৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
shadhin kanto

হিট এ্যালাটের প্রথম দিনেই সারাদেশে যশোর হিট

প্রতিনিধি :
স্বাধীন কন্ঠ
আপডেট :
এপ্রিল ২০, ২০২৪
33
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
| ছবি : 

ডেস্ক রিপোর্টঃ সারাদেশে তিন দিনের হিট এ্যালাটের প্রথম দিন শনিবার(২০ এপ্রিল) সারাদেশের তাপমাত্রায় যশোর জেলা তাপমাত্রা ছিলো সর্বউচ্চ। বেশ কয়েকদিনের লাগাতর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এদিন ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়ে। সকাল ১০ টার পর থেকে ক্রমাগত ব্যারোমিটারের পারদ স্তর উপরে উঠতে থাকে। বিকেল ৩ টা নাগাত তা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে সর্বউচ্চ তাপমাত্রার জেলায় পরিণত হয়। প্রচন্ড তাপমাত্রায় বাতাসের আদ্রতা কমে ২৫ শতাংশে নেমে আসে। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন যশোর বিমানবন্দর মতিউর রহমান ঘাঁটিস্থ আবহাওয়া অফিস। যা চলতি মৌসুমের রেকর্ড সংখ্যক তাপমাত্রা।
এদিকে প্রচন্ড তাপমাত্রায় যশোরের জন জীবন নাগাল হয়ে পড়েছে। গরমে একটু স্বস্তির জন্য মানুষ ঝাঁক বেঁধে বেঁধে গাছের ছায়ায় বসছেন। কিশোর -কিশোরী থেকে শুরু করে বয়স্ক ব্যক্তিরাও গলা সমান পানি নেমে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। চরম বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা। নুন আনতে যাদের পান্তা ফুরায় এই গরমে তাদের ঘরে বসে থাকার মত অবস্থা নেয়। বাধ্য হয়ে রিকসা, ভ্যান, ইজিবাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হচ্ছে উত্তপ্ত রাস্তায়। ভোর বেলা থেকে কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পরা দিন মজুর মানুষেরা একবেলা কামলা খেটে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন। সরকারি বেসরকারি চাকুরিজীবীদেরও নিজ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা হওয়ার মত।

প্রচন্ড গরমে একটু মানসিক শান্তি পেতে অনেকেই পানি জাতীয় খাবার যেমন তরমুচ আনারস, ভাঙ্গি, পেঁপে, পেঁয়ারা, কলা কিনে খাচ্ছেন। রাস্তার পাশে গড়ে উঠা ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকানে উপড়ে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। ঘর থেকে কাজের প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ ঠান্ডা লেবুর শরবত, আঁখের রস পান করে সাময়িক সময়ের জন্য গরম নিবারণ করাসহ শরীরের পানি শূন্যতা পূরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফার্মেসিসহ দোকানে দোকানে বেড়েছে স্যালাইন ও ঠান্ডা বিক্রির হিড়িক।

প্রচন্ড তাপদাহে যশোর জেলা প্রশাসনসহ স্বাস্থ্য বিভাগ সর্বসাধারণকে সতর্ক করছেন। তারা মাইকিং ও প্রচারপত্রের মাধ্যমে  প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া, ঢিলে ঢালা সুতি পোষাক পরা, পর্যাপ্ত পানি পান করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের শরবত এগিয়ে চলা, এসি বা ইয়ারকুলার ব্যবহারে সতর্ক হওয়া, বয়স্ক ও শিশুদের বিশেষ যত্ন নেওয়াসহ বেশি অসুস্থতাবোধ করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জোর তাগিদ দিচ্ছেন।

এদিকে প্রচন্ড গরমে কারণে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। শনিবার দুপুরে হিট স্ট্রোক জনিত কারণে ঝিকরগাছার সীমা খাতুন নামে এক নারী যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন।  হিট স্ট্রোক থেকে রেহায় পেতে উচ্চ রক্তচাপ থাকা মানুষদের রৌদ্রতাপ, ধুমপান, অ্যালকোহল সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

অন্যদিকে ধারাবাহিক তাপপ্রবাহের কারণে যশোরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগ্রহণ করতে পারছে না। সারাদেশে ৭দিনের পাঠদান কার্যক্রম স্থগিত করায় অভিভাবদের উৎকন্ঠা দূর হয়েছে। প্রচন্ড তাপে বয়স্ক ও শিশুরা ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যদিও এর মাত্রা অত্যাধিক না। তারপরও সকলকে সতর্ক থাকতে স্বাস্থ্য বিভাগ আহবান করছেন।

ধারাবাহিক তাপপ্রবাহে যশোরের অধিকাংশ টিউবওয়েলের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। অকেজ্য হয়ে পড়ে আছে হাজার হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ। কৃষকদের কৃষি কাজে পানির ব্যবহারে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে। সড়কের বিটুমিন গলে পথচারিদের চলাচলের ভোগান্তি বাড়ছে। এদিকে পৌরসভাসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে মশার উপদ্রব্য বাড়ছে। সব মিলিয়ে প্রচন্ড গরমে বিষিয়ে উঠেছে এজেলার জনজীবন।

আতিয়ার রহমান নামে এক রিকসা চালক বলেন, প্রচন্ড গরম। তারপরও পরিবারের চাহিদা মেটাতে গরমের মধ্যে রিকসা নিয়ে বের হতে হয়েছে। সকাল বেলা ও বিকেলে তাপ একটু কম থাকে। তখন যাত্রী পাওয়া যায়। গরমের ভিতরে খুব কম যাত্রী আসছে।

বায়জিদ হোসেন নামে ভ্রাম্যমান দোকানে লেবুর শরবত বিক্রি করা দোকানি বলেন, গরম ভালোই পড়ছে। গরমে শরবত বিক্রি বেড়েছে। লেবুর শরবত ১০ থেকে ২০ টাকা প্রতি গ্লাস বিক্রি করছি।

ইউসুফ নামে একজন পথচারী বলেন, চৌগাছা থেকে জরুরী কাজে শহরে এসেছি। গরমে শরীরের পানি শূন্যতা পূরণ করতে আখের রস খাচ্ছি। কাজের ফাঁকে কালেক্টরেট অফিসের সামনে গাছের ছায়ায় বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক সোলজার রহমান বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণ দায়ী। যশোর অঞ্চলে অবাধে বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে। রাস্তা সম্প্রসারণের নামে সম্প্রতি ৮শ হেক্টর বনভূমি অবাধে বিনষ্ট করা হয়েছে। এসি বা ইয়ারকুলারের ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। যার প্রভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে। অপরিকল্পিত নগরায়নও তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই ধারা থেকে মুক্তি পেতে বেশি বেশি বৃক্ষরোপন করতে হবে। জমিতে জৈব সারের ব্যবহার বাঁড়াতে হবে।

গরম খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram