২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
shadhin kanto

সিলেটে ফের থেমে গেছে ১৪৬ বছরের পুরনো ঘড়ির কাঁটা

প্রতিনিধি :
স্বাধীন কণ্ঠ
আপডেট :
নভেম্বর ২৫, ২০২০
12
বার খবরটি পড়া হয়েছে
শেয়ার :
১৪৬ বছরের পুরনো ঘড়ির কাঁটা
| ছবি : ১৪৬ বছরের পুরনো ঘড়ির কাঁটা

ইবাদুর রহমান জাকির: সিলেটের নাম উঠলেই যে ক’টি স্থাপনার চিত্র চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার মধ্যে অন্যতম আলী আমজদের ঘড়ি। সুরমা নদীর উপরের লোহার সেতু ‘কিন ব্রিজ’ আর তার পাশে ‘আলী আমজদের ঘড়ি’- এই ছবি তো সিলেটেরই প্রতীক হয়ে ওঠেছে। তবে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এই ঘড়িটি বিকল হয়ে পড়েছে কিছুদিন ধরে। আটকে আছে ১৪৬ বছরের পুরনো এই ঘড়ির কাঁটা।

আলী আমজদের ঘড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। সিসিকের কর্মকর্তারা বলছেন- নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাঝেমাঝেই বিকল হয়ে পড়ে এই ঘড়ি। এরআগে প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পর গত বছর ঘড়িটি চালু করা হয়েছিলো। তার আগে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বড় ধরণের সংস্কার কাজ শেষে ২০১৬ সালে ঘড়িটি চালু করেছিলো সিসিক।

সিলেট নগরীর চাঁদনীঘাট এলাকার আলী আমজদের ঘড়ি ঘরের পাশে গিয়ে দেখা যায়, ৮টা ২০ মিনিটে আটকে আছে ঘড়ির কাঁটা। এরপর সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আবার গিয়ে দেখা যায়, একই জায়গায় আটকে রয়েছে কাঁটা। এই ঘড়ি এক ঘণ্টা পর পর ঘণ্টা বাজিয়ে নগরবাসীকে সময় জানান দিতো। অচল হয়ে পড়ার পর থেকে ঘণ্টাও আর বাজছে না। ঘড়িটির সামনেই এবড়ো-থেবড়োভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন গাড়ি। ফলে এই এলাকার সৌন্দর্যহানিও ঘটছে।

চাঁদনীঘাট এলাকার কয়েকজন ক্ষুদে ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, সপ্তাহখানেক আগেও সচল ছিলো এই ঘড়ি। এক সপ্তাহ ধরে এটি বিকল হয়ে পড়েছে। তবে নতুন করে ঘড়িটি বিকল হওয়ার তথ্য জানা নেই সিটি করপোরেশনের।

জানা যায়- ১৮৭৪ সালে তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থব্রুক সিলেট সফরে এসেছিলেন। তার প্রতি প্রদ্ধা জানাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান নগরের প্রবেশমুখ চাঁদনীঘাট এলাকায় ঘড়িটি নির্মাণ করেন। তিনি ঘড়ির নামকরণ করেন নিজের ছেলে আলী আমজদ খানের নামে। সেই থেকে এটি আলী আমজদের ঘড়ি নামে পরিচিত।

গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, ভারতের দিল্লির চাঁদনী চক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নবাব ঘড়িটি স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাদের মতে, সেইসময় সিলেটে ঘড়ির প্রচলন তেমন ছিলো না। ফলে এই ঘড়ি থেকেই সময় জানতে পারতো শহরের বেশিরভাগ মানুষ। সেই সময়ের ছোট্ট ও কোলাহলহীন শহরের দূরদূরান্ত থেকেও ঘড়ির ঘণ্টা শোনা যেতো। সময়ের পরিক্রমায় এই ঘড়ি হয়ে ওঠেছে ঐতিহ্যের অংশ।

দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরাও বিশাল এই ঘড়িটি দেখতে আসেন। এর নান্দনিক স্থাপনা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে- আলী আমজদের ঘড়ির দৈর্ঘ্য ৯ ফুট ৮ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি। নিচ থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ১৩ ফুট, ছাদ থেকে ঘড়ি অংশের উচ্চতা ৭ ফুট, ঘড়ির ওপরের অংশের উচ্চতা ৬ ফুট। মোট উচ্চতা ২৬ ফুট। ঘড়িটির ডায়ামিটার আড়াই ফুট এবং ঘড়ির কাঁটা দুই ফুট লম্বা। লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির এই ঘড়ি।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনারা ঘড়িটি বিধ্বস্ত করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের পরে কিছুসংখ্যক প্রবাসী, আরও পরে তৎকালীন সিলেট পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এটি সচল করতে উদ্যোগী হয়। তবে এরপর থেকে বারবার অচল হয়ে পড়ছে ঘড়িটি।

সংশ্লিষ্টরা জানান- আগে ঘড়িঘরের ফাঁকফোকর দিয়ে পাখি প্রবেশ করে অপারেশনাল ডিভাইস নষ্ট করে ফেলত। এ কারণেই ঠিক করার কিছুদিন পর পর ঘড়িটি বিকল হয়ে পড়ত। তবে ২০১৬ সালে পাখি প্রবেশের পথ বন্ধ করে নতুন ভাবে সংস্কার করা হয়। তবে এরপরও নিরবচ্ছিন্নভাবে চালু রাখা যাচ্ছে না ঐতিহ্যের এই স্মারকটি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন- ঘড়িটি আবার বিকল হয়ে পড়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবো। তিনি বলেন- নানা কারণে এটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ সম্ভব হয় না। একারণে বিকল হয়ে পড়তে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

গরম খবর
menu-circlecross-circle linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram