২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
shadhin kanto

ঝালকাঠিতে মায়ের অপারেশনই মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলো রাতুল

প্রতিনিধি :
স্বাধীন কণ্ঠ
আপডেট :
এপ্রিল ১০, ২০২২
16
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
রাতুল নিজেই পড়াশুনায় সচেতন ছিলো
ঝালকাঠি সরকারী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ইউনুচ আলী সিদ্দিকী মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগপ্রাপ্ত মো. রাতুল হাসানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। | ছবি : রাতুল নিজেই পড়াশুনায় সচেতন ছিলো

এ রহমান, ঝালকাঠিঃ মা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তখন এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে কেবল উত্তীর্ণ রাতুল। গতবছরের শুরুর দিকে অপারেশনও সম্পন্ন হয়। তখন অনেক টাকা-পয়সা ব্যয় হয় মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম শিক্ষক পিতার। তখন মানবিকতার কথা চিন্তা করে মায়ের অপারেশনের সময়ই মনে মনে দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে চিকিৎসক হয়ে সেবা করার। যেই কথা সেই চেষ্টা শুরু।

এসএসসিতে যখন জিপিএ ৫, তখন এইচএসসিতেও জিপিএ ৫ পেতে হবে। তাহলে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ হতে পারে। তখন থেকেই মনে মনে পরিকল্পনা অনুযায়ী দৃঢ় মনোবল নিয়ে পড়াশুনা করতে শুরু করে রাতুল হাসান। কিন্তু কাউকেউ বুঝতে দেয়নি রাতুলের চিকিৎসক হবার ইচ্ছা। এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়ার পর তার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেন পরিবারের কাছে।

আরও পড়ুন>>>জাতীয় পরিচয়পত্র লাগবে লঞ্চের টিকিট কিনতে

সম্প্রতি ঘোষিত মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ফরদিপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। মায়ের অনুপ্রেরণা, বাবার পরিচালনা এবং শিক্ষকদের নির্দেশনাই সাফল্যের সিড়ি পেয়েছেন বলে এ প্রতিবেদকের কাছে অভিমত ব্যক্ত করেন রাতুল।

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় রাতুলকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সরকারী কলেজ কর্তৃপক্ষ। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সরকারী কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে কৃতি শিক্ষার্থী হিসেবে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ইউনুচ আলী সিদ্দিকী, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর শুকদেব বাড়ৈ, শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক ও সহযোগী অধ্যাপক (ইংরেজি) মো. ইলিয়াছ বেপারী, সহকারী অধ্যাপক সাইদুর রহমান, মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগপ্রাপ্ত মো. রাতুল হাসানের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানাগেছে, সদর উপজেলার আজহারিয়া দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক মো. নাসির উদ্দিন ও গৃহিনী মোসা. ফেরদৌসী ইয়াসমিন দম্পতির এক কন্যা ও একপুত্র সন্তানের মধ্যে রাতুল কনিষ্ঠ। সদর উপজেলার কির্ত্তিপাশা ইউনিয়নের রমনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা তারা।

২০০৪ সালের ১৯ মার্চ রাতুলের জন্ম হয়। ২০১০ সাল থেকে বাবার হাত ধরেই মাদ্রাসায় শিক্ষাগ্রহণের যাতায়াত শুরু। ২০১৪ সালে ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৮৩, ২০১৭ সালে জেডিসি পরীক্ষায় ৪.৮৫, জেডিসি পাশ করে চামটা বিকে ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে ২০১৯ সালে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। সরকারী কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়।

ইতিমধ্যে রাতুলের মা দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হন। প্রয়োজন হয় অপারেশনের। মধ্যবিত্ত পরিবারের একমাত্র শিক্ষক বাবার উপার্জন দিয়ে দেখেছি কতটা কষ্ট হয়েছে মাকে সুস্থ্য করতে। তখন থেকেই মনের মধ্যে লক্ষ্যনির্ধারণ করে পড়াশুনার গতি এগিয়ে নিতে থাকে। সরকারী কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। সরকারী কলেজের শিক্ষকমন্ডলীর দক্ষ নির্দেশনা, মায়ের অনুপ্রেরণা ও বাবার পরিচালনার সমন্বয়ে এইচএসসি উত্তীর্ণের পরে নিরলস প্রচেষ্টায় সাফল্যের সিঁড়িতে পৌছতে সক্ষম হয়েছি। সবার দোয়া পেলে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছে মানবিক চিকিৎসক হবার আশা প্রকাশ করে রাতুল।
রাতুল নিজেই পড়াশুনায় সচেতন ছিলো
রাতুল আরো জানায়, শিক্ষক বাবার পরিচালনায় মধ্যবিত্ত সংসারের সদস্য হওয়ায় জীবনে কখনোই বড় ধরনের কোন শখ পুরণ করতে পারিনি। তবে মৌলিক চাহিদাগুলো বাবা কখনোই অপুরণ রাখেনি। পড়াশুনার পাশাপাশি বিকেলের অবসর সময়ে সুযোগ পেলেই ক্রিকেট খেলতে মাঠে দৌড়াতো রাতুল। আর পড়াশুনার জন্য কাগজে-কলমে কোন রুটিন না থাকলেও প্রয়োজনানুযায়ী কখন বই পড়তে হবে সেই চিন্তা ছিলো তার মেধা-মননে। এভাবে সে নিজেকে পাঠ্যাভ্যাসে গড়ে তোলেন তবে পড়াশুনার ব্যাপারে পরিবার থেকে তেমন চাপ দিতে হয়নি কারণ রাতুল নিজেই পড়াশুনায় সচেতন ছিলো।

ঝালকাঠি সরকারী কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী জানান, রাতুল আমাদের কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নিয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে। তার পড়াশুনার আগ্রহ অন্য ছাত্রদের চেয়ে তুলনামূলক ভালো ছিলো। আমাদের কৃতি ছাত্র হিসেবে মেডিকেলেও ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। আমরা রাতুলের সার্বিক মঙ্গল কামনা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

গরম খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram