ঝালকাঠির প্রত্যন্ত এলাকার খাল পুকুর ও ডোবার পানি দূষিত
এ রহমান, ঝালকাঠিঃ ঝালকাঠির জেলার প্রত্যন্ত এলাকার খাল, পুকুর ও ডোবার পানি দূষিত হয়েছে। একদিকে গাছের পাতা পড়ে পচে এবং অন্যদিকে মৃত জীব জন্তুর ভাগার হিসেবে খালে ফেলে দেয়ায়। এছাড়াও পারিবারিক বর্জ্যও খালে ফেলে দিচ্ছে খাল পাড়ের বাসিন্দারা।
স্বাভাবিকভাবে কেউ এ পানি ব্যবহার করতে পারছে না। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। পুর্ণিমার জোয়ারের পানি প্রবেশ করলেও পচা এবং দুর্গন্ধযুক্ত পানির পরিমাণ বেশি থাকায় স্বাভাবিক হচ্ছে না। দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে এখানের পরিবেশ। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশ সচেতনরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার সদর উপজেলা, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়া উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার সরকারী খালগুলো ভরাট করে সংকুচিত করেছে স্থানীয়রা। ভরাটের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে বাড়ি পরিস্কার করার পরে উচ্ছিষ্ট আবর্জনা। খালগুলোর নাব্যতা হারিয়ে সরু হয়ে গেছে একসময়ের ঐতিহ্যবাহী খালগুলো। সেই সরু খালে শুকনো মৌসূমে বিভিন্ন গাছের পাতা পড়ে পচে পানির রং কালো বর্ণ ধারণ করেছে।
আরও পড়ুন>>>শ্রীমঙ্গলের কিশোরী ধর্ষণকারী মৌলভীবাজার থেকে গ্রেফতার
অপর দিকে স্থানীয়রা মৃত সাপ, হাস, মুরগী, কুকুর, বিড়ালসহ জীবজন্তু খালে ফেলে দিচ্ছে। এতে করে যেমন পানি নষ্ট হচ্ছে, তেমন ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে গৃহস্থালির পানির ব্যবহার উন্মুক্ত খালের পানি থেকেই চাহিদা মেটানো হয়। সেই সাথে রান্নার কাজেও প্রবাহমান পানি থেকে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে সেই বহুবিধ পানির ব্যবহার উন্মুক্ত খালের পানি পুকুরে প্রবেশ করলেও ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় টিউবয়েলের পানি ব্যবহার করা হয়।
প্রতিটি বাড়িতে টিউবয়েল না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে নারীদের। অন্য বাড়ি থেকে পানি নিয়ে অথবা অন্যের বাড়িতে গিয়ে টিউবয়েলের পানিতে দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পন্ন করতে হচ্ছে। অনেক পরিবার রক্ষণশীল হওয়ায় তারা পানি তুলে ফুটিয়ে ফিটকারী দিয়ে পরিশোধন করে ব্যবহার করছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে ওইসব পরিবারগুলো।
সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত কালো ও দূষিত পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বাধ্য হয়ে লোকজন দুর্গন্ধময় ও দূষিত পানির সঙ্গে বসবাস করছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় অসংখ্য মানুষ মারাত্মক চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাও। কমে গেছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। খাল, পুকুর, জলাশয় ও ডোবাসহ মাছের অভয়াশ্রমের স্থান গুলো প্রায় মৎস্যশূন্য হয়ে পড়েছে। খাল ভরাটের চলমান প্রক্রিয়া বন্ধ না হলে ব্যাপক পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটবে।
জয়নাল হোসেন বলেন, পানি বিষাক্ত হওয়ায় এখন আর খালে গোসল করতে পারিনা, পারিনা ঘরের কাজে ব্যবহার করতেও। পানির দুর্গন্ধের জন্য এখন আর আগের মত ব্যবহার করা হয় না।
সজিব বলেন, আমাদেরকে দেখার মত কেউ নাই। দূষিত পানিতে আমাদের খাল-পুকুরের এমন অবস্থা হয়েছে। খালের পানি আমরা ব্যবহার করতাম, মাছ ধরতাম। এখন মাছ ধরা তো দূরে থাক, দুর্গন্ধে পানি স্পর্শ করাও দায় হয়ে উঠেছে।