ছে তার দায় পলিসির। অর্থনীতির ভাষায় আজকের বিদ্যমান দামে ব্যবসায়ীরা যেটুকু পণ্য বিক্রি করতে চায়, সেটাই হচ্ছে সাপ্লাই। কোনো একটি দেশ যদি বলে তারা কোনো একটি পণ্য রপ্তানি করবে না, তখন আমাদের দেশের ব্যবসায়ী যদি মনে করে সেই পণ্য সে বিক্রি করবে না, সব ব্যবসায়ী যদি বিক্রি বন্ধ করে দেয় বা কম করে তাহলে বাজারে সাপ্লাই কমে যাবে। বাইরে থেকে পণ্য আমদানির পর দাম কমবে, সেটার জন্য অপেক্ষার প্রয়োজন নেই, জোগান কম হওয়ার কারণে দাম বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, দাম নির্ভর করে উৎপাদন খরচ, আমদানি-রপ্তানির ওপর। দাম বাড়ে উৎপাদন খরচসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে গেলে। মূল্যবৃদ্ধি কোনো সমস্যা নয়, সমস্যা সেই অনুযায়ী মানুষের আয় বৃদ্ধি না হলে।

তিনি আরও বলেন, মজুদদারকে খুব খারাপ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু বাজার অর্থনীতির ভাষায় পণ্য মজুদ প্রতিযোগিতার বাজারে একটু ভালো উদাহরণ। তাহলে আমরা কেন পণ্য মজুদকে এত খারাপ বলছি। সেজন্য দেখতে হবে কেউ যোগসাজশ করে মূল্য নির্ধারণে কোন পলিসি করছে কি না।

বাংলাদেশ আইপি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ্ বলেন, দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি মানেই সিন্ডিকেট, এই সিন্ডিকেট শব্দটির আসলেই কি আইনে কোন স্থান আছে। বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর কোনো আইনেই সিন্ডিকেট কথাটির কোন অস্তিত্ব নেই। দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলেই আমরা বলি সিন্ডিকেট, সব জায়গায় কি সিন্ডিকেট থাকতে পারে, এটা কি সম্ভব?

তিনি বলেন, প্রতিযোগিতা কমিশনের আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয় না। এই আইনের যে মামলাগুলো স্ব-প্রণোদিত হয়ে করা হয়েছে। প্রতিটি যোগসাজশের মামলা হয়ে ব্যক্তির বিরুদ্ধে, আর একজনের বিরুদ্ধে যোগসাজশের মামলা করা যায় না। এখানে আইনের ব্যত্যয় হয়েছে।

বৈঠকে আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বাণিজ্য ও অর্থনীতি অনুষদের ডিন ড. এ কে এনামুল হক, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক মো. খালেদ আবু নাসের, সাবেক পরিচালক, লেখক ও গবেষক গওহার নঈম ওয়ারা প্রমুখ।

বৈঠকে আরও বলা হয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি বা হ্রাস মুক্তবাজার অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বিভিন্ন কারণে উঠা-নামা করতে পারে, যেমন মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে আবহাওয়া, অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি বা গরম অন্যতম। তবে মূল্যবৃদ্ধি হলেই যে বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে বা বাজারে সিন্ডিকেটে রয়েছে সে ধারণা যথাযথ নয়।

পণ্যের উৎপাদন ও বাজারে পণ্য সরবরাহের পর্যাপ্ততা রক্ষা ও দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখার ক্ষেত্রে বাজার নিয়ন্ত্রক রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর গুরুত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম। ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা নিশ্চিত করতে দ্রব্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখা যতটুকু গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটুকুই গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের গুণগতমান, বাজারে পণ্যের বিরামহীন সরবরাহ এবং পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করা।

বাজার নিয়ন্ত্রক বা সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর কাজ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা নয়, বরং এমনভাবে কাজ করা বা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাতে করে কোনো একটি নির্দিষ্ট বাজারে বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করতে, উৎপাদক চাহিদা যোগ্য পরিমাণে পণ্য উৎপাদনে, সরবরাহকারী পণ্য সরবরাহ করতে, এবং বিক্রেতা ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করতে উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত ও সচেষ্ট হয়। তবেই ভোক্তা ন্যায্যমূল্যে তার কাঙ্ক্ষিত পণ্য বা দ্রব্য কিনতে পারবে এবং সুরক্ষিত হবে ভোক্তার স্বার্থ।

দ্রব্যমূল্য ও বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিযোগিতা আইন ও প্রতিযোগিতা কমিশনের করণীয় সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি অত্যন্ত জরুরি। দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধির কারণ, বাজার ব্যবস্থাপনা, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় প্রতিযোগিতা আইনের ভূমিকা ও করণীয় সম্পর্কে গণসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে প্রতিযোগিতা কমিশন ও সংশ্লিষ্ট বাজার নিয়ন্ত্রক বা রেগুলেটরি সংস্থাগুলোকে অধিকতর শক্তিশালী ও ক্ষমতায়ন করার মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে বাজার সুরক্ষা, ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।

গরম খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram