৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
shadhin kanto

জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করলো পিআইও

প্রতিনিধি :
স্বাধীন কণ্ঠ
আপডেট :
জুলাই ৩, ২০২২
14
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করলো পিআইও
নলছিটির প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বিজন কান্তি খরাতি | ছবি : প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করলো পিআইও

এ রহমান, ঝালকাঠিঃ ঝালকাঠির নলছিটিতে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে নলছিটি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) বিজন কৃষ্ণ খরাতির বিরুদ্ধে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে 'জমি আছে ঘর নেই' নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে নলছিটি উপজেলায় ৩৪টি ঘর নির্মাণের অনুমোদন প্রদান করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্ধ ছিলো ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু পিআইও বিজন কৃষ্ণ বরাদ্দকৃত ৩৪টি ঘরের ৭টি ঘরের টাকাই আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও বাকি যে ঘরগুলো তৈরি করেছেন তাও খুব নিম্নমানের। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরী করায় তা এখন বসবাসের অনুপোযোগী বলে জানায় ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

আরও পড়ুন>>>বাগেরহাটের রামপালে আবাসন প্রকল্পের প্রায় ৭০ টি কক্ষ শূন্য

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের পাওতা গ্রামের পারুল, তৌকাঠি গ্রামের গোলাম হোসেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আকলিমা, বারাইকরন গ্রামের নজরুল ইসলাম মাঝি ও কাপরকাঠি গ্রামের আনোয়ার ফকিরের নামে ঘর বরাদ্দ হলেও আদৌ তারা কোন ঘর পাননি।

এছাড়াও মগড় ইউনিয়নের দক্ষিণ মগড় গ্রামের মৃত লিয়াকত আলি মাঝির স্ত্রী নাজমিন এবং দপদপিয়া ইউনিয়নের ভরতকাঠি গ্রামের শারমিন বেগমের নামে ঘর বরাদ্দ থাকলেও অসহায় এ পরিবারগুলো প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত। অথচ কাগজে এদের নাম দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প কর্মকর্তা বিজন কৃষ্ণ খরাতির বিরুদ্ধে।

কাপড়কাঠি গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী আনোয়ার ফকির বলেন, তার নামে যে ঘর বরাদ্দ হয়েছে তা তিনি জানেন না। ঘর পাওয়া তো দূরের কথা।

দক্ষিণ মগড় গ্রামের বাসিন্দা অসহায় নাজমিন আক্ষেপ করে বলেন, আমার স্বামী নেই, বাচ্চাদের নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাই। আমাকে একটি ঘর করে দিবে এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কিছু টাকাও দিয়েছি। কিন্তু আমারে ঘর দিলো না। শুধু কয়েক পিস টিন দিছে। তার ঝুপড়ি বেড়াবিহীন ঘরটি দেখিয়ে তিনি বলেন, তিন সন্তান নিয়ে এখানে বৃষ্টিতে ভিজে থাকি। আমার নামে ঘর আইলো আর আমি পেলাম শুধু কয়পিস টিন।

বারাইকরন গ্রামের বাসিন্দা মৃত. বীর মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম মাঝি বলেন, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার কোঠায় আমাদের একটি ঘর দেয়া হয়েছে। এই ঘর দেয়ার আগে আমার নামে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া 'জমি আছে ঘর নাই' প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ হয়েছে। কিন্তু আমাকে বরাদ্দকৃত ঘরটি দেয়া হয়নি। তাহলে আমার নামের ঘরটি গেল কোথায়?

ভরতকাঠি গ্রামের শারমিনের স্বামী শহিদ জানান, তাকে ঘর দেয়া হয়নি। প্রকল্প কর্মকর্তা তাকে বলেছে পরবর্তীতে ঘর আসলে তাকে ঘর দেয়া হবে। শহীদ আক্ষেক করে বলেন, ঘরের তালিকাতে আমার নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে, তাহলে আমার ঘরটি বা ঘরের টাকা কোথায় গেলো?

মগড় ইউনিয়নের খাওক্ষীর গ্রামের মেরি বেগম বলেন, অনেক দৌড় ও কষ্টের পরে গৃহহীনদের জন্য জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের তালিকাতে আমার নাম ওঠে। কিন্তু আমি ঘর পাচ্ছিলাম না। পরবর্তীতে ২ সাংবাদিকের তৎপরতায় কিছুদিন পূর্বে ঘরটি দিলেও তা একেবারেই বসবাসের অনুপযোগী। এজন্য ওই ঘরে এখনো উঠতে পারিনি। একবারে নিম্ন সামগ্রী দিয়ে ঘরটি তৈরি করা হয়েছে যা একবারে থাকার অনুপযোগী।

নিয়ম অনুযায়ী এগুলো দেখভালের দায়িত্ব নলছিটির প্রকল্প কর্মকর্তা বিজন কৃষ্ণ খরাতির। মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে তারপরে কাজের বিল দেয়ার নিয়ম থাকলেও তার ধার ধারেনা পিআইও বিজন কৃষ্ণ।
প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করলো পিআইও
এ বিষয়ে নলছিটি প্রকল্প কর্মকর্তা বিজন কৃষ্ণ খরাতি বলেন, সব ঘরের বিল পরিশোধ করা হয়নি। প্রতি ঘর বাবদ ৪০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে পরিদর্শন না করে, কাজ না দেখে কিভাবে ৪০ হাজার টাকা করে দিলেন সে প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছুই বলতে পারেননি।

বরাদ্দকৃত ঘরের বাকি টাকা কোথায় গেলো-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই টাকা ফেরত দেয়া হবে। তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোথায় ও কিভাবে টাকা ফেরত দিবেন-এ বিষয় জানতে চাইলে তিনি কলটি কেটে দেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুম্পা সিকদার জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তদন্ত করে এর সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করলো পিআইও
ঝালকাঠি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল হক বলেন, এ বিষয় আমার জানা ছিল না। এখন আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। অবশ্যই আমি তদন্ত করে দেখবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

গরম খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram