৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
shadhin kanto

ফরিদপুরে নির্বাচনে হেরে হরতাল-অবরোধ ও ধর্মঘটের হুমকি শামীম হকের

প্রতিনিধি :
স্বাধীন কন্ঠ
আপডেট :
জানুয়ারি ১১, ২০২৪
31
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

বিশেষ প্রতিনিধি : ফরিদপুর সদর আসনে নৌকার বিজয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে এর প্রতিবাদে হরতাল-অবরোধ ও ধর্মঘটের ডাক দেয়া হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ফরিদপুর আওয়ামী লীগের শামীম হক পন্থী নেতারা।

বুধবার দুপুরে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্যে এ হুশিয়ারি দেয়া হয়। শহরের থানা রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম ইশতিয়াক আরিফ বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন হয়নি। হয়েছে প্রশাসনের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন।’

তিনি বলেন, ‘প্রশাসন আমাদের ভালো রূপটা দেখেছে। আমাদের সরলতাকে উনারা দুর্বলতা ভেবেছে। এখন আমাদের উল্টা রূপটা উনাদের দেখাতে চাই। আমরা প্রয়োজনে রাজপথ দখল করবো। হাজার হাজার কর্মী নিয়ে ফরিদপুর অচল করে দিবো। একটা নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলে রাজপথে অবস্থান নেবো। আমাদের কোনো নেতাকর্মীর গায়ে যদি কেউ হাত দেয় আপনারা পাল্টা আঘাত করবেন। কোনো কথা নাই। আঘাতের পাল্টা আঘাত হবে। এই শহরে আমরা দেখতে চাই কারা অবস্থান করে। আপনারা যার যার অবস্থানে প্রস্তুত থাকুন। আপনাদের যদি ডাক দেয়া হয় তাহলে যেভাবে বলে সেভাবে অবস্থান করবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনে মিছিল করবো, অবরোধ ডাকবো, বাস-গাড়ির ধর্মঘট ডাকবো, প্রয়োজনে আমরা হরতাল দিবো। কিন্তু প্রশাসনের অন্যায় অত্যাচারের কাছে আমরা মাথা নিচু করবো না।’

এসএম ইশতিয়াক আরিফ আরো বলেন, ‘শামীম হককে গ্রেফতারের হুমকি দেয়া হয়েছে। শামীম হককে গ্রেফতারের আগে আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করতে হবে। তার আগে আমাকে গ্রেফতার করতে হবে। না-হলে শামীম হককে গ্রেফতারের ক্ষমতা ওই স্বতন্ত্র প্রার্থীতো দূরের কথা, প্রশাসনেরও নাই।’

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ করে আরিফ বলেন, ‘দুপুর ৩টার দিকে ডিসি সাহেব বললেন ২৭ পার্সেন্ট ভোট গ্রহণ হয়েছে। তাহলে বিকেল চারটার মধ্যে কিভাবে তা ৫১ পার্সেন্ট হলো? কবিরবাগ সেন্টারে ব্যালট ফুরায় গেলো। সভাপতি সাহেব ডিসি সাহেবকে ফোন করে ব্যালট চাইলেন। ৫ মিনিটের মধ্যে বিজিবি এসে ওই সেন্টার থেকে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীদের পিটিয়ে বের করে দিলেন। চাইলাম ব্যালট, পাঠালেন বিজিবি। এই হলো ওনার ভূমিকা। আমরা জেলা আওয়ামী লীগ মিটিং করে কর্মসূচি দিবো। এই প্রশাসনের আন্ডারে আমাদের আর চলা যাবে না। ৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে যেমন রাজনীতিবীদদের সাথে প্রশাসনের লোকেরাও ছিলো, আজকেও তেমনি নৌকাকে হত্যার পিছনে আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে প্রশাসনের লোকেরাও জড়িত। আমরা আর বসে বসে মার খেতে রাজি না। কেউ যদি মার দিতে আসে তাকে পাল্টা জবাব দিয়ে দিবেন। এটি আমার নির্দেশ।’

সভাপতির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক বলেন, ‘ফরিদপুরে যা হয়েছে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে কি হয়েছে তা সবই দৃশ্যমান। এর মাধ্যমে সরকারকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।’

তিনি জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে বলেন, ‘এতো নগ্ন? আই অ্যাম সরি। আপনি বিগ মিসটেক করেছেন। আপনি একেবারেই নগ্নভাবে আওয়ামী লীগ সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। আমরা এর প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনারের নিকট দিবো।’

সভায় আরো বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শ্যামল ব্যানার্জী, কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামচুল হক চৌধুরী, মাসুদুল হক, আলী আশরাফ পিয়ার প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ফরিদপুর-৩ তথা ফরিদপুর সদর আসনে শত হামলা, মামলা, হুমকি, মার-ধর উপেক্ষা করে ফরিদপুরের ৫২% ভোটার গত ৭ জানুয়ারি তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এবং নৌকার প্রার্থী শামীম হককে প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজয় করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ঈগল প্রতীকের এ কে আজাদ।

ভোটের আগের দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট- ফরিদপুরের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা, ফরিদপুর উপজেলা পরিষদ ও ফরিদপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টার (৭৮) কে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয় শামীম হকের অনুসারীরা।

ভোটের দিন সকালে রনকাইল হাই স্কুল কেন্দ্রের পাশে মাঝিপাড়ার হিন্দুদের মারপিট করে ১৮ জনকে গুজরত আহত করে নৌকার সমর্থকেরা।
তাছাড়া, ভোটের দিন (৭ জানুয়ারি) নৌকার প্রার্থী শামীম হকের বিরুদ্ধে একাধিক স্থানে স্বশরীরে ভোট ডাকাতির অভিযোগ উঠে এবং প্রমাণিত হয়। ফরিদপুর সদরের খলিলপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী শামীম হকের ডাকাতি করা ভোট বাতিলও করেন ফরিদপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা। বাতিলকৃত ভোট সংখ্যা ২৫১। উক্ত কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী শামীম হক নিজে কেন্দ্র দখল করেন এবং তাঁর সাথে থাকা অনুসারীরা ভোট কাটেন।

পরাজিত প্রার্থী শামীম হকের হুমকি ধামকি, পুলিশ, নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শামীম হকের সম্প্রতি বক্তব্যের প্রতিবাদে, গত ৯ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ও ফরিদপুরের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বিপুল ঘোষ ফরিদপুরের মানুষের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় শামীম হককে গ্রেফতারের দাবি জানান।

গরম খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram