ঝালকাঠিতে বিচারের দাবীতে মৃতদেহ নিয়ে স্বজনদের আহাজারি
এ রহমান, ঝালকাঠিঃ হত্যা মামলা গ্রহণ ও হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে মৃতদেহ নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে, প্রেসক্লাব চত্ত্বরে এবং থানার সামনে আহাজারি করেছে স্বজনরা। পরে সদর থানার ওসি মো. খলিলুর রহমান মৃতদেহের স্বজনদের আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে তারা দাফনের জন্য নিয়ে যান।
বুধবার (১৭ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে ঝালকাঠি শহরের বিভিন্ন অফিসের দ্বারে দ্বারে ঘুরে স্বজনরা।
মৃতব্যক্তি ঝালকাঠি শহরের নতুন কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা খোকন বিশ্বাসের স্ত্রী তাসলিমা বেগম।
আরও পড়ুন>>>নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তবারক নিয়ে মারামারি ঘটনায় আহত-৫
খোকন বিশ্বাস জানান, সোমবার বিকেলে তাসলিমার বুকে ব্যাথা অনুভব হলে স্থানীয় ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে দেখালে বাসায় গিয়ে ওষুধ সেবন করে। রাতে কিছুটা সুস্থ্য থাকলেও মঙ্গলবার সকালে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে তার চিকিৎসা চলতে থাকে। সন্ধ্যার দিকে শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরই বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে প্রেরণ করেন। বুধবার সকাল ১০টার দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
অভিযোগ করে তিনি জানান, গত ১৫ এপ্রিল বিকেল ৩ টায় প্রতিবেশীর নির্মাণাধীন সীমানায় পানি ছিটকে পড়লে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সাইফুল, শামীম, নুরজামাল, এলিন, রেশমা পরিকল্পিতভাবে মা নেহারা বেগমকে মারধর করে মাটিতে ফেলে দেয়। পুত্র রাকিব আসলে তাকেও মারধর করে। প্রতিবন্ধী ভাই রিপন বিশ্বাস ঘটনাস্থলে আসলে তাকেও কুপিয়ে জখম করে। বোন শিরিন বেগমকে মারধর করে আহত করে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা চালায়। তখন আমার স্ত্রী তাছলিমা তাদের কাছে আসলে তাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে মাটিতে ফেলে দেয়। আমি বাহির থেকে আসলে আমাকে আক্রমণ করে মারধর করে বাহু, পিঠে ও পায়ে জখম করে। এমন নৃশংস মারামারি দেখে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় সদর থানায় মামলা (নং-২০, তাং-২৩-০৪-২২ইং) দায়ের করা হলেও আসামীরা জামিন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের হুমকি অব্যাহত রাখে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে খোকন বিশ্বাস জানান, সেই সময়ে আমার স্ত্রীর বুকের উপরে উঠে আসামীরা যেভাবে আঘাত করেছে তখন থেকেই বুকে ব্যাথা শুরু হয়। ধীরে ধীরে তার শারিরীক ক্ষমতা কমতে থাকে এবং অসুস্থতা বাড়তে থাকে। ওই আঘাতের কারণেই আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। হত্যাকারীদের নামে মামলা গ্রহণ ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবীও জানান তিনি।
থানার সামনে আহাজারি করে তার মেয়ে সুমী জানান, আমরা গরীব মানুষ। কারো কাছে কোন টাকা পয়সা চাই না। আমরা আমার মায়ের হত্যা বিচার চাই।
বিচারের দাবীতে মৃতদেহ নিয়ে আহাজারি
বরিশাল শেরই বাংলা হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট ০৪ এর সহকারী রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত ১৯৭৩১/৪১৪ নং স্মারকে মৃত্যুর প্রমাণপত্রে উল্লেখ করা হয় তাসলিমা বেগম (৩৫) মঙ্গলবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে ভর্তি হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকাল ১০টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যু কারণ হিসেবে অস্বাভাবিক উল্লেখ করা হয়।
বিচারের দাবীতে মৃতদেহ নিয়ে আহাজারি
ঝালকাঠি সদর থানার ওসি মো. খলিলুর রহমান জানান, ৪মাস আগের মারামারির ঘটনায় এখন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মারা গেছেন। তারপরেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এবং সেখানে মৃত্যুর কারণও উল্লেখ করা হয়েছে । অভিযোগ দিতে বলেছি, তারা অভিযোগ দিলে এবং হাসপাতালের ডাক্তারের সাথে কথা বলে পরবর্তি আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। ক্ষোভে ফেটে পড়া স্বজনদের শান্তনা দিয়ে মৃতদেহ দাফনের অনুরোধ করলে তারা নিয়ে যান এবং দাফনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।