বিএসএফের এক গুলিতেই তছনছ রইসের পরিবার
ডেস্ক রিপোর্টঃ বেনাপোলের ধান্যখোলা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বিজিবি সদস্য রইস উদ্দিনের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। দুই বছরের শিশু রাইসা ও চার মাসের হাসান আলীকে নিয়ে মরদেহের অপেক্ষায় নির্বাক স্ত্রী নাসরিন খাতুন। শিশু সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও দিশেহারা তিনি। পাশে বসে অঝোরে কাঁদছেন রইস উদ্দিনের মা রহিমা বেগম।
আট বছর আগে স্বামী বিজিবিতে চাকরি পাওয়ার পর এলাকার জন্য অনেক কিছু করলেও নিজের নেই কোনো বাড়ি বা সঞ্চয়। এ নিয়ে দিশেহারা স্ত্রী নাসরিন। সাংবাদিকদের দেখে শুধু আধো আধো কণ্ঠে একটাই প্রশ্ন করেন, এখন তাদের কী হবে? কোথায় থাকবেন? আর দুই শিশুকে নিয়ে কোথায় যাবেন, কিভাবে মানুষ করবেন?
ছেলের বউয়ের পাশে বসে নাতনিকে কোলে নিয়ে মা রহিমা বেগমও অঝোরে কাঁদছেন আর বলছেন, কেন তার ছোট সন্তানকে পাখির মত গুলি করা হলো? সীমান্ত রক্ষা করতে গিয়েই কি অন্যায় করছে তার সন্তান? এ সময় ছোট্ট শিশু রাইশা ফ্যাল ফ্যাল করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আর চার মাস বয়সী হাসান তখনো মায়ের কোলে ঘুমাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত রইস উদ্দিনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত এলাকা সাহাপাড়ার শ্যামপুর গ্রামে। কৃষক কামরুজ্জামানের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ছোট ছিলেন রইস। তার বড় ভাই সেনাবাহিনীতে এবং মেজ ভাই বিজিবিতে কর্মরত।
রইস উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি শ্যামপুরে টিনের একচালা একটি ঘর ও রান্নাঘর তালাবদ্ধ। বাড়ির প্রধান ফটকটিতে নেই কোনো দরজা। চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে দুই শিশুকে নিয়ে স্ত্রী নাসরিন রইসের বড় ভাইয়ের বাড়িতে উঠেছেন। বিএসএফের গুলিতে স্বামী মারা যাওয়ার পর এ বাড়িতেই গ্রামবাসী একনজর তাকে দেখতে ভিড় করছেন। অনেকে আসছেন খোঁজ নিতে, মরদেহ এসেছে কি না। আবার অনেকে আসছেন নিহতের স্বজনদের সান্ত্বনা দিতে। আবার কেউবা আসছেন পরিবারটির খোঁজখবর নিতে।
রইস উদ্দিনের বাবা কামরুজ্জামান বলেন, তিন ছেলের মধ্যে সবার ছোট রইসউদ্দিন ছিলেন পরোপকারী। ছেলের বিয়ে দেওয়ার পর তার দুই সন্তান নিয়ে সুখেই কাটছিল তাদের পরিবার। কিন্তু বিএসএফের এক গুলিতেই সব তছনছ হয়ে গেল। এ সময় তিনি তার নাতি-নাতনিকে যেন যোগ্য সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন এজন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
রইস উদ্দিনের বন্ধু আ. মমিন বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই রইস বিপদগ্রস্তদের পাশে সব সময় দাঁড়িয়েছেন। আট বছর চাকরি করার পরও তার নেই কোনো সঞ্চয় বা একটি আশ্রয়স্থল। গ্রামের সবার বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়লেও এখন তার পরিবারটি অসহায়।
স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম হোসেন দাবি করেন, গতবার গ্রামে এসে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ২০ হাজার টাকা অনুদান দেন। পরে কয়েকটি জানালা বানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। তারমত একজন সমাজসেবক ও ভালো মানুষকে তারা হারালেন।
তিনি বলেন, আমাদের দাবি সরকার এ অসহায় পরিবারটির পাশে যেন দাঁড়ায়। সেই সঙ্গে পরিবারটির জন্য যেন একটি আশ্রয়স্থলের ব্যবস্থা করা হয়।
স্থানীয় মহিলা ওয়ার্ড সদস্য শাহনাজ পারভিন লিলি বলেন, দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে তার এলাকার একজন শহীদ হয়েছেন। তাই সরকার যেন শহীদ ওই বিজিবি সদস্যের পরিবারের দায়িত্ব নেয়।
ভারতের সুটিয়া ও বাংলাদেশের ধান্যখোলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) ভোরে চোরাকারবারিরা গরু নিয়ে আসছিল। বিষয়টি টের পেয়ে বিএসএফ চোরাকারবারিদের ধাওয়া করে। এসময় বিজিবি সদস্যরা বিষয়টি নজরদারি করার সময় চোরাকারবারিদের ধরতে গেলে সিপাহি রইস উদ্দিন দলছুট হয়ে সীমান্তে চলে যান, তখন বিএসএফ সদস্যদের গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে বিএসএফ সদস্যরা ভারতের বনগাঁ হাসপাতালে তাকে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন দুপুর ২টার দিকে মারা যান রইস।